কেয়া ছিল সাকুল্যে তিনশো টাকা। আর সেই টাকা না পেয়ে বন্ধুকে খুনের অভিযোগ উঠল এক যুবকের বিরুদ্ধে। বুধবার নিহত হানিফ শেখের (২৪) পরিবার মহরম শেখের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ ছিলেন মুর্শিদাবাদের টিকিটিকিপাড়া গ্রামের হানিফ। বুধবার সকালে বাড়ি থেকে পৌনে এক কিলোমিটার দূরে একটা কলাবাগান থেকে তাঁর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার কর হয়। ধারাল অস্ত্রের আঘাতে নিহতের পেট এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে গিয়েছে। কপালেও রয়েছে ধারাল অস্ত্রের ক্ষত। ঘটনার পর থেকেই সপরিবার পলাতক টিকিটিকিপাড়ার বাসিন্দা অভিযুক্ত মহরম শেখ।
খুব সামান্য ঘটনা নিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলায় খুন-জখম কোনও নতুন ঘটনা নয়। সম্প্রতি পমাইপুরে বাড়ির সামনে মোবাইলে গেম খেলছিল এক কিশোরী। অভিযোগ, পড়শি দুই নাবালক খেলতে খেলতে তাকে নানা ভাবে বিরক্ত করে। বাবার কাছে মেয়েটি নালিশ জানায়। মেয়ের মুখে সব শুনে পড়শির বাড়িতে প্রতিবাদ করতে গিয়ে খুন হন নজরুল শেখ নামে এক যুবক।
দিনকয়েক আগে রানিনগরে গোটা কয়েক সজনে ডাঁটার জন্য দুই পরিবারের গণ্ডগোল ও মারামারি হয়। জখম হন বেশ কয়েক জন। বছর কয়েক আগে শম্ভুনগরে বেড়া টপকে মুরগি চলে গিয়েছিল পড়শির বাড়িতে। সেখানে তাড়া খেয়ে পালাতে গিয়ে মুরগির পায়ে চোট লাগে। সেই নিয়ে তুমুল গণ্ডগোল এবং খুন। ইসলামপুর থানার নসিপুরেও এক বাড়ির মুরগি গিয়ে ডিম পেড়েছিল পাশের বাড়ির গোয়ালঘরে। তা নিয়েও বাধে তুলকালাম। শেষতক খুন। কুপিলাতেও জমির আলে পড়া এক সজনে গাছের দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে খুন হন এক প্রৌঢ়। বিশ্বাসপাড়ায় নলকূপের জল কোন দিক দিয়ে যাবে তা নিয়েও গণ্ডগোলের জেরে খুনের ঘটনা ঘটে।
টিকটিকিপাড়ার মহরম ও হানিফের বন্ধুত্ব দীর্ঘ দিনের। বছর খানেক আগে মহরমের একটি পুরনো সাইকেল কেনেন হানিফ। হানিফের দাদা রাজকুমার শেখ বলেন, ‘‘বকেয়া ৩০০ টাকা না দিয়েই ভাই অন্য রাজ্যে দিনমজুরের কাজে চলে যায়। বাইরে যাওয়ার আগে সাইকেলটি ভাই অন্য লোকের কাছে বিক্রি করে।’’ মাস দেড়েক আগে হানিফের বাবা মারা যান। মৃত্যুর খবর পেয়ে হানিফও বাড়ি ফেরেন।গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, ওই সাইকেলের বকেয়া টাকার জন্য হানিফকে চাপ দেয় মহরম। হানিফের মেজদা মিরাজুল শেখের অভিযোগ, ‘‘মহরমকে বলেছিলাম, বাবা মারা গিয়েছে। কিছু দিন সময় দাও। টাকা মিটিয়ে দেব। তার পরেও মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বার তিনেক মহরম বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাই-এর খোঁজ করে। খুনের হমকি দেয়। ভাই তখন বাড়িতে ছিল না। রাতেও আর ফেরেনি।’’ হানিফের মা ফতেমা বেওয়া বলেন, ‘‘আমার স্বামীর সাইকেলটাই মহরমকে দিতে চেয়েছিলাম। সেই সাইকেল না নিয়ে আমার ছেলেকেই শেষ করে দিল।’’
মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লালবাগ) অংশুমান সাহা বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি, সাইকেলের টাকা নিয়েই বিবাদ। অন্য কোনও কারণ আছে কি না সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশিও চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy