আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা তরুণীকে গণধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হল পড়শি দুই যুবক। গণধর্ষণের জেরে নদিয়ার নাকাশিপাড়া থানার যুগনীতলা গ্রামের গুরুতর অসুস্থ ওই তরুণীর গর্ভেই মৃত্যু হয়েছে সন্তানের। শনিবার সকালে কল্যাণীর জওহরলাল নেহেরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে তাঁর গর্ভপাত করানো হয়।
নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র জানান, শুক্রবার রাতে অভিযোগ পাওয়ার পরেই সঞ্জয় সরকার নামে পড়শি এক যুবককে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সাইকেল সারানোর দোকান আছে তার। সঞ্জয়কে জেরা করে শনিবার স্বপন মণ্ডল নামে গ্রামের আর এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে দিনমজুর। ঘটনার সময় দু’জনেই মদ্যপ অবস্থায় ছিল বলে অভিযোগ।
বছর চারেক আগে বিহারের এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ধর্ষিতা তরুণীর। প্রায় আড়াই বছর আগে বিবাহ-বিচ্ছেদ হওয়ার পর অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ওই তরুণী বাপের বাড়ি ফিরে আসেন। সেখানে তিনি একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। মায়ের কাছে থাকতেন ওই তরুণী। পরে মায়ের মৃত্যু হলে শিশুপুত্রকে নিয়ে একাই থাকতেন। তাঁর দাদা কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। প্রতিবেশীদের কাছে চেয়ে-চিন্তে দিন কাটত কোনও রকমে। প্রায় আট মাস আগে বিবাহ-বিচ্ছিন্না ওই তরুণী আবার অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে গ্রামে গুঞ্জন ওঠে।
২৭ মার্চ, বৃহস্পতিবার অগ্রদ্বীপ মেলায় গিয়েছিলেন গ্রামের অধিকাংশ লোকজন। অভিযোগ, সেই সুযোগে রাতে অন্তঃসত্ত্বা তরুণীর বাড়িতে ঢুকে গ্রামেরই সঞ্জয় ও স্বপন গণধর্ষণ করে। শুক্রবার দিনভর তরুণীর সাড়াশব্দ না পেয়ে সন্ধ্যাবেলা এক পড়শি খোঁজ করতে আসেন। ভিতর ঘরে রক্তাক্ত অবস্থায় তরুণীকে পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। তরুণী ওই পড়শিকে ঘটনাটি খুলে বলেন। কিছু দূরে মেয়েটির মামার বাড়িতে গিয়ে তখন খবর দেন ওই পড়শি। তাঁর কথায়, ‘‘শুক্রবার রাতে গিয়ে দেখি মেঝের উপরে শুয়ে আছে অসুস্থ মেয়েটি। মাটির মেঝেতে চাপ চাপ রক্ত। কথা বলার মতো শক্তি নেই। বাচ্চা ছেলেটাও সারা দিন না খেয়ে প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে ছিল মায়ের পাশে।’’
মামার বাড়ির লোকেদের সঙ্গে রাতেই নাকাশিপাড়া থানায় আসেন অসুস্থ ওই তরুণী। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বেথুয়াডহরি গ্রামীণ হাসপাতালে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁকে কৃষ্ণনগরে জেলা সদর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। পরে অবস্থার আরও অবনতি হলে ভোরবেলা তাঁকে কল্যাণীর জওহরলাল নেহেরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে পাঠানো হয়। ততক্ষণে গর্ভস্থ সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে হাসপাতালে ওই তরুণীর গর্ভপাত করানো হয়। হাসপাতালের সুপার ভানুরঞ্জন ঘোষ বলেন, “ওই প্রসূতির গর্ভপাত করানো হয়েছে। শারীরিক অবস্থা এখন তুলনায় স্থিতিশীল। আমাদের সতর্ক নজর রয়েছে। চিকিৎসা চলছে।”
এ দিকে, মর্মান্তিক এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে যুগনীতলায়। গ্রামের এক বধূ বলেন, “ওই তরুণী ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে একাই থাকতেন। বাড়িটাও একটু ফাঁকা জায়গায়। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর সামাজিক ভাবে আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল ও। সেই সুযোগটাই নিল গ্রামের ছেলেরা।” বেথুয়াডহরি ১ পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান মনোরঞ্জন মালাকার বলেন, “দোষীদের যেন চরম শাস্তি হয়। যে ভাবে এলাকায় নেশার প্রকোপ বাড়ছে, তাতে চিন্তায় পড়েছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy