Advertisement
২২ মার্চ ২০২৩
River Erosion

গঙ্গার ভাঙন রোধে আরও ২৫ কোটি দাবি

রঘুনাথগঞ্জের সেচ দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কল্পরূপ পাল বলেন, “শমসেরগঞ্জ ও ফরাক্কায় প্রথম দফায় ২৭ কোটি টাকা মিলেছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

বিমান হাজরা
শমসেরগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১০:০২
Share: Save:

মহেশটোলা ও প্রতাপগঞ্জ সহ বাকি অংশের গঙ্গা ভাঙন রোধে আরও ২৫ কোটি টাকা চাইল জেলা সেচ দফতর। ইতিমধ্যেই প্ল্যান এস্টিমেট করে সে টাকা বরাদ্দের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

রঘুনাথগঞ্জের সেচ দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কল্পরূপ পাল বলেন, “শমসেরগঞ্জ ও ফরাক্কায় প্রথম দফায় ২৭ কোটি টাকা মিলেছে। গত বছর শমসেরগঞ্জের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৫৩ কোটি টাকা। দু’টিরই কাজ চলছে। গত বছরের শেষ দিকে যে সব এলাকায় ভাঙন হয় সেগুলির জন্য কোনও অর্থ বরাদ্দ এখনও হয়নি। ২৫ কোটি টাকার একটি প্ল্যান এস্টিমেট তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। তা অনুমোদন পেলে তার কাজ শুরু হবে।”

শমসেরগঞ্জে এই মুহূর্তে কোনও ভাঙন নেই। নদীও শান্ত। কারণ গঙ্গার জল পাড় থেকে প্রায় ২৫ ফুট নীচে নেমেছে। তবু মহেশটোলা এলাকায় নদী পাড়ের জমিতে ফাটল দেখা গিয়েছে নতুন করে। ফলে আতঙ্ক কাটছে না বাসিন্দাদের মনে। ৭১টি পরিবার স্থানীয় স্কুল ও আশপাশের জমিতে ত্রিপল খাটিয়ে বসবাস করছে। স্কুলে পাকা ঘরের মধ্যে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা শীতের প্রকোপে কিছুটা সুরক্ষা পেলেও ত্রিপলের নীচের বাসিন্দাদের দুর্দশা চরমে।

ধনপতি রবিদাস বলছেন, “কয়েককাঠা জমি ছিল। সেটা আগেই নদীতে গেছে। পরে ভিটেটাও যায়। ওই বাড়ির ইটকাঠ এনে উপরে ত্রিপল দিয়ে তৈরি ঘরে এখন রয়েছি কোনও রকমে। নদীর পাড়ে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া। ঘর থেকে বেরোবার উপায় নেই। সরকারি খাবারও এখন বন্ধ। দুই ছেলে কাজকম্ম করে দিনমজুরের। সেই দিয়েই চলছে। কিন্তু শীতের সময় চাদর কম্বলের অভাব সকলেরই।”

Advertisement

মহেশটোলায় নিজেই পাটকাঠির দেওয়াল গড়ে উপরে টিন দিয়ে ঘর গড়েছেন গুড়িয়া সরকার। বলছেন, “এই শীতে পরিস্থিতি খুবই খারাপ। ৪ মাস থেকে এ ভাবেই আছি। এখন খুব শীত। যে দিন ঘর গেল নদীতে তার দু’দিনের মধ্যেই স্বামীও মারা গিয়েছেন। ভাঙনের সময় অনেকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে গেছিলেন। এখন আর কেউ আসে না তারা। সরকারি চালও বন্ধ।”

স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন বুল্টি সাহা সরকার। বলছেন, “স্কুলের প্রধান শিক্ষক মঙ্গলবার বলে দিয়েছেন স্কুল ছেড়ে চলে যেতে হবে। কিন্তু এই শীতে কোথায় যাব? বিড়ি বেঁধে সংসার চালাই আমরা। জায়গা না দিলে স্কুল ছেড়ে কোথাও যাব না। প্রথম দু’মাস ২৪ কিলো করে চাল দিয়েছিল পঞ্চায়েত। গত তিন মাস সেটাও পাইনি। শীতে ঠান্ডার মধ্যে ছেলে মেয়েরা কিভাবে আছে ভাবা যায় না।”মহাদেব সরকারের পরিবারও রয়েছেন স্কুলে। বলছেন, “স্কুলে বা এলাকায় যারা দুর্গত আছে তাদের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা স্কুলে দেওয়া মিড ডে মিলের খাবারটা খেত দুপুরে খিদের জ্বালায়। তাও দু’দিন থেকে বন্ধ করে দিয়েছেন স্কুলের শিক্ষকেরা। কোথায় যাওয়ার জায়গা থাকলে কি একটা ছোট ঘরে ৬/৭টি পরিবার মিলে কুকুর, বেড়ালের মত পড়ে থাকি? কিছু চাই না। শুধু একটু থাকার জায়গা।” বিডিও কৃষ্ণচন্দ্র মুন্ডা বলছেন,“আমিও বড্ড অসহায়। কোথায় নিয়ে গিয়ে রাখার ব্যবস্থা করব তাঁদের? জানি স্কুলটা ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু অসহায় নিরাশ্রয় মানুষগুলোকে তো জোর করে গলা ধাক্কা দিয়ে করে দিতে পারব না এই শীতের সময়।’’

তবে বুধবার রাজ্য বিধানসভার সেচ দফতরের স্ট্যান্ডিং কমিটির ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল শমসেরগঞ্জে গঙ্গা ভাঙন পরিস্থিতি দেখতে আসেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন সমর কুমার জানা,আব্দুর রহিম কাজি, নীহার রঞ্জন ঘোষ, সত্যনারায়ণ মুখোপাধ্যায় ও দেবেশ নন্দাই। তারা ধুলিয়ানের কাঞ্চনতলা থেকে নৌকো পথে দিঘরি,চাচণ্ড, নিমতিতা পর্যন্ত গ্রামগুলির ভাঙন পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন জেলা সেচ দফতরের একাধিক আধিকারিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.