Advertisement
E-Paper

অব্যবস্থাকে সঙ্গী করেই হাজারদুয়ারি জমজমাট

বড়দিনের ছুটিতে জমজমাট মুর্শিদাবাদ। নবাবি আমলের শহরে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। শনিবার থেকে শুরু হয়েছে আনাগোনা। হোটেলে, অতিথি নিবাসে কোথাও এখন তিলধারণের জায়গা নেই। উৎসবের মেজাজ শীতের হাওয়াতেও। বাতাসে নলেন গুড়ের গন্ধ, খেজুর গাছে বাঁধা রসের হাঁড়িতে ঠোঁট ভেজানো পাখ-পাখালির ডাক, ধূ-ধূ মাঠ জুড়ে হলুদ হয়ে ফুটে থাকা সর্ষে খেত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০৯

বড়দিনের ছুটিতে জমজমাট মুর্শিদাবাদ। নবাবি আমলের শহরে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। শনিবার থেকে শুরু হয়েছে আনাগোনা। হোটেলে, অতিথি নিবাসে কোথাও এখন তিলধারণের জায়গা নেই।

উৎসবের মেজাজ শীতের হাওয়াতেও। বাতাসে নলেন গুড়ের গন্ধ, খেজুর গাছে বাঁধা রসের হাঁড়িতে ঠোঁট ভেজানো পাখ-পাখালির ডাক, ধূ-ধূ মাঠ জুড়ে হলুদ হয়ে ফুটে থাকা সর্ষে খেত। ধুলো ওড়া রাস্তা ধরে পর্যটকদের গাড়ির সারি ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ের খোশবাগের রাস্তায়। যদিও মুর্শিদাবাদে ফুড ফেস্টিভ্যাল নেই, প্যারাগ্লাইডিং নেই, টয়ট্রেন নেই। শুধু হাজারদুয়ারি প্রাসাদ ও সংগ্রহশালার টানে প্রতি বছর কয়েক লক্ষ দেশ-বিদেশের পর্যটক ভিড় করেন। তাই মরসুম শুরুর আশায় বুক বাঁধেন এলাকার ব্যবসায়ীরা।

হাজারদুয়ারি সংগ্রহশালা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত চার দিনে ৪০ হাজারেরও বেশি পর্যটক সংগ্রহশালা দর্শন করেন। তবে নিছক বেড়াতে আসা পর্যটকের সংখ্যা তার তিন গুণ। বড় দিন উপলক্ষে রং-বেরংয়ের আলোয় আর রাস্তার ধারে থরে-থরে সাজানো কেক। পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান পশরায় ভরে উঠেছে। হাতে তৈরির জিনিসপত্র বিকিকিনির জন্যও সাজানো হয়েছে।

লালবাগ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, “প্রশাসনিক গাফিলতিতেই লালবাগে পর্যটন শিল্পের কোনও উন্নয়ন নেই। ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ে খোশবাগ থেকে রানি ভবানির মন্দির-সহ বিভিন্ন স্মারক ঘুরে দেখার মত পরিবহণ ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠেনি। এর প্রভাব পড়ছে জেলার অর্থনীতিতে।” প্রশাসন মুখ ফিরিয়ে থাকলে পর্যটকরা লালবাগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে বলেও ব্যবসায়ী মহলের আশঙ্কা।

কারণ পর্যটকদের যে স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়া উচিত, তার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। যেমন হাজারদুয়ারি চত্বরে পানীয় জলের কোনও ব্যবস্থা নেই। প্রয়োজনীয় শৌচাগারের অভাবও রয়েছে লালবাগে। জলের অভাব মেটাতে হাজারদুয়ারি চত্বরে ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে পর্যটক সহায়তা কেন্দ্র। ওই কেন্দ্র থেকে বিলি করা হবে পানীয় জলের পাউচ প্যাকেট। প্রাথমিক চিকিৎসা পরিষেবা, যান নিয়ন্ত্রণ বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে নিয়োগ করা হয়েছে বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক।

তবে পর্যটকরা সবচেয়ে হতাশ হাজারদুয়ারি কেল্লা চত্বরে নোংরা-আবর্জনার স্তূপ দেখে। বিষয়টি মানছেন মুর্শিদাবাদ পুরসভার কাউন্সিলর কংগ্রেসের বিপ্লব চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, “পুরসভা পরিচালনার জন্য ২০১৩-১৪ সালে প্রায় ৭২ কোটি টাকার বাজেট তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার কোনও অর্থ দেয়নি। এক খাতের টাকা অন্য খাতে খরচের ব্যাপারেও জেলা প্রশাসনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এই আর্থিক সঙ্কটের কারণে নিয়মিত বেতন না পেয়ে পুরসভার সাফাই কর্মীদের কাজের প্রতি অনীহা তৈরি হয়েছে। তার দায় প্রশাসনের।”

তা সত্ত্বেও পর্যটকদের ভিড় সামাল দিতে হিমশিম অবস্থা বহরমপুর ও লালবাগের বিভিন্ন হোটেল কর্তৃপক্ষের। লালদিঘির এক হোটেল মালিক চন্দন সরকার বলেন, “নতুন বছরের সূচনা দিন পর্যন্ত হোটেলের কোনও ঘর ফাঁকা নেই। অনেক আগে থেকেই হোটেলের ঘর বুকিং হয়ে গিয়েছে।” বহরমপুর-জলঙ্গি রাজ্য সড়কের ধারে অন্য এক হোটেল মালিক রাম সাহা বলেন, “হোটেলের ঘর ফাঁকা না থাকায় অনেক পর্যটকদের ফিরিয়ে দিতে হয়েছে।”

এদিকে বহিরাগত কোনও পর্যটক লালবাগ স্টেশন থেকে নেমে হোটেলে যাবেন, তার কোনও ব্যবস্থা নেই। স্টেশন চত্বরে রিকশা বা টাঙ্গা রয়েছে। কিন্তু তারা কেউই সঠিক ভাড়া নেয় না। সেই সঙ্গে এক শ্রেণির হোটেলের গুণগত মানও ভাল নয়। পর্যটন মরসুমে ঘরভাড়াও বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায় বলেও অভিযোগ। স্থানীয় ইতিহাস গবেষক রামপ্রসাদ পাল বলেন, “ঠিক মতো অতিথি আপ্যায়ন পেলে পর্যটকরা মুর্শিদাবাদে বেড়াতে আসার যে বাড়তি আগ্রহ দেখাবেন, সেই ভাবনা থেকেই শত যোজন দূরে প্রশাসন থেকে একশ্রেণির ব্যবসায়ী। অবিলম্বে ওই মানসিকতার বদল দরকার।”

২০১৩ সালের ডিসেম্বরে হাজারদুয়ারি দেখার জন্য প্রায় লক্ষাধিক পর্যটক টিকিট কেটেছেন বলে জানা গিয়েছে। এ দিনও লালবাগে পর্যটকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। হাজারদুয়ারি গেটের মুখে লম্বা লাইনে অপেক্ষারত পর্যটকদের মাথার মিছিল। দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা অতসী নন্দা গোস্বামী বলেন, “দিন ফুরোলে লালবাগে মনোরঞ্জনের কোনও ব্যবস্থা নেই। সন্ধ্যার পরে ঘুরে দেখারও কিছু নেই। ফলে অন্ধকার নামলেই হোটেলের ঘরে বসে টিভি দেখে কাটানো ছাড়া করণীয় কিছুই নেই।” হাজারদুয়ারিকে ঘিরে লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের বিষয়টিও দীর্ঘদিন ঝুলে রয়েছে, এই আক্ষেপ অনেকেরই।

এই অবস্থায় পর্যটকদের দিকে তাকিয়ে গত ২০ ডিসেম্বর থেকে বান্ধব সমিতি ময়দানে শুরু হয়েছে মুর্শিদাবাদ বইমেলা। বইমেলা কমিটির সম্পাদক শুভাশিস পাল বলেন, “এই সময়ে বইমেলা আয়োজন করার উদ্দেশ্য সন্ধ্যার পরে যাতে পর্যটকরা বইমেলায় ঘুরে আনন্দ পান। এ বারের বইমেলায় কলকাতা ও জেলার বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থার ৫১টি বইয়ের স্টল রয়েছে।”

hazarduari murshidabad
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy