দ্বিতীয় সন্তানের পরেই বন্ধ্যাকরণ হয়েছিল তাঁর। পরিবারের সকলের সম্মতিতে ২০১৭ সালের ১৫ মে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে লাইগেশন করানো হয় মহিলার। কিন্তু বছর ঘুরতেই দেখা যায় ফের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন তিনি। প্রসূতির সব লক্ষণ নিয়েই হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে গেলে জানতে পারেন, অন্তত সাড়ে চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা তিনি।
চিকিৎসকেরা জানান, প্রথম দু’টি সন্তানই তাঁর সিজার করে হয়েছিল। তৃতীয় সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে যে ঝুঁকি রয়েছে তা-ও জানিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। সব দিক বিবেচনা করে গত ২১ জুন জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে তাঁর গর্ভপাত করানোই শ্রেয় মনে করেন বাড়ির লোক।
ওই মহিলার স্বামী বলেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালের উপরে ভরসা রেখেই আমার স্ত্রীর লাইগেশন করানো হয়েছিল। কি লাভ হল! এর পরে আর সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আস্থা থাকে?’’ যে চিকিৎসক ওই মহিলার বন্ধ্যাকরণ করিয়েছিলেন তাঁর বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য দফতরে অভিযোগও দায়ের করেছেন মহিলার স্বামী। ক্ষতিপূরণ চেয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে লিখিত অভিযোগও জানিয়েছেন তিনি। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস জানিয়েছেন, অভিযোগ পেয়েছেন তিনি। তাঁর পরামর্শেই মহিলার স্বামী আর্থিক ক্ষতিপূরণের জন্য জেলা স্বাস্থ্য দফতরের সংশ্লিষ্ট কার্যলয়ে লিখিত আবেদন করেছেন বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
মহিলার স্বামীর ওষুধের ব্যবসা। তিনি বলেন, ‘‘ব্যবসার সূত্রেই বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে আলাপ রয়েছে আমার। যে চিকিৎসক লাইগেশন বা বন্ধ্যাকরণ করেছিলেন তাঁকেও ব্যক্তিগত ভাবে চিনি। তবে মজার ব্যাপার, যে চিকিৎসকের কাছে আমার স্ত্রীর অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল এখন হাসপাতালের কাগজ পত্র খতিয়ে দেখে জানতে পারছি অস্ত্রোপচার তিনি করেননি। করেছেন অন্যজন। এ ঘটনাও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, কী ভয়ানক অব্যবস্থা চলছে সরকারি হাসপাতালে।’’
অভিযুক্ত চিকিৎসক অবশ্য বলেছেন, ‘‘এ ব্যাপারে যা বলার মুখ্য স্বাস্থ্যআধিকারিককে জানিয়েছি। আর কিছু বলব না।’’ তবে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের এক স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ বলছেন, ‘‘চিকিৎসাশাস্ত্র বলছে, স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য অস্ত্রোপচারের পরেও অনেক সময়ে অন্তঃসস্ত্বা হয়ে পড়েন অনেকে। এটা একেবারে নজিরবিহীন ঘটনা বলা যাবে না।’’ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘এক চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি হলেও পরিস্থিতির প্রয়োজনে অন্য কোনও চিকিৎসক ওই রোগীর চিকিৎসা করতে পারেন। এটা কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। তবে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে ওই মহিলা ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন।’’