Advertisement
E-Paper

লড়াই যখন সালিশির বিরুদ্ধেই

যেখানে তাঁরা দল বেঁধে বসেন, সেখানেই শুরু হয় ‘বিচার’। ঝিমদুপুর কিংবা ডুমো বাল্‌বের নীচে গাঁ-গঞ্জের সেই মাতব্বরেরা ঠিক করে দেন কার স্ত্রী কার সঙ্গে থাকবে বা কার যৌবনের মেয়াদ কত, কার ইজ্জত থাকবে, কার যাবে। বেআইনি জেনেও তাঁদের ‘রায়’ মাথা পেতে নিতে হয়। নাহলে অপেক্ষা করে আরও বড় শাস্তি। সালিশির সুলুক-সন্ধানে আনন্দবাজারশরিয়তের বিধান উল্লেখ করে সালিশি সভায় মাতব্বরেরা জানিয়ে দেন, স্বামীর কাছে ফিরতে হলে অন্য পুরুষকে বিয়ে করে তিন মাস কাটিয়ে ফের তালাক নিয়ে ফিরতে হবে। যাকে বলে ‘নিকাহ্ হালালা’।

অনল আবেদিন

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৮ ০২:৩৪

একেবারেই আটপৌরে পারিবারিক অশান্তি। বাড়ির কর্তা রেগে আগুন। সটান রাস্তায় নেমে রাগের মাথায় নানা কথার সঙ্গে সঙ্গে তিনি শুধু এক বার বলে ফেলেছিলেন— ‘তালাক, তালাক, তালাক!’

ব্যাস! ঝড়ের গতিতে সে কথা রটে গেল তামাম এলাকায়।

এ দিকে, যাঁর উদ্দেশে বাড়ির কর্তা রেগে গিয়ে এ সব বললেন, তিনি তখন বাড়িতেই নেই। তিনি নিজে কানে সে কথা শোনেনওনি।

কিন্তু তাতে কী?

চোদ্দো বছরের ছেলে আর বছর বারোর মেয়েকে সঙ্গে করে জঙ্গিপুরের ওই মহিলাকে চলে যেতে হয় তাঁর বাপের বাড়ি। কারণ, তিনি সালিশি সভার সিদ্ধান্ত মানতে চাননি।

বাড়ির কর্তাও পরে ভুল বুঝতে পারেন। ছেলেমেয়ের মুখ চেয়ে তিনিও স্ত্রীর সঙ্গেই সংসার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাদ সাধে গ্রামের সালিশি সভা।

শরিয়তের বিধান উল্লেখ করে সালিশি সভায় মাতব্বরেরা জানিয়ে দেন, স্বামীর কাছে ফিরতে হলে অন্য পুরুষকে বিয়ে করে তিন মাস কাটিয়ে ফের তালাক নিয়ে ফিরতে হবে। যাকে বলে ‘নিকাহ্ হালালা’।

তাতেই বেঁকে বসেন বছর আটত্রিশের ওই মহিলা। তিনি বলছেন, ‘‘প্রথম কথা, আমার স্বামী যে তালাক কথাটা বলেছেন, তা নিজে শুনিনি। দ্বিতীয়ত, সুপ্রিম কোর্ট তাৎক্ষণিক তিন তালাক নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। আমাদের তালাকটাই তো অবৈধ। সেটা শোধরাতে অন্য পুরুষকে নিকাহ্ করতে হবে কেন?’’

এ দিকে, বাড়ির কর্তা চটাতে রাজি নন মাতব্বরদের। তিনি বলছেন, ‘‘শরিয়তে যা আছে আর গ্রামের মাথারা যা বলছেন, আমি তাতেই রাজি।’’ কিন্তু তাঁর স্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘এর শেষ দেখে ছাড়ব।’’

ওই মহিলা পাশে পেয়েছেন একটি সংগঠনের সভানেত্রী খাদিজা বানুকে। খাদিজা বলছেন, ‘‘ওর স্বামী তো সালিশির সিদ্ধান্ত মেনেই নিয়েছেন। ওই মহিলা এখন দুই সন্তান নিয়ে ভাড়া বাড়িতে আলাদা ভাবে থাকছেন। সেলাই-ফোঁড়াই করে সংসার চালাচ্ছেন। লড়াইটা কঠিন। কিন্তু সালিশির এমন রায়ের বিরুদ্ধে ফোঁস করতেও সাহস লাগে। সেই সাহসটাই দেখিয়েছেন ওই মহিলা। এটা কম কথা নয়।’’

গত ফেব্রুয়ারির এই ঘটনা ফের এক বার চোখে আঙুল দেখিয়ে দিল, সালিশির সংখ্যা কমলেও ঝাঁঝ একই থেকে গিয়েছে। সালিশির চেহারা বদলে গেলেও তার দাঁত, নখের ধার বিন্দুমাত্র কমেনি।

(চলবে)

Khap Panchayat Law
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy