Advertisement
E-Paper

একযুগ পরে নবদ্বীপে ফের শুরু হল সংস্কৃত ভাষাচর্চার কেন্দ্র

বারো বছর অর্থাৎ একযুগ পার করে নবদ্বীপের রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত মহাবিদ্যালয় প্রাঙ্গণ আবার মুখর হয়ে উঠল সংস্কৃত ভাষা চর্চায়। ২০০২ সালে এই প্রতিষ্ঠানের শেষ এবং একমাত্র অধ্যাপকের মৃত্যুর পর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সংস্কৃতের পঠন পাঠন। ১২ বছর পরে গত রবিবার ফের নবদ্বীপ বঙ্গ বিবুধ জননী সভার উদ্যোগে শুরু হল সংস্কৃত ভাষায় কথা বলার অবৈতনিক প্রশিক্ষন কেন্দ্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৪ ০০:২৯

বারো বছর অর্থাৎ একযুগ পার করে নবদ্বীপের রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত মহাবিদ্যালয় প্রাঙ্গণ আবার মুখর হয়ে উঠল সংস্কৃত ভাষা চর্চায়।

২০০২ সালে এই প্রতিষ্ঠানের শেষ এবং একমাত্র অধ্যাপকের মৃত্যুর পর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সংস্কৃতের পঠন পাঠন। ১২ বছর পরে গত রবিবার ফের নবদ্বীপ বঙ্গ বিবুধ জননী সভার উদ্যোগে শুরু হল সংস্কৃত ভাষায় কথা বলার অবৈতনিক প্রশিক্ষন কেন্দ্র। এখানে আপাতত সপ্তাহে একদিন করে সংস্কৃত ভাষায় কথা বলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। শিবিরের প্রথম দিনে ৩০ জন শিক্ষার্থী পাঠ গ্রহণ করেন।

এ বিষয়ে বঙ্গ বিবুধ জননী সভার সম্পাদক অরুণ কুমার চক্রবর্তী বলেন, “১৯৪৯ সালের ৩ নভেম্বর তৎকালীন রাজ্য সরকারের আর্থিক সহায়তায় শুরু হয়েছিল নবদ্বীপ রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত মহাবিদ্যালয়ের পঠন পাঠন। সেই সময় থেকেই মাসিক ২২৫ টাকায় বঙ্গ বিবুধ জননী সভার ভবনটি ভাড়া নিয়ে মহাবিদ্যালয়টি চলছিল। কিন্তু ২০০২ সালের এপ্রিল মাসে শেষ অধ্যক্ষ পূর্ণচন্দ্র আচার্যের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় নবদ্বীপ রাষ্ট্রীয় মহাবিদ্যালয়ের যাবতীয় কর্মকাণ্ড। সেই থেকে তালাবন্ধ হয়ে পড়েছিল বঙ্গ বিবুধ জননী সভা ভবনের ঘরগুলিও। সভার উদ্যোগে আপাতত সাপ্তাহিক প্রশিক্ষণ শিবিরের মাধ্যমে আবার এখানে সংস্কৃত চর্চা শুরু হল। নবদ্বীপ রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত মহাবিদ্যালয় যাতে আবার তার হারানো গৌরব ফিরে পায় সেজন্য বঙ্গ বিবুধ জননী সভা নতুন ভাবে কাজ শুরু করেছে।”

জন্মলগ্ন থেকেই সংস্কৃত শিক্ষার প্রসার এবং বিস্তারে নবদ্বীপ বঙ্গ বিবুধ জননী সভার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ। ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দেশের প্রাচীনতম বেসরকারি সংস্কৃত শিক্ষা সংসদটি। ব্রিটিশ শাসনের সূচনা পর্ব থেকেই নব্যন্যায়ের পীঠস্থান নবদ্বীপের সংস্কৃত চর্চার গৌরব ম্লান হতে শুরু করেছিল। বিদেশি শাসকের অসহযোগিতায় দেখা দিয়েছিল তীব্র অর্থাভাব। ব্যহত হচ্ছিল পঠনপাঠন, শিক্ষান্তে ছাত্রদের উপাধিদান। তখনই দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। নবদ্বীপের সংস্কৃত চর্চাকে রক্ষা করতে অবিভক্ত বাংলার পণ্ডিত সমাজ এই শিক্ষাসংসদ গড়েন।

১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠার সময় এর নাম ছিল “সংস্কৃত বিদ্যা বিবদ্ধনী বিদগ্ধজননী সভা”। পাইকপাড়ার রাজা ইন্দ্রচন্দ্র সিংহকে সভাপতি এবং অবসর প্রাপ্ত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মহেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে সম্পাদক নির্বাচিত করে দেশের পণ্ডিতমণ্ডলী ও সংস্কৃতের অধ্যাপকদের একসঙ্গে নিয়ে সংস্কৃত চর্চাকে একটা সুশৃঙ্খল রূপ দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই সভা স্থাপন করা হয়েছিল। ১৮৯৭ সালে সভার নাম পরিবর্তন করে রাখা হল “বঙ্গ বিবুধ জননী সভা”। সভাপতি হলেন তৎকালীন নদিয়ারাজ ক্ষিতীশ চন্দ্র রায়। সভার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় “বঙ্গ বিবুধ জননী সভা। ১৯০৬ সালে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এই সভার সভাপতি নির্বাচিত হন এবং আমৃত্যু সেই পদে ছিলেন।

এই সভা পরিচালনায় নির্দিষ্ট পাঠক্রম অনুসারে সংস্কৃত ভাষায় বিভিন্ন বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হত এবং ‘রত্ন’ উপাধি দেওয়া হত। পরে সংস্কৃত শিক্ষা পরিষদ এই পাঠক্রম এবং পরীক্ষা পদ্ধতি গ্রহণ করে। তবে ‘রত্নের’ বদলে ‘তীর্থ’ উপাধি দানের ব্যবস্থা হয়। এক সময়ে বাংলার বিভিন্ন স্থানে সভার ২৮টি কেন্দ্র ছিল। শুধু সংস্কৃত শিক্ষা নয়, দুষ্প্রাপ্য পুঁথি এবং গ্রন্থ সংরক্ষণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। ১৯৩৫ সালে পণ্ডিত রামনাথ তর্কসিদ্ধান্ত বা বুনো রামনাথের জন্ম ভিটে কিনে তা সংস্কার করে সভা তার নিজস্ব কার্যাবলী পরিচালনা করতে থাকে। ১৯৪৯ সালে সরকারি উদ্যোগে চালু হয় নবদ্বীপ রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত মহাবিদ্যালয়। ১২৮ বছরের সুদীর্ঘ ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে।

nabadwip rashtriya sanskrit mahavidyalaya sanskrit
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy