Advertisement
E-Paper

টাকা তুলতে দিন কাবার

মাসের পয়লা তারিখে মাইনেটা সোজা অ্যাকাউন্টে পড়ে যায়। কিন্তু তাতে কী? টাকার মুখ দেখতে ঢের দেরি।

কল্লোল প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৭ ০১:৩১
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মাসের পয়লা তারিখে মাইনেটা সোজা অ্যাকাউন্টে পড়ে যায়। কিন্তু তাতে কী? টাকার মুখ দেখতে ঢের দেরি।

সংসারের কাজ, বাচ্চাদের স্কুল, অফিস-কাছারি সামলে সেই ১৫ কিলোমিটার রাস্তা উজিয়ে পলাশিপাড়া যাও, তবে কি না দেখা মিলবে ব্যাঙ্কের। কাছাকাছি কোনও ব্যাঙ্কই যে নেই। তাই চরম সমস্যায় রয়েছেন তেহট্ট ২ ব্লকের বার্নিয়া, পলসণ্ডা ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা। মাস মাইনে ছাড়াও ব্যাঙ্কে টাকা জমা করা বা তোলা, সবেতেই ভুগতে হয় বাসিন্দাদের।

বার্নিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তরুণ ঘোষচৌধুরীর অভিযোগ, এলাকার প্রায় পনেরো কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে একটিও ব্যাঙ্ক নেই। যে কারণে ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত সমস্ত কাজে নাজেহাল হতে হয় এলাকাবাসীদের। কয়েক বছর আগে এলাকায় ব্যাঙ্ক খোলার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে বেশ কয়েকবার জানানো হয়েছিল। কিন্তু নতুন ব্যাঙ্ক খোলার জন্য কোনও পদক্ষেপই কেউ নেননি। তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ষাটটি গ্রামের মানুষ নিত্যদিন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

কাজের সূত্রে এলাকার বহু ছেলেই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছেন। ব্যাঙ্ক-মারফত তাঁরা মাসে মাসে বাড়িতে টাকা পাঠিয়ে দেন। কিন্তু কাছাকাছি ব্যাঙ্ক না থাকায় পরিবারের লোকজনকে তাদের পাঠানো টাকা তুলতে প্রায় কুড়ি কিমি রাস্তা ঠেঙিয়ে দূরের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে যেতে হয়।

তেহট্টের বার্নিয়া মাঝপাড়ার বাসিন্দা আফাজুদ্দিন শেখই যেমন। বছর চারেক আগে কাজের সূত্রে ছেলে মামলোত হোসেন কুয়েতে যান। আফাজুদ্দিন পেশায় চাষি। মাঠের কাজকর্ম নিয়েই সারাদিন ব্যস্ত থাকেন। বললেন, “প্রতি মাসে ছেলে নিজের বেতনের টাকা পাঠায়। কিন্তু সেই টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলতে তেহট্টে বা পলাশিপাড়ার ব্যাঙ্কে যেতে হয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এখন চাষের কাজ সামলাব, না ব্যাঙ্কের দোরে ছুটে মরব। ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সারাদিন কাবার হয়ে যায়।” একই অভিযোগ গ্রামের ইসলাম শেখের। তাঁর কথায়, ছেলে সূরজ শেখ দুবাই থেকে টাকা পাঠালে কাজকর্ম ফেলে ব্যাঙ্কে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।

সুরেন্দ্রপুর গ্রামের স্কুল শিক্ষিকা টিনা খাতুন। জানালেন, দাদা সানোয়ার হোসেন দুবাইয়ে থাকেন। তাঁর পাঠানো টাকা তুলতে বর্ধমানের কাটোয়ায় যেতে হয় তাঁকে। প্রায় বিশ কিলোমিটার দূরত্ব। তা ছাড়া নিজের বেতন তুলতেও পলাশিপাড়ার একটি ব্যাঙ্কে যেতে হয়। সে-ও বাড়ি থেকে দূরত্ব প্রায় পনেরো কিলোমিটার।

এলাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের একটি গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র থাকলেও সেখানে বাণিজ্যিক পরিষেবার সুবিধা নেই। কাছাকাছি দু’টি এটিএম কাউন্টার আছে। কিন্তু সপ্তাহের বেশির ভাগ দিনেই সেখানে টাকা থাকে না। তার মধ্যে আবার উল্টো বিপত্তি হয়েছিল বৃহস্পতিবার। ও দিন
রাতে ওই এটিএম থেকে দু’হাজার টাকার একটা ছেঁড়া নোট তুলে বেকায়দায় পড়েন আশরাফ হোসেন। এলাকায় ব্যাঙ্ক না থাকায় সেই ছেঁড়া টাকা জমা দিতেও বেশ হ্যাঁপা পোহাতে হয়েছে।

সমস্যার কথা শুনে নদিয়া জেলা লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সুগত লাহিড়ী জানান, জেলার যে সব এলাকায় কোনও ব্যাঙ্ক নেই, সেখানে নতুন শাখা খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই শাখাগুলি খুলবেন বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু এ এলাকায় ব্যাঙ্কের অভাব যেমন নতুন, তেমনই এ ধরনের প্রতিশ্রুতিও তো নতুন কিছু নয়। সত্যিই সুরাহা হবে তো? চুপ প্রশাসন।

Bank Rural Area Customer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy