ফাইল চিত্র।
আর ক’দিন পরেই এলাকায় বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে আজ, সোমবার বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি-সহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনায় বসছে জঙ্গিপুরের বিড়ি মালিক এবং শ্রমিক সংগঠনগুলি। জঙ্গিপুর মহকুমার প্রায় সাত লক্ষ বিড়ি শ্রমিক চেয়ে আছেন বৈঠকের ফলাফলের দিকে।
এর আগে রাজ্যের শ্রম প্রতিমন্ত্রীর হাতে শ্রমিক সংগঠনগুলি দু’বার মজুরি বৃদ্ধি সংক্রান্ত দাবিপত্র তুলে দিয়েছিল। শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না বিড়ি মালিকদের ডেকে পাঠিয়ে তাঁদের সঙ্গে সমস্যা নিয়ে আলোচনাও করেন। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে মজুরি বৃদ্ধির দাবির মীমাংসা করতে পরামর্শ দেন তিনি। সেই মতো মালিক সংগঠনের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল শ্রমিক সংগঠনগুলিকে। তাতে ২০ সেপ্টেম্বর আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
সিটুর বিড়ি শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতি মহম্মদ আজাদ আলি বলেন, “শ্রমিকদের সরকার নির্দিষ্ট হারে ২৬৮ টাকা ন্যূনতম মজুরির দাবি জানানো হবে বৈঠকে। বর্তমানে শ্রমিকরা মজুরি পান ১৫২ টাকা। ২০১৭ সালের চুক্তি অনুযায়ী ওই টাকা তাঁরা পান। তারপর থেকে সাড়ে তিন বছর অতিক্রান্ত। অথচ মজুরি আটকে আছে একই জায়গায়।’’ তাঁর অভিযোগ, সেই টাকাও মজুরি হিসেবে দেওয়া হচ্ছে না বহু জায়গায়। এ নিয়ে গত দু’মাস ধরে আন্দোলন চালাচ্ছিল সিটু-সহ ছ’টি সংগঠন। বৈঠকে যাওয়ার আগে আইএনটিইউসি-সহ ছ’টি ইউনিয়নের যৌথ কমিটি আলোচনা করে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবে। নির্বাচনের আগেই যাতে মজুরি বাড়ে, সেই দাবি জানাবেন শ্রমিক নেতারা। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে শেষবার মজুরি বেড়েছিল শ্রমিকদের। প্রতি হাজার টাকায় ২৬ টাকা করে। সেই সময় মজুরি বেড়ে হয় ১৫২ টাকা। জঙ্গিপুর মহকুমায় প্রায় সাত লক্ষ বিড়ি শ্রমিক রয়েছেন। জঙ্গিপুর ও শমসেরগঞ্জেও লক্ষাধিক বিড়ি শ্রমিক রয়েছেন, যাঁদের ভোট বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে দুই কেন্দ্রে। তবে অভিযোগ, বিড়ি শ্রমিকরা সরকারি হারে ন্যূনতম মজুরি কোনও সময়েই পান না। ১৯৯১ সাল থেকে এভাবে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে মজুরি বেড়েছে তাঁদের। বাম আমলে ২০১০ সাল পর্যন্ত অবশ্য এই মজুরি চুক্তি হত জেলা প্রশাসনের মধ্যস্থতায়। ২০১১ সালে রাজ্যে নতুন সরকার আসার পর এ ধরনের মজুরি-চুক্তির বিরোধিতা করে প্রশাসনকে তা থেকে সরিয়ে আনা হয়েছিল।
তারপর থেকে শ্রমিক ও মালিক সংগঠনগুলি নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে তিন বার মজুরি বাড়িয়েছে। বর্তমানে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি মতোই ১৫২ টাকা হারে মজুরি হাতে পাচ্ছেন বিড়ি শ্রমিকরা।
সম্প্রতি শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বিড়ি শ্রমিক সংগঠনগুলির বৈঠক হয় জঙ্গিপুরে মহকুমাশাসকের দফতরে। সেই বৈঠকে ১৩টি শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি সরকার নির্দিষ্ট ন্যূনতম হারে বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার দাবি তোলেন। শ্রম প্রতিমন্ত্রী বৈঠক ডাকার আশ্বাস ছাড়া অবশ্য কোনও প্রতিশ্রুতিই দিয়ে যেতে পারেননি
সেই সময়। সেই কারণেই আজ বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হয়, মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে ইতিবাচক কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কি না, সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে কয়েক লক্ষ শ্রমিকের পরিবার।
এ বার নির্বাচনে বিড়ি শ্রমিকদের সমস্যা বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে। শনিবারই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক জঙ্গিপুরে এসেছিলেন ভোটের প্রচারে। বিড়ি শ্রমিকদের সরকারি হারে মজুরি না পাওয়ার ‘দায়’ চাপিয়েছেন রাজ্য সরকারের ওপর। বিড়ি শিল্পে অচলাবস্থা কাটাতে রাজ্যকে বিড়ির ওপর ধার্য্য জিএসটি থেকে পাওয়া অর্থ শ্রমিক স্বার্থে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি। তবে রাজ্যের প্রাক্তন শ্রমমন্ত্রী ও বিড়ি মালিক জাকির হোসেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ওই প্রস্তাব রবিবার ‘অবাস্তব’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। জাকির বলেন, “বিড়ি শিল্পের সমস্যা নিয়ে তিনি (নিশীথ) যথাযথ ওয়াকিবহাল নন বলেই এ কথা বলেছেন।”
অরঙ্গাবাদ বিড়ি মালিক সমিতির সম্পাদক রাজকুমার জৈন জানান, প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে শ্রমিক ইউনিয়নগুলির সঙ্গে কোনও চুক্তি হয়নি। সেই কারণেই বিড়ি মালিকরা মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে নতুন আইন কার্যকর হলে বিড়ি শিল্প ধংসের মুখে পড়বে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy