Advertisement
E-Paper

সন্ত্রাসের ভোটে পুলিশ শুধু দর্শক

নির্বাচনের আগে প্রশাসনের আশ্বাস ছিল—ভোট হবে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভাবে। কিন্তু নির্বাচনের দিন প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েই সরব হলেন বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘ভোট নয়, অবাধে সন্ত্রাস চালিয়েছে তৃণমূল। আর পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায় থেকে পরোক্ষে সাহায্য করেছে শাসক দলকেই।’’

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৫ ০১:০৯
বহরমপুরের শিয়ালমারা বুথে চলছে তৃণমূলের লোকজনের নজরদারি। ডান দিকে, সালার থানায় অবস্থান বিক্ষোভ কংগ্রেসের। শনিবার গৌতম প্রামাণিক ও কৌশিক সাহার তোলা ছবি।

বহরমপুরের শিয়ালমারা বুথে চলছে তৃণমূলের লোকজনের নজরদারি। ডান দিকে, সালার থানায় অবস্থান বিক্ষোভ কংগ্রেসের। শনিবার গৌতম প্রামাণিক ও কৌশিক সাহার তোলা ছবি।

নির্বাচনের আগে প্রশাসনের আশ্বাস ছিল—ভোট হবে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভাবে। কিন্তু নির্বাচনের দিন প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েই সরব হলেন বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘ভোট নয়, অবাধে সন্ত্রাস চালিয়েছে তৃণমূল। আর পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায় থেকে পরোক্ষে সাহায্য করেছে শাসক দলকেই।’’

উপনির্বাচনে জয়-পরাজয়ের নিরিখে সিংহভাগ পঞ্চায়েত কিংবা পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতার রদবদলের সম্ভবনা ছিল না। অথচ বিধানসভার আগে নিয়মরক্ষার এই ভোটটাই যেন বিধানসভার সেমিফাইনাল হয়ে উঠল! শনিবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দিনভর উত্তপ্ত হয়ে থাকল মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ার বেশ কিছু এলাকা।

এ দিন মুর্শিদাবাদের সালার, বড়ঞা এলাকায় উত্তেজনা ছিল। কংগ্রেস প্রার্থীর স্বামীকে অপহরণ থেকে শুরু করে কংগ্রেস-তৃণমূল সংঘর্ষ, কংগ্রেসের রাস্তা অবরোধ, অবস্থান বিক্ষোভ, বোমা ফেটে দুই কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যু— বাদ গেল না কিছুই। ভরতপুর-২ ব্লকের তালিবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৯টি বুথে ভোট হয়েছে। তারমধ্যে পূর্বগ্রামের ১১/১ ও ১১/২ নম্বর বুথে সকাল থেকেই পরিস্থিতি ছিল উত্তপ্ত। কংগ্রেসের অভিযোগ, ওই বুথে তৃণমূলের লোকজন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পুলিশের সামনেই ঘুরেছে। এজেন্টদের বের করে দিয়ে তৃণমূল ছাপ্পা ভোট দিয়েছে। পূর্বগ্রামের কংগ্রেস প্রার্থী জয়ন্তী ঘোষের স্বামী রণদীপ ঘোষ ছিলেন ওই বুথের এজেন্ট। অভিযোগ, বুথে ঢোকার আগেই রণদীপবাবুকে অপহরণ করা হয়।

ভোটকেন্দ্রে উঁকি। ঘাটেশ্বরে।

খবর পেয়ে ছুটে আসেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। সকাল ৯টা ১৫ নাগাদ দলীয় কর্মী-সমর্থদের নিয়ে সালার থানার সামনে ধর্ণায় বসেন তিনি। দেড় ঘণ্টা পরে রণদীপবাবুকে উদ্ধার করে পুলিশ। অপহরণের মামলাও রুজু করা হয়। এরপরেই ওঠে অবরোধ। অভিযোগ, অবরোধ উঠার পর ভরতপুরে কংগ্রেস কর্মীদের মাইক ভেঙে দেয় তৃণমূলের লোকজন। প্রতিবাদ করতে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে ঝামেলা বাঁধে।

শুক্রবার রাতে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার পাথরঘাটা এলাকায় বোমা ফেটে মারা গিয়েছেন জুলফিকর মণ্ডল (২৫) ও ইন্তাজুল মণ্ডল (২৭) নামে দু’জন কংগ্রেসকর্মী। তাঁদের বাড়ি পাথরঘাটাতেই। ঘটনায় জখম হয়েছেন উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী জেহেদা বিবির ছেলে সাজু মণ্ডল। তাঁর পিঠে ও ডান পায়ে আঘাত লেগেছে। এই ঘটনা নিয়েও শুরু হয়েছে কংগ্রেস ও তৃণমূলের চাপানউতোর। কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি মীর আলমগীর বলেন, ‘‘ওটা আমাদের শক্ত ঘাঁটি। সেটা জেনে তৃণমূল কয়েকদিন ধরে ওই এলাকার ভোটারদের চমকাচ্ছিল। ওরা বাড়ি ফিরছিল। রাস্তায় তৃণমূল বোমা ছোড়ে। এতেই ওই দুই দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন বলেন, ‘‘বোমা বাঁধতে গিয়ে ওঁদের মৃত্যু হয়েছে।’’

বহরমপুরের শিয়ালমারার ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে এ দিন তৃণমূলেরই দাপট চোখে পড়েছে। ভিতরে এ দিন বহিরাগতদের দেখা গিয়েছে। তৃণমূল কিংবা প্রশাসন কোনও তরফেই এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনও উত্তর মেলেনি। বিরোধীদের অভিযোগ, জেলা তৃণমূল সভাপতি মান্নান হোসেনের খাসতালুক বলে পরিচিত রাধারঘাট-১ পঞ্চায়েতের ৪ নম্বর আসনের ওই ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীরা বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করেছিলেন। তৃণমূলের প্রার্থী ফিরোজ শেখ বুথের মধ্যে ঢুকে ভোটারদের প্রভাবিত করা থেকে ভোট দিতেও সাহায্য করেন বলে অভিযোগ।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘বাংলার মানুষ তৃণমূল ও পুলিশের যৌথ সন্ত্রাসের সাক্ষী থাকল। গোটা বিষয়টি নির্বাচন কমিশন ও রাজ্যপালকে বিস্তারিত ভাবে জানিয়েছি।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পুলিশের সাহায্য নিয়ে ছাপ্পা ভোট দেওয়া থেকে বুথ জ্যাম সবই করল তৃণমূল।’’ বিজেপি সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মণ্ডলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘তৃণমূল সন্ত্রাস চালিয়ে ভোট লুঠ করল।’’ জেলা তৃনমূলের সভাপতি মান্নান হোসেন বলেন, ‘‘সিপিএম এবং কংগ্রেস জোটবদ্ধ হয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে।’’ আর জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাওয়ের কথায়, ‘‘বিক্ষিপ্ত কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া ভোট হয়েছে নির্বিঘ্নেই।’’

অন্য দিকে, নদিয়ার সগুণাতে সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সগুণা, কামালপুর, মোল্লাপাড়া ও বহিরগাছির মতো এলাকায় তৃণমূলের বহিরগতদের সক্রিয় উপস্থিতি মনে করিয়ে দিয়েছে গত পুরভোট বা উপনির্বাচনকে। বিরোধীরাই এ দিনের ভোটকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, যারা তৃণমূলকে ভোট দেবে না এমন লোকজনকে চিহ্নিত করে ভোটকেন্দ্রের আগেই আটকে দিয়েছে তৃণমূলের বহিরাগতরা। চাকদহ, শিমুরালি, মদনপুর, গয়েশপুর ও হরিণঘাটা পুরসভা এলাকা থেকে আসা ওই বহিরাগতদের একজনের কথায়, ‘‘দল থেকে আমাদের কাজ ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।’’

বিরোধীদের দাবি, শুক্রবার রাতেই ওই এলাকায় বহিরগতরা ঢুকে গিয়েছিল। ভোটের দিন তারাই দাপিয়ে বেড়াল। কৃষ্ণনগর-২ পঞ্চায়েত সমিতির বেশ কয়েকটি জায়গায় তৃণমূলের বাইক বাহিনীর তাণ্ডবের অভিযোগ তুলেছে সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে বিরোধীরা। বিজেপির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মহাদেব সরকারের অভিযোগ, ‘‘সব জেনেও পুলিশ কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকায় থেকেছে।’’ একই অভিযোগ সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দেরও। যদিও নীরব সন্ত্রাসের অভিযোগ মানতে চাননি তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পরাজয় নিশ্চিত জেনে বিরোধীরা এ সব কুৎসা রটাচ্ছে। ভোট হয়েছে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভাবেই।’’ নদিয়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘জেলার কোথাও কোনও অশান্তির খবর নেই।’’

by poll nadia murshidabad
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy