বেওয়ারিশ লাশের পাহাড় জমেছে বহরমপুর পুলিশ মর্গে। বছর খানেকেরও বেশি পড়ে রয়েছে সেগুলি। কারণ মৃতদেহগুলির কোনও দাবিদার নেই। এখন পরিস্থিতি এমনই শোচনীয় যে, নতুন করে মৃতদেহ রাখার জায়গা নেই মর্গে।
এই অবস্থায় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিঠি পাঠিয়ে বহরমপুর পুরসভাকে ওই বেওয়ারিশ লাশ সৎকারের জন্য আর্জি জানিয়েছে। কিন্তু পুরসভা পত্রপাঠ ওই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও পুরপ্রধানের কাছে তার ব্যাখ্যা রয়েছে। পুরপ্রধান কংগ্রেসের নীলরতন আঢ্য বলেন, ‘‘বহরমপুরের গোরাবাজার ও খাগড়া শ্মশানের দু’টি বৈদ্যুতিক চুল্লি ভীষণ ব্যস্ত। ফলে কোনও বিশেষ একটি দিন সাধারণের জন্য বন্ধ রেখে সেখানে ওই বেওয়ারিশ লাশের সদগতি করার উপায় নেই।’’
নীলরতনবাবু আরও বলেন, ‘‘সব চেয়ে বড় কথা ওই বেওয়ারিশ লাশের কোনও বিস্তারিত তথ্য আমার কাছে নেই। সেই সঙ্গে বেওয়ারিশ লাশ সৎকারের জন্য বৈদ্যুতিন চুল্লির যে বিদ্যুৎ খরচ হবে, তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বহন করবে কি না, তা-ও জানানো হয়নি। ফলে বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে আবেদন করলে তখন কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক করে ওই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু তার আগে ওই সংক্রান্ত কোনও মন্তব্য করতে পারব না।’’
বহরমপুর রেল স্টেশন ঢোকার মুখেই বাম দিকে পুলিশ মর্গ। অবস্থানগত কারণে ট্রেনে যাতায়াতের জন্য বহরমপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ ওই পথ ব্যবহার করেন। ওই মর্গের ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে পরপর রয়েছে— মৎস্য দফতরের জেলা কার্যালয়, মীন বাজার, এফসিআইয়ের গুদামঘর ও পুলিশকর্মীদের সরকারি আবাসন। এখন মর্গের ভেতরে দীর্ঘ দিন ধরে জমে থাকা মৃতদেহে পচন ধরে যাওয়ায় দুর্গন্ধে ওই পথ মাড়ানো অসম্ভব হয়ে উঠেছে। যদিও দু’বছর আগে পূর্ত দফতর মর্গটিকে বাতানুকূল করে দেওয়ায় কিছুটা বাঁচোয়া। মর্গের চার দিকের পাঁচিলও আগের তুলনায় উঁচু হওয়ায় রেহাই মিলেছে ‘দৃশ্যদূষণের’ হাত থেকে।
২০০৫ সালে তৎকালীন জেলাশাসক নারায়ণ মঞ্জুনাথ প্রসাদ বহরমপুর রেল স্টেশন চত্বরকে সুন্দর করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তখন জনবহুল ওই এলাকা থেকে মর্গটিকে সরিয়ে ফেলারও পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু এখনও তা কার্যকর হয়নি। ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল গড়ে ওঠে। তার দু’বছরের মধ্যে ওই হাসপাতালের পূর্ব দিকে অত্যাধুনিক মর্গ নির্মাণের পরেই পুরনো এই পুলিশ মর্গটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। আর পুরনো মর্গে পড়ে থাকা লাশ থেকে বেরোচ্ছে দুর্গন্ধ।
কিন্তু এই মুহূর্তে মর্গে বেওয়ারিশ লাশের সংখ্যা নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, এমনকী মহকুমা প্রশাসনও মৃতেদেহের সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেনি। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বেওয়ারিশ মৃতদেহের পাশাপাশি ময়নাতদন্তের পরে মৃতদেহের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পড়ে রয়েছে। সৎকারের জন্য বহরমপুরের পুরপ্রধানকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, পুলিশ ও ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতিতে প্রতি মাসের যে কোনও এক দিন বিজ্ঞপ্তি জারি করে বৈদ্যুতিন চুল্লি সাধারণের জন্য বন্ধ রেখে ওই বেওয়ারিশ মৃতদেহ সৎকার করার কথা। কিন্তু পুরপ্রধান পাল্টা চিঠি দিয়ে শ্মশান বন্ধ রেখে তাঁর পক্ষে ওই কাজ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন।’’
গোটা বিষয়টি নিয়ে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জানান মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বর্তমান সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ সুহৃতা পাল। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ বহরমপুরের মহকুমাশাসক দীব্যনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘ওই বেওয়ারিশ লাশের সদগতির বিষয়ে মীমাংসা করতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy