—প্রতীকী চিত্র।
প্রায় তিরিশ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে এক সময়ে দিল্লির ঠিকানা বদলে মহিলা সরে পড়েছিলেন তাঁর বাপের বাড়ি, চুঁচুড়ায়।
খোঁজ করে সে ঠিকানার সন্ধান পান পাওনাদার, চাপ বাড়তে থাকায় এক দিন তলব করা হয়েছিল তাঁকে— আসুন কলকাতা বিমানবন্দরে, সমস্ত পাওনাগন্ডা মিটিয়ে দেওয়া হবে ।
তবে, টাকা ফেরানো নয়, নদিয়ার হাঁসখালি এলাকায় ডেকে নিয়ে গিয়ে সুপারি লাগিয়ে খুন করা হয়েছিল জগবীর সিংহকে। প্রায় আড়াই মাস আগের সেই ঘটনার তদন্ত শুরু করে সম্প্রতি সে ঘটনার কুয়াশা কাটিয়েছে পুলিশ। সোমা মজুমদার ও তার ভাই উৎপল বেরাকে বৃহস্পতিবার হুগলির চুঁচুড়া থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রানাঘাট মহকুমা আদালতে তাদের হাজির করা হলে বিচারক তাদের দশ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। জেলার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, “টাকার টোপ দিয়ে ডেকে এনে খুন করা হয় ওই ব্যক্তিকে।”
গত ১৫ মে সকালে, হাঁসখালির হলদিপাড়া আর গয়েশগ্রামের মাঝে মাঠের ধারে পড়েছিল এক মাঝবয়সীর শ্বাসনালি কাটা দেহ। পুলিশ অজ্ঞাত পরিচয় ব্যাক্তির খুনের মামলা রুজু করে। তদন্ত তেমন এগোয়নি। মাস দেড়েক পরে জানা গিয়েছিল নিহতের পরিচয়, জগবীর সিংহ, সাকিন দিল্লির নফরগড়। হাঁসখালি থানা জানাচ্ছে, পরিচয় জানার পরে, জগবীরের ছবি ন্যাশানাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর নিজস্ব ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছিল। আর, সেই সূত্র ধরেই জটিল সুতোর জট কেটে গিয়েছে সম্প্রতি। জানা যায়, বেশ কিছু দিন ধরে নিখোঁজ জগবীরের খোঁজে ইতিমধ্যেই দিল্লি পুলিশের কাছে নিখোঁজ ডায়েরি করেছে তার পরিবার। ছবির সূত্র ধরে বাড়ির লোক জগবীরকে শনাক্তও করেছে, কিছু দিন আগে হাঁসখালি থানায় এসে তাঁরা একটি খুনের মামলাও রুজু করে যায়। এরপরেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, জমি বেচা-কেনার কারবারি জগবীরের সঙ্গে ব্যবসায় হাত মিলিয়েছিল সোমা। তার স্বামী দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের পদস্থ কর্তা। সেই সূত্রে চেনা-জানার সুযোগ কাজে লাগাতেই সোমাকে ‘পার্টনার’ করেছিলেন জগবীর। কিন্তু মাঝপথেই ব্যবসার বহু টাকা হাতিয়ে বাপের বাড়িতে গা ঢাকা দিয়েছিল ওই মহিলা। বিস্তর খোঁজাখুঁজির পরে যোগাযেগ করতে পারায় সোমা জগবীরকে জানিয়ে ছিল— কলকাতায় আসুন। সেই মতো, ১৪ মে ওই মহিলার কাছ থেকে টাকা আদায় করতে কলকাতায় নামেন জগবীর। বিমানবন্দর থেকে দিল্লিতে ফোন করে স্ত্রীকে জানানও সে কথা। তার পরে তাঁর কোনও খোঁজ মেলেনি। মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন থেকে জানা যায় জগবীর শেষ বার ফোন করেন হাঁসখালি থেকেই।
পুলিশ জানতে পারে, এই ঘটনায় সোমার ভাই উৎপলের ভূমিকাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ! পুলিশের জেরায় তারা খুনের কথা স্বীকার করে নেয়। তারা জানায়, ১৪ মে, বিমানবন্দরে জগবীরের সঙ্গে দেখা করে উৎপল জানায়, টাকা রয়েছে হাঁসখালিতে। সেখানে গেলেই সব মিটিয়ে দেওয়া যাবে। শিয়ালদহ থেকে গেদে লোকালে জগবীরকে নিয়ে রওনা দেয় সে। রাতে, বগুলায় নেমে অটো ভাড়া করে। মাঝ পথে তুলে নেয় সেই পেশাদার খুনিকে। তার পর হলদিপাড়া-গয়েশ গ্রামের মাঝখানে ফাঁকা জায়গায় তাকে খুন করে পালিয়ে যায় দু’জনে। পুলিশ জানায়, মহিলার স্বামীর ভূমিকাও খতিয়ে দেখছে তারা। আর চলেছে সেই পেশাদার খুনির খোঁজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy