দেবাশিস ভৌমিক
তিন জনেই ছিল হরিহর আত্মা।
এক জন খুন হয়েছে। বাকি দু’জন খুনের অভিযোগে ধরা পড়ে এখন হোমে।
কৃষ্ণনগরে মদের ঝগড়ায় সেই খুনের ঘটনার তদন্তে উঠে আসছে একের পর এক নতুন তথ্য। পুলিশের দাবি, বৃহস্পতিবার মদের আসরে বসার আগেই দেবাশিস ভৌমিককে বিষ খাওয়াতে চেয়েছিল তার দুই বন্ধু। আভাস মিলছে ত্রিকোণ প্রেমেরও।
তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকেরা জানান, মদ ও টাকার পাশাপাশি একাধিক কারণে দেবাশিসের উপরে চটেছিল তার দুই বন্ধু। আর তারই জেরে এই খুন।
ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, বৃহস্পতিবার, ঘটনার দিন সকালে দুই বন্ধু গিয়েছিল দেবাশিসের বাড়িতে। সেখানেই ঠিক হয়, সন্ধ্যায় মদের আসর বসানো হবে। দেবাশিস রাজি হতেই অন্য দু’জন নিজেদের মতো করে ছক কষতে শুরু করে। ১৫ বছরের কিশোর জোগাড় করে উকুন মারা বিষ। ১৭ বছরের কিশোর জোগাড় করে দড়ি। পরে তা দিয়েই দেবাশিসের হাত-পা বাঁধা হয়।
পুলিশ জানায়, বিকেল পাঁচটা নাগাদ তিন বন্ধু দেখা করে। প্রথমে তারা ফুচকা ও চুরমুর খায়। তারপর ১৭ বছরের বন্ধুটি দেবাশিসকে মদ কিনে আনতে দেয়। তারা তিনটে এগরোল কেনে। দেবাশিস ফিরে আসার আগেই দু’জনে সেই এগরোলের ভিতরে উকুন মারা বিষ মিশিয়ে দেয়।
জেরায় পুলিশ জানতে পেরেছে, এরপর তিন বন্ধু চলে যায় হেলিপ্যাডের কাছে। সেখানে গল্প করতে করতে তারা এগরোল খায়। কিন্তু এগরোল তেতো লাগায় সেটা না খেয়ে ফেলে দেয় দেবাশিস। পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় অন্ধকার নামতে তারা চলে যায় দিঘির ধারের জঙ্গলে। সেখানেও মদে বিষ মেশাতে ব্যর্থ হয় তারা। পুলিশের দাবি, এর পরেই তারা মদ খাইয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করে দেবাশিসকে।
পুলিশ জানাচ্ছে, দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে নিয়ে দেবাশিসের সঙ্গে তার ১৭ বছরের বন্ধুর একটা টানাপড়েন চলছিল। সম্প্রতি মদের টাকা ধার নিয়েছিল ওই বন্ধু। দেবাশিস সকলের মধ্যে টাকা চাওয়াতেও রাগ হয় তার।
পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, ‘‘তদন্তে বেশ কিছু বিষয় উঠে আসছে। আমরা সব দিকই খতিয়ে দেখছি।’’ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, প্রথমে মনে হয়েছিল, স্রেফ টাকার জন্যই খুন। তারপর একে একে যে ভাবে মদ, ত্রিকোণ প্রেমের বিষয় উঠে আসছে তাতে রহস্য ভেদ করতে একটু সময় তো লাগবেই।
তিন বন্ধুর এমন পরিণতি শুনে চমকে উঠেছেন কৃষ্ণনাগরিকেরা। তাঁরা বলছেন, ‘‘এ কোন সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি? এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের সম্পর্কে আমরা কি কোনও খোঁজ খবরই রাখছি না?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy