Advertisement
E-Paper

উদ্বোধনের পরেও বন্ধ কেন রবীন্দ্রভবন, প্রশ্ন নাগরিকদের

সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে আগেই। তারপর ঢাকঢোল পিটিয়ে কৃষ্ণনগরের রবীন্দ্রভবন উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বছর ৮ অগস্ট সেখানে প্রশাসনিক বৈঠকও করেছিলেন তিনি। তারপরেও সেখানে একের পর এক অনুষ্ঠান করছে প্রশাসন ও শাসক দলের লোকজন। অথচ শহরের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর জন্য রবীন্দ্রভবনের দরজা এখনও বন্ধ। আর সেই কারণেই রীতিমতো ক্ষুব্ধ শহরের সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৫ ০০:১৯
কবে খুলবে রবীন্দ্রভবন, অপেক্ষায় শহর। কৃষ্ণনগরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

কবে খুলবে রবীন্দ্রভবন, অপেক্ষায় শহর। কৃষ্ণনগরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে আগেই। তারপর ঢাকঢোল পিটিয়ে কৃষ্ণনগরের রবীন্দ্রভবন উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বছর ৮ অগস্ট সেখানে প্রশাসনিক বৈঠকও করেছিলেন তিনি। তারপরেও সেখানে একের পর এক অনুষ্ঠান করছে প্রশাসন ও শাসক দলের লোকজন। অথচ শহরের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর জন্য রবীন্দ্রভবনের দরজা এখনও বন্ধ। আর সেই কারণেই রীতিমতো ক্ষুব্ধ শহরের সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ। প্রশ্ন উঠছে, মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করার পরে যেখানে সরকারি অনুষ্ঠান হচ্ছে, শাসক দলের সম্মলেন হচ্ছে। সেখানে অন্যদের ক্ষেত্রে বাধাটা কোথায়? জেলা প্রশাসনের তরফে এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর মেলেনি।

১৯৬১ সালে রাজ্যের অন্য জেলা সদর শহরের মতো কৃষ্ণনগরেও রবীন্দ্রভবন তৈরির পরিকল্পা করা হয়। সেই মতো কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজের জমিতে তৈরি হয় এই রবীন্দ্রভবন। প্রথম দিকে কলেজ কর্তৃপক্ষের হাতেই যাবতীয় দায়িত্ব ছিল। পরে একটি পরিচালন কমিটি তৈরি করা হয়। এর কয়েক বছর পরে এই রবীন্দ্রভবনের কর্তৃত্ব ও পরিচালনা ভার দেওয়া হয় জেলার তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের হাতে। পরে রবীন্দ্রভবনের তেমন কোনও সংস্কার করা হয়নি। মঞ্চ, আলো, শব্দ থেকে বসার জায়গার মান ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। তারপরেই রবীন্দ্রভবন সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ভবন সংস্কারের জন্য প্রায় ৩ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে পাঠানো সংশ্লিষ্ট দফতরে। পরে আরও ২৮ লক্ষ টাকার নানা কাজ যোগ হয়। সেই প্রকল্প অনুমোদের পরে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রবীন্দ্রভবন সংস্কারের তৈরির কাজ শুরু হয়। ওই বছরেই ২৭ জানুয়ারি রবীন্দ্রভবনে শেষ নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। তারপর থেকে এই মঞ্চ আর কোনও সংস্থা ব্যবহার করতে পারেনি। জেলা প্রশাসনের বিশেষ অনুমতি নিয়ে দু’একটি সংস্থা তাদের অনুষ্ঠান করতে পারলেও বাকিদের কপালে তা জোটেনি।

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, মোট খরচের ৬০ শতাংশ দেওয়ার কথা কেন্দ্র সরকারের ও ৪০ শতাংশ দেওয়ার কথা রাজ্য সরকারের। সেই মতো এখনও পর্যন্ত কেন্দ্র সরকার ১ কোটি টাকা দিয়েছে। আর রাজ্য সরকার তার ভাগের ১ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকার পুরোটাই দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র সরকার এখনও পর্যন্ত বাকি টাকা দেয় নি। ফলে টাকা নিয়ে একটা জটিলতা তৈরি হয়েছে। এখনও ঠিকাদাররা টাকা না পাওয়ায় তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের কাছে রবীন্দ্রভবন হস্তান্তর করার বিষয়টি আটকে রয়েছে। সেই কারণেই রবীন্দ্রভবন এখনই সকলের জন্য খুলে দেওয়া যাচ্ছে না।

রবীন্দ্রভবনে আগে ৬২০টি আসন ছিল। এখন সেই সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩৫। সংস্কারের পরে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত রবীন্দ্রভবনে অত্যাধুনিক আলো ও শব্দের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ফলে এমন একটি উন্নত মানের প্রেক্ষাগৃহে অভিনয় করার জন্য মুখিয়ে আছেন শহরের শিল্পীরা। এত দিন পরে ভাল নাটক দেখার জন্যও অপেক্ষায় আছেন শহরের মানুষ। শহরের মানুষকে নিয়মিত নাটক দেখানোর জন্য এলাকার নাট্যদলগুলি ‘নাট্যবন্ধু’ নামে একটি মঞ্চ তৈরি করে। তারা প্রতি মাসের শেষ শনিবার রবীন্দ্রভবনে একটি করে নাটক মঞ্চস্থ করাতো। শেষ বার তাদেরই নাটক মঞ্চস্থ হয়। নাট্যবন্ধুর অন্যতম কর্ণধার তৃষিত মৈত্র জানান, রবীন্দ্রভবন না পাওয়ার কারণে শহরের নাট্যচর্চা প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। বন্ধ হয়ে আছে নাট্যোৎসব। কোনও কোনও নাট্য সংস্থা পুরসভার দ্বিজেন্দ্র মঞ্চে নাটক করছে। কিন্তু ওই মঞ্চ এতটাই ছোট যে সেখানে বড় মানের নাট্যোৎসব করা সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, ‘‘অনেকে কলকাতা বা অন্যত্র মোটা টাকা খরচ করে অনুষ্ঠান করছেন। কিন্তু তাতে শহরের মানুষের তো নাটক থেকে বঞ্চিত থাকছেন। রবীন্দ্রভবন বন্ধ থাকায় আমরা সত্যিই খুব হতাশ।’’

কৃষ্ণনগর সাংস্কৃতিক মঞ্চের সম্পাদক শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায়জানান, রবীন্দ্রভবন সংস্কারের পরে মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করে গিয়েছেন প্রায় এক বছর আগে। অথচ এখনও সাধারণ মানুষের জন্য রবীন্দ্রভবনের দরজা বন্ধই থেকে গেল। তাহলে কেন তড়িঘড়ি ঘটা করে উদ্বোধন করতে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী? রবীন্দ্রভবন সংস্কারের দায়িত্বে থাকা জেলা গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রকল্প অধিকর্তা সুপর্ণ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘নির্মাণ সংস্থাটির বকেয়া টাকা আটকে থাকায় রবীন্দ্রভবন হস্তান্তরের ক্ষেত্রে একটা সমস্যা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যার সমাধান করে সকলের জন্য রবীন্দ্রভবনের দরজা খুলে দিতে।’’

sushmit haldar krishnanagar rabindra bhavan trinamool tmc mamata bandopadhyay chief minister
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy