E-Paper

শংসাপত্রের নথি নেই, উঠছে প্রশ্ন

২০১৬ সালের আগে এই পঞ্চায়েত ছিল তৃণমূলেরই হাতে। সেই প্রাক্তন প্রধানের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি।

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২৫ ১০:১৭
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

জন্মের শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তার কোনও নথি রাখা হয়নি পঞ্চায়েতের দফতরে। আর এই ঘটনার ফলে সীমান্তের রানিনগর ২ পঞ্চায়েত সমিতির রাজাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা পড়েছেন চরম বিপাকে। অনেকেই পাসপোর্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরে গিয়েও ফিরে এসেছেন ওই শংসাপত্র না থাকায়। কারণ অভিভাবক বা উপভোক্তা পঞ্চায়েতের তরফে ইস্যু করা সার্টিফিকেট দেখালেও অনলাইনে তা নথিভুক্ত করার সময় পঞ্চায়েতের কাছ থেকে যাচাই করা হচ্ছে। আর তা করার সময় পঞ্চায়েত সটান জানিয়ে দিচ্ছে তাদের কাছে কোন নথি নেই।

ফলে কেবল হয়রানি নয়, সন্দেহের নজর পড়ছে তাদের উপরে। অনেক দফতরের কর্তারা প্রশ্ন তুলছেন ওই শংসাপত্র নকল বলে। ব্লক প্রশাসন সূত্রে দাবি করা হয়েছে, অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে দিন কয়েক আগে। গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

কেন এই অবস্থা? রাজাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান মৃত্তিকা মণ্ডল বলছেন, ‘‘সাধারণ মানুষ হয়রান হচ্ছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করার নেই। ২০১৬ সালের আগে কোনও রেজিস্টার আমাদের দফতরে নেই। কেন নেই সেটা সেই সময়ের যাঁরা দায়িত্ব ছিলেন, তাঁরা বলতে পারবেন। তবে আমি নিয়ম মেনে গোটা বিষয়টি বিডিও এবং পুলিশকে জানিয়েছি।’’

সূত্রের খবর, ২০১৬ সালের আগে এই পঞ্চায়েত ছিল তৃণমূলেরই হাতে। সেই প্রাক্তন প্রধানের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। তবে স্থানীয় জলঙ্গির বিধায়ক তৃণমূলের আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডল বলেন, ‘‘দলের তরফে গোটা ঘটনা আমরা খতিয়ে দেখব, যাতে সাধারণ মানুষের হয়রানি না হয়।’’

একেবারে সীমান্ত লাগোয়া গ্রাম পঞ্চায়েত রাজাপুর। ফলে সেখানকার মানুষের কাছে জন্মের শংসাপত্র আর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তা ছাড়া বর্তমানে পরিযায়ী শ্রমিকের প্রমাণপত্র হিসেবেও ভিন্ রাজ্যে জন্মের শংসাপত্র দেখতে চাইছে পুলিশ থেকে প্রশাসন। ওই এলাকার বাসিন্দা জুলফিকার আলি বলেন, ‘‘আমার ছেলে মেহেদী হাসানের শংসাপত্র রাজাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই শংসাপত্র নিয়ে পাসপোর্ট করতে গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। ওই দফতর থেকে বলে দেওয়া হয়েছে আপনাদের শংসাপত্রের কোনও তথ্য নেই গ্রাম পঞ্চায়েতে। বিষয়টি জানতে পারার পরে আমি গ্রাম পঞ্চায়েতে যোগাযোগ করেছি। তারা কোনও উত্তর দিতে পারেনি।" একই ভাবে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের অণিমা মণ্ডলকে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘একই ভাবে আমাকেও জন্মের শংসাপত্র নিয়ে বিভিন্ন দফতরের কাছে শুনতে হয়েছে আপনাদের শংসাপত্র নকল। কারণ তার কোনও নথি গ্রাম পঞ্চায়েতে নেই। আর গ্রাম পঞ্চায়েতে গেলে প্রধান থেকে অফিসের কর্মীরা বলে দিচ্ছেন, আমাদের কিছু করার নেই, ও সব আমাদের আগের আমলে হয়েছে। আমরা তখন দায়িত্বে ছিলাম না।’’

বর্তমানে যাবতীয় নথি তৈরি হচ্ছে অনলাইনে। আর এই অনলাইনে করতে গিয়েই জন্মের শংসাপত্র যাচাই করার সময় গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে চাওয়া হচ্ছে জন্মের শংসাপত্রের নথি। আর সেই সময় তা দিতে পারছে না রাজাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত। আর তাতেই ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের হাজার হাজার মানুষকে।

রানিনগর ২ ব্লকের বিডিও নির্মাল্যকৃষ্ণ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দিন কয়েক আগে আমি পঞ্চায়েতের তরফ থেকে ওই অভিযোগটি পেয়েছি। গোটা ঘটনাটি আমাদের পক্ষ থেকে দ্রুত তদন্ত করে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

পঞ্চায়েতের দেওয়া শংসাপত্র দেখালেও অনলাইনে তা নথিভুক্ত করার সময় পঞ্চায়েতের কাছ থেকে যাচাই করা হচ্ছে। আর তা করার সময় পঞ্চায়েত সটান জানিয়ে দিচ্ছে তাদের কাছে কোন নথি নেই।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

birth certificate

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy