Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সভা ছেড়ে চলে গেলেন উপাচার্য

এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ প্রশাসনিক ভবনের নীচে বিদ্যাসাগর সভাগৃহে উপাচার্যের সঙ্গে শিক্ষকেরা বৈঠক বসেন।

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মিছিল। নিজস্ব চিত্র

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মিছিল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কল্যাণী শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:১০
Share: Save:

অচলাবস্থা কাটার একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবাংশু রায় লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন, উপাচার্য শঙ্করকুমার ঘোষ শুক্রবার সকালে শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। কিন্তু তা হল না। উল্টে পরিস্থিতি জটিলতর হল। এ দিন শিক্ষকদের মতোই আন্দোলনে শামিল হলেন অশিক্ষক কর্মী ও গবেষকদের একটা বড় অংশ।

এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ প্রশাসনিক ভবনের নীচে বিদ্যাসাগর সভাগৃহে উপাচার্যের সঙ্গে শিক্ষকেরা বৈঠক বসেন। প্রথমে কর্তৃপক্ষের তরফে কয়েক জন বায়োমেট্রিক হাজিরার সমর্থনে কথা বলেন। পরে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি তারকদাস বসু, ইতিহাসের অধ্যাপক অলোককুমার ঘোষেরা তার বিরুদ্ধে বলতে শুরু করেন। এর পরেই বৈঠক ভেস্তে যায়। শিক্ষকদের দাবি, আচমকা উপাচার্য আসন ছেড়ে উঠে পড়েন। সমিতির সম্পাদক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা বারবার ওঁকে অনুরোধ করি আলোচনা করতে। কিন্তু উপাচার্য কারও কথা শুনলেন না। আচমকা চলে গেলেন।’’

ক্ষুব্ধ শিক্ষকেরা ওই সভাগৃহেই সাধারণ সভা করে সিদ্ধান্ত নেন, উপাচার্যের ঘরের সামনে অবস্থান চলবে এবং তাঁরা যে সমস্ত প্রশাসনিক পদে রয়েছেন সেগুলি থেকে পদত্যাগ করবেন। তবে কর্মবিরতি তুলে নিয়ে আগামী সোমবার থেকে ফের ক্লাস নেওয়াও শুরু করবেন।

তারকদাসের দাবি, ৩৩টি বিভাগের প্রধানের মধ্যে ২০ জন ইতিমধ্যে পদত্যাগপত্রে সই করেছেন। এক জন ছাড়া হস্টেলের সব ‘প্রোভস্ট’-ই পদত্যাগ করেছেন। ‘ডিন অব স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার’ পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন মাধব ঘোষ। সোমবারের মধ্যে পদত্যাগ করবেন বলে বিভাগীয় প্রধানদের অনেকেই জানিয়েছেন।

তবে এ দিন শুধু শিক্ষকেরাই নন। দুপুর ১টা নাগাদ কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনোজকুমার সিংহের নেতৃত্বে বহু কর্মী মিছিল করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে সভা করেন। তাঁদের অভিযোগ, বহু পদ শূন্য পড়ে থাকা অবস্থাতেই তাঁরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু করা হচ্ছে, কিন্তু এ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। বারবার বলা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় তাঁদের অনেকে ‘স্বাস্থ্যসাথী’র সুবিধাও পাচ্ছেন না। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় যদি কর্মীদের তা দিতে পারে, কল্যাণী কেন পারবে না সে প্রশ্নও তোলা হয়।

সকাল থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন বহু গবেষকও। দুপুরে বিভিন্ন বিভাগের গবেষকেরা মিছিল করে রেজিস্ট্রারের ঘরের সামনে এসে বসে পড়েন। হাতে বিভিন্ন দাবি সংবলিত ফ্লেক্স। তাঁদের অভিযোগ, বিনা কারণে বাংলা বিভাগের কয়েক জনের ফেলোশিপের টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। কোনও গবেষক চাকরি পেলে ফেলোশিপ না নিয়ে আংশিক সময়ে গবেষণা করতে পারেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেই সুযোগ না-দিয়ে রেজিস্ট্রেশন বাতিল করছেন। গবেষকদের বসার জায়গাও নেই। শনি ও রবিবার বিভাগে বিদ্যুৎ থাকে না। বিজ্ঞানের গবেষকেরা কোনও কিছু ফ্রিজে রেখে রেখে গেলে সোমবার এসে দেখেন তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ইন্টারনেটের সংযোগও বহু সময়ে থাকে না। তাঁদের প্রশ্ন: বলা হচ্ছে যে রাষ্ট্রীয় উচ্চতর শিক্ষা অভিযানে বহু কোটি টাকা কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছে, তা হলে সেই টাকায় কেন গবেষণার মানোন্নয়ন করা হচ্ছে না? উপাচার্য এ সব সমস্যা না মেটালে লাগাতার অবস্থান চলবে বলেও তাঁরা হুমকি দিয়েছেন। উপাচার্যকে ফোন করা হলে যথারীতি তিনি তা ধরেননি। ফলে তাঁর প্রতিক্রিয়াও মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kalyani University Strike
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE