শৌচাগারের সামনে মা ও মেয়ে। নিজস্ব চিত্র
শৌচাগার গড়েও সংবর্ধনা কিংবা পুরস্কার মেলে?
ডোমকলের ফিরদৌসি বিবি ও ইসলামপুরের শ্যামলী মাল আঁচল দিয়ে হাসি চাপছেন, ‘‘আমরাও কি জানতাম নাকি! কী করে সরকারি বাবুরা খবর পেয়ে গেল। আর আমাদের নিয়ে গিয়ে ভাল ভাল কত কথা বলল! বাপ রে, সে কী হাততালি!’’
ভৈরব পার হলেই মেয়ে-জামাইয়ের ঘর। ইদের ক’দিন আগে সেখানে গিয়ে হাজির হন ডোমকলের ফতেপুর গ্রামের ফিরদৌসি বিবি। দুই জামাইয়ের হাত ধরে বলে আসেন, ‘‘এ বারের মত ইদের দিন তোমরা এসো বাবা। সামনে বছর থেকে তোমাদের ব্যবস্থা করবই করব।’’
কিন্তু অনটনের সংসারে সে কথা রাখা হয় না ফিরদৌসির। হরিহরপাড়ার নাছোড় দুই জামাই আলাউদ্দিন শেখ ও সারোয়ার আনসারির এক কথা, ‘‘শৌচাগার যত দিন না হবে শ্বশুরবাড়িতে তত দিন পা রাখব না। ফলে বাধ্য হয়ে একফালি জমি বিক্রি করে শাশুড়ি তৈরি করেছেন শৌচাগার। ৪০ হাজার টাকা খরচ করে নতুন শৌচাগারের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, ‘‘জামাইদের ফোন করেছি। বলেছি, শৌচাগার গড়েছি। এ বার তো তোমরা এসো। ওরাও খুব খুশি। বলেছে, দিন দু’য়েকের মধ্যেই আসবে বাড়িতে। সরকারি পুরস্কারের থেকেও এটা আমার কাছে আরও
বড় পুরস্কার।’’
দিন কয়েক আগে ফিরদৌসির শৌচাগার তৈরির নেপথ্যের খবরটা পৌঁছায় ব্লক প্রশাসনের কাছে। রবিবার ফিরদৌসিকে ডেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে সংবর্ধনা দিয়েছে প্রশাসন। ডোমকলের মহকুমাশাসক দিব্যা উলগানাথন বলেন, ‘‘আমাদের কাছে খুব ভাল খবর এটি। মানুষও এখন সচেতন হচ্ছেন শৌচাগার নিয়ে।’’
শ্যামলীর স্বামী মারা গিয়েছেন প্রায় ন’বছর আগে। সংসারের পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর কাঁধে। খেতে কাজ করে, ভাটায় ইট বয়ে সংসার ঠেলছেন তিনি। মেয়ে বড় হচ্ছে। তার বিয়ের জন্য টাকা জমাচ্ছিলেন। কিন্তু সেই টাকা দিয়েই শৌচাগার তৈরি করে ফেলেছেন তিনি। বছর এগারোর মেয়ে শিউলি মাল স্কুলে যায়। সে শৌচাগার তৈরির বিষয়টি স্কুলে জানতে পারে। বাড়িতে এসে শ্যামলীকে বলে। অনেক ভেবে শ্যামলীও সিদ্ধান্ত নেন, আগে শৌচাগার পরে বিয়ে। শ্যামলী বলছেন, ‘‘মেয়ে বড় হচ্ছে। বাড়িতে শৌচাগার না থাকাটা খুব সংস্যার। দু’জনকেই মাঠে যেতে হত। এ বড় অসম্মানের ব্যাপার। তাই শৌচাগার তৈরির সিদ্ধান্ত নিই।’’
রানিনগর ১ বিডিও গোবিন্দ নন্দী বলছেন, ‘‘নির্মল বাংলা গঠনে এমন ঘটনা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy