Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

ভালবেসে গড়া হল ‘ভালবাসার বাড়ি’

বাড়ির সেই দুরাবস্থার কথা কথা গিয়ে পৌঁছেছিল শান্তিপুরের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ রায়, সুব্রত মৈত্রদের কানে। বৃদ্ধার ঘর সংস্কারে এগিয়ে এলেন তাঁরা। নিজেরাই টাকা দিয়ে রাঙিয়ে দেন ঘর।

গৃহপ্রবেশের পর। নিজস্ব চিত্র

গৃহপ্রবেশের পর। নিজস্ব চিত্র

সম্রাট চন্দ 
শান্তিপুর শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৯ ০১:৩৩
Share: Save:

বৃষ্টি হলে টালির চাল বেয়ে পড়ত জল। তখন কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকত না। ঘরের এক কোণে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে হত। সামান্য ঝড় হলেও ভয় হত টালির চাল না ভেঙে পড়ে। ঘরের চার দেওয়াল পাকা হলেও মেরামতির অভাবে সেটি ভগ্নপ্রায় চেহারা নিয়েছিল। ছিল না শৌচাগারও। সেই এক চিলতে ঘরে কোনও মতে বাস করছিলেন অশীতিপর বৃদ্ধা সবস্বতী গুঁই।

বাড়ির সেই দুরাবস্থার কথা কথা গিয়ে পৌঁছেছিল শান্তিপুরের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ রায়, সুব্রত মৈত্রদের কানে। বৃদ্ধার ঘর সংস্কারে এগিয়ে এলেন তাঁরা। নিজেরাই টাকা দিয়ে রাঙিয়ে দেন ঘর। দেওয়াল মেরামত করান, দরজা, জানালা সাজিয়ে দেন। ভেঙে যাওয়া টালি সরিয়ে সেখানে বসিয়ে দিয়েছেন টিন। গড়ে দিয়েছেন একটি শৌচাগারও। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহায়তায় বাড়িতে সৌর-আলোরও ব্যবস্থা হয়েছে। বাড়ির নাম দেওয়া হয়েছে, ‘ভালবাসার বাড়ি’। তার গায়ে বৃক্ষরোপণের বার্তা। রবিবার ছিল গৃহপ্রবেশ।

শান্তিপুর পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের রাজপুতপাড়া লেনের বাসিন্দা সরস্বতী গুঁই। বয়স আশি ছাড়িয়েছে। সোজা হয়ে দাঁড়াকে কষ্ট হয়। স্বামী মারা গিয়েছেন প্রায় বছর পঞ্চাশেক আগে। রাজপুতপাড়া লেনে একটি ছোট্ট ঘরই তাঁর মাথা গোঁজার আস্তানা। চার ছেলে মেয়ের মধ্যে একটি মেয়েই জীবিত। বিবাহিতা এবং শ্বশুরবাড়িতে থাকে। স্বামী মারা যাওয়ার পরে এক সময়ে কলকাতায় পরিচারিকার কাজ করেছেন কিছু দিন। কিন্তু এখন আর বয়সের কারণে কাজকর্ম করতে পারেন না। ঘরে ছিল না বিদ্যুতের সংযোগ। সারাদিনে কখনও মেয়ে আবার কখনও এলাকার বাসিন্দারা খাবারের ব্যবস্থা করেন। তাঁর এই দুরাবস্থার কথা শুনে এগিয়ে আসেন শান্তিপুরেরই বাসিন্দা বিশ্বজিৎ রায়, সুব্রত মৈত্রেরা। সরস্বতী বলছেন, “আমার বাড়ি আগে যা ছিল সেখানে আর বাস করা যাচ্ছিলনা। কোনোমতে টিকে ছিলাম। এখন এই ছেলেরা আমার ঘর খুব ভাল করে দিয়েছে।”

আর বিশ্বজিৎ, সুব্রতেরা বলছেন, “বৃদ্ধার ভোটার কার্ড এবং অন্য নথি নেই। তাই সরকারি আবাস প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছিলেন না। আমরা তার অবস্থার কথা শুনে তার ঘর সংস্কারের কাজে হাত লাগাই। নিজেরাই নানা জিনিস কিনে এনে তার ঘর সারিয়ে অন্তত বাসযোগ্য করে দিয়েছি। শৌচাগারও তৈরি করে দিয়েছি।”

এক সময়ে তার রেশন কার্ড ছিল বলে জানান সরস্বতীদেবী। কিন্তু তা কী হল সেটা আর বলতে পারছেন না বৃদ্ধা। নিজের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড ইত্যাদি না থাকায় সরকারি আবাস প্রকল্প, বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতার মতো সুযোগ সুবিধাও পান না তিনি।

শান্তিপুরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিভাস ঘোষ বলছেন, “সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতে গেলে যে সমস্ত নথিপত্র দরকার তা বৃদ্ধার নেই। না হলে আগেই উদ্যোগী হওয়া যেত।” রবিবার সরস্বতীর হাতে জেনারেল রিলিফের একটি কুপন তুলে দেন ওই কাউন্সিলর। যার মাধ্যমে রেশন দোকান থেকে বিনামূল্যে চাল পাবেন তিনি। নথিপত্রের বিষয়ে সরস্বতীদেবী সাহায্য চাইলে তিনি সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

House Old Woman Shantipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE