অর্ধসমাপ্ত রানাঘাট রবীন্দ্র ভবনের ভবিষ্যৎ কী জানতে গিয়ে যে এমন উত্তর মিলবে তা আশাই করতে পারেননি রানাঘাটের মানুষ। কারণ, এই প্রশ্নের উত্তর প্রকাশ্যে এলে নাকি দেশের সার্বভৌমত্ব, ঐক্য, নিরাপত্তা, কৌশলগত, বৈজ্ঞানিক বা অর্থনৈতিক স্বার্থের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনই ‘আইনি যুক্তি’ দেখিয়ে আরটিআইয়ের (তথ্য অধিকার আইন) আবেদন খারিজ করল রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ। বিষয়টি সামনে আসতেই বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
রানাঘাট শহরের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক জয়দেব মুখোপাধ্যায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের রাজ্য পাবলিক ইনফরমেশন অফিসারের কাছে একটি আরটিআই করেন। আবেদনপত্রে ওই শিক্ষক সুনির্দিষ্ট দু’টি বিষয়ে জানতে চান। এক, রানাঘাট রবীন্দ্র ভবন সংস্কার সংক্রান্ত কোনও পরিকল্পনা বা প্রস্তাব তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের আছে কিনা? দুই, যদি রবীন্দ্র ভবন সংস্কার সংক্রান্ত কোনও পরিকল্পনা বা প্রস্তাব থেকে থাকে, সে ক্ষেত্রে তার নথিপত্র প্রদান করা হোক।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সংস্কৃতি অধিদফতরের তরফে চিঠি দিয়ে আবেদনকারীকে সম্প্রতি জানানো হয়, ‘আপনার আবেদনটি তথ্য অধিকার আইনের ৮(১)(এ) ধারা মতে খারিজ করা হল।’ জানা গিয়েছে, ওই ধারাতে স্পষ্টই উল্লেখ রয়েছে, এমন কোনও তথ্য প্রকাশ্যে আনা যাবে না যাতে দেশের সার্বভৌমত্ব, ঐক্য, নিরাপত্তা, কৌশলগত, বৈজ্ঞানিক বা অর্থনৈতিক স্বার্থের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। আইনজীবীদের অনেকেই বলছেন, ওই শিক্ষক যে তথ্য চেয়েছিলেন তার উত্তর তথ্য অধিকার আইনে দেওয়া সম্ভব নয়। তার কারণ, রবীন্দ্র ভবন সংস্কার সংক্রান্ত পরিকল্পনা বা প্রস্তাব থেকে থাকলেও তা কখনই কোনও তথ্য হতে পারে না। তথ্য সেটাই, যা দফতরের নথিতে লিপিবদ্ধ থাকবে।
বিষয়টি নিয়ে আবেদনকারী শিক্ষক জয়দেব বলেন, ‘‘তথ্য নেই বা আইন মেনে আবেদন হয়নি এমনটা উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট ওই বিভাগ আমার আবেদন পত্রটি খারিজ করে দিতেই পারত। এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভাবে আইনের অপব্যাখ্যা করা হয়েছে। রবীন্দ্র ভবন সংস্কার সংক্রান্ত পরিকল্পনা প্রকাশ্যে আসলে তা কখনই দেশের সার্বভৌমত্ব বা নিরাপত্তা নষ্ট করতে পারে না।’’
আরটিআইয়ের জবাবে কেন এমন উত্তর? বুধবার সকালে বিভাগের অধিকর্তা সুনন্দিতা দাশগুপ্ত প্রশ্ন শোনার পরে বলেন, ‘‘এখন ব্যস্ত রয়েছি। পরে কথা বলব।’’ পরে তাঁকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। মোবাইল বার্তারও জবাব মেলেনি।
প্রসঙ্গত, ২০০০ সালের বন্যায় রবীন্দ্র ভবনটি নষ্ট হয়ে গেলে পরবর্তীতে কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ প্রকল্পে শুরু হয় নতুন করে রবীন্দ্রভবন নির্মাণের কাজ। অথচ ২৪ বছর পরেও সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্ম বর্ষে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যৌথ ভাবে ‘রবীন্দ্র কালচারাল স্কিম ২০১২’ এর মাধ্যমে নবরূপে রবীন্দ্রভবন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়। প্রকল্প খরচ সেই সময় ধরা হয়েছিল সাত কোটি ৩২ লক্ষ টাকা।
কথা ছিল, কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারই অর্থ বরাদ্দ করবে। ২০১৩ সালে জানুয়ারি মাসের মধ্যেই রাজ্য সরকার দুই কোটি ৯২ হাজার ৮৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। অথচ কেন্দ্রের তরফ কোনও বরাদ্দ হয়নি। ২০১৪ সালে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ‘রবীন্দ্র কালচারাল স্কিম’ তুলে নেওয়া হয়। রাজ্যের তরফে বরাদ্দ হওয়া অর্থে কিছুটা কাজ হলেও বর্তমানে রবীন্দ্র ভবনটি অর্ধসমাপ্ত অবস্থাতেই পড়ে রয়েছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)