Advertisement
E-Paper

উজাড় হচ্ছে সংসার, ঠেক ভাঙলেন মেয়েরা

চিত্রা মাঝি আজও ভুলতে পারেন না ছেলের মুখটা। স্বামী-ভাসুর তিলে-তিলে মারা গিয়েছেন মদের নেশায়। বহু চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারেননি। নেশা কেড়ে নিয়েছে বছর সতেরোর ছেলে গুঞ্জনকেও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৩৪
মদের ঠেক ঘিরে বিক্ষোভ মহিলাদের। —নিজস্ব চিত্র

মদের ঠেক ঘিরে বিক্ষোভ মহিলাদের। —নিজস্ব চিত্র

চিত্রা মাঝি আজও ভুলতে পারেন না ছেলের মুখটা। স্বামী-ভাসুর তিলে-তিলে মারা গিয়েছেন মদের নেশায়। বহু চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারেননি। নেশা কেড়ে নিয়েছে বছর সতেরোর ছেলে গুঞ্জনকেও।

শুধু তো চিত্রা নন। ঘরে-ঘরে এমন কত মা-বৌ। মাতাল স্বামীর হাতে কেউ রোজ মার খান। কারও ঘর উজাড় হয়ে গিয়েছে। এ বার তাই লাঠি হাতে পথে নামলেন কয়েকশো মহিলা। একের পর এক হানা দিলেন মদের ভাটিতে। তাঁদের রণংদেহি মুর্তি দেখে কেউ পিঠটান দিল, কেউ ‘আর করব না’ বলে প্রতিজ্ঞা করে রেহাই পেল এ যাত্রা।

রঘুনাথগঞ্জ ব্লকের মণ্ডলপুর গ্রামে অন্তত ২০টি বাড়িতে চোলাইয়ের কারবার চলে। বিকেল থেকেই মদ্যপ লোকজনের আনাগোনা। রাত পর্যন্ত চলে হুল্লোড়। অনেকেই বাধা দিতে গিয়ে গালি খেয়ে ফিরেছেন। ভাটি বন্ধ করা যায়নি। বাড়ির পুরুষদেরও সামলে রাখা যায়নি।

চিত্রা বলেন, “ছেলেকে বহু বুঝিয়েছি। কিন্তু পারিনি। ও বাবা-কাকার পরিণতি দেখে বুঝবে, ভরসা ছিল আমার। এক বার কথাও দিয়েছিল, কখনও মদ খাবে না। কিন্তু সঙ্গদোষ কাটানো যায়নি।” বকাঝকা করলে দু’দিন বন্ধ থাকত নেশা। তার পরে আবার যে-কে-সেই। শেষ পর্যন্ত নাবালক দড়ির ফাঁসে ছেলের ঝুলন্ত মৃতদেহ দেখতে হয়েছে মা চিত্রাকে।

বছর পঁয়ত্রিশের পবিত্র মণ্ডলের জীবনেও কাল হয়েছে নেশা। তিন সপ্তাহও কাটেনি তাঁর মৃত্যুর। বাসে খালাসির কাজ করতেন। সংসার চলত কোনও রকমে। নেশা করে বাড়িতে অশান্তি চরমে। দড়ির ফাঁসে মেলে তাঁরও দেহ। এখন সংসার চালাতে ভরসা নাবালক ছেলে বুবাই। তার আক্ষেপ, “বাবাকে কত যে বুঝিয়েছি, নেশা ছাড়ানো যায়নি। সেই নেশার ঘোরেই জীবনটা গেল।’’

ঘরে-ঘরে এই একই দৃশ্য। সংসার সামাল দিতে গ্রামের মহিলারা এক ডজন স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে তুলেছেন। কেউ বাগানে কাজ করছেন, কেউ মুড়ি ভেজে বিক্রি করছেন।

চাঁদপুর স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নেত্রী জ্যোৎস্না মণ্ডল বলেন, “একটি পাড়ায় গত ছ’মাসে অন্তত পাঁচ জন নেশার কবলে পড়ে মারা গিয়েছেন। সকলেই দিনমজুর। ঠিক মতো খাবার জোটে না। অথচ রোজগারের অর্ধেক যায় ভাটিখানায়। কত দিন চোখের সামনে দেখব?”

জ্যোৎস্নার আক্ষেপ, গ্রামের ১৫-১৬ বছরের ছেলেরা, যাদের অনেকেই স্কুলে পড়ে, তারা নেশা করে মাকে পেটাচ্ছে। বাবাকে গালাগালি করছে। এক গোষ্ঠীর সম্পাদক সোহাগী মণ্ডল বলেন, “দু’টি পাড়ায় মদের রমরমা। একটিতে চোলাই তৈরি হয় ভাটি বানিয়ে। একটিতে বাইরে থেকে কিনে এনে বিক্রি হচ্ছে। সেই নেশার আগুনে পুড়ছে গোটা গ্রাম।”

রঘুনাথগঞ্জের আবগারি দফতরের ওসি প্রভাত মুখোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, “দু’সপ্তাহ আগেও মণ্ডলপুরে হানা দিয়েছি আমরা। কিছু পাইনি। পরে শুনলাম, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর বাধায় কাজ হয়েছে।” তা হলে আর আবগারি কর্তাদের কী দরকার?

Women broke liquor shops Raghunathganj
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy