Advertisement
E-Paper

কানে হেডফোন, ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু

আবার ঘাতক সেই ‘হেডফোন’। গানের প্রতি ভালোবাসাই কাল হল সুদীপ্তর। কানে ‘হেডফোন’ গুঁজে বন্ধ রেলগেটের ফাঁক গলে লাইন পার হতে গিয়ে মৃত্যু হল নবম শ্রেণির ছাত্র সুদীপ্ত মণ্ডলের (১৫)। রবিবার সকালে শান্তিপুর তিন নম্বর রেলগেটে আচমকা এই দুর্ঘটনায় হতভম্ভ হয়ে যান গেটম্যান-সহ অন্যরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৪ ০১:২১
সকালেই ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে কিশোরের। তবু হুঁশ ফেরেনি। বিপজ্জনক পারাপার চলছেই রেলগেটে। শান্তিপুরে সুদীপ ভট্টাচার্যর ছবি। ইনসেটে মৃত কিশোর সুদীপ্ত মণ্ডল।

সকালেই ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে কিশোরের। তবু হুঁশ ফেরেনি। বিপজ্জনক পারাপার চলছেই রেলগেটে। শান্তিপুরে সুদীপ ভট্টাচার্যর ছবি। ইনসেটে মৃত কিশোর সুদীপ্ত মণ্ডল।

আবার ঘাতক সেই ‘হেডফোন’।

গানের প্রতি ভালোবাসাই কাল হল সুদীপ্তর। কানে ‘হেডফোন’ গুঁজে বন্ধ রেলগেটের ফাঁক গলে লাইন পার হতে গিয়ে মৃত্যু হল নবম শ্রেণির ছাত্র সুদীপ্ত মণ্ডলের (১৫)। রবিবার সকালে শান্তিপুর তিন নম্বর রেলগেটে আচমকা এই দুর্ঘটনায় হতভম্ভ হয়ে যান গেটম্যান-সহ অন্যরা।

বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান সুদীপ্ত ফুলিয়া বিদ্যামন্দিরের ছাত্র। বাড়ি শান্তিপুরের বাতনা এলাকায়। বছর তিনেক আগে মা মারা গিয়েছেন। রবিবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে দিগনগরের শিবমন্দিরে জল ঢালতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল সে। সেই কারণে এদিন সকালে শান্তিপুরে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করবে বলে বাড়ি থেকে বেরয়। ফেরার পথেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।

এ দিন সকাল পৌনে ৯টা নাগাদ শান্তিপুর থেকে শিয়ালদহগামী একটি ট্রেন আসছিল। সেই কারণে গেটম্যান রেলগেট ফেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু সুদীপ্ত সাইকেল নিয়ে রেলগেটের ফাঁক গলে যায়। রেললাইনের উপর উঠতেই ট্রেনের ধাক্কা লাগে। পাশের একটি লোহার থামে ছিটকে পড়ে সে। গেটম্যান সুকান্ত বিশ্বাস বলেন, “আমি প্রাণপণ চিৎকার করেছিলাম। অন্যরাও অনেক ডেকেছিল। কিন্তু ছেলেটার কানে হেডফোন গোঁজা ছিল। শুনলই না। চোখের সামনে ছিটকে গেল।” প্রত্যক্ষদর্শী এক নিত্যযাত্রী উত্তম কুণ্ডু বলেন, “দুর্ঘটনার পর ছুটে গিয়ে দেখি ছেলেটা পড়ে আছে, মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। তখনও দু’কানে হেডফোন গোঁজা।”

হেডফোন কানে দিয়ে রেল লাইন পার হতে গিয়ে কিংবা রাস্তায় গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু নতুন কিছু নয়। শহর হোক বা শহরতলি গান শোনার প্রবণতা প্রতিদিন কেড়ে নিচ্ছে প্রাণ। তবুও নেই সচেতনতা। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে সুদীপ্তর ক্ষেত্রেও ঘটনাটা একই। রেল পুলিশের রানাঘাট থানার আইসি সুভাষ রায় বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পারছি ছেলেটি কানে মোবাইল ফোনের হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে রেল লাইন পার হচ্ছিল। সেই সময়ই ট্রেনের ধাক্কা লাগে। সম্ভবত সে এত জোরে গান শুনছিল যে ট্রেনের শব্দ বা আশপাশের মানুষের চিৎকার তার কানেই ঢোকেনি। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।’’

বাড়ির লোকজনও জানিয়েছেন, সুদীপ্তর গান শোনার খুব ঝোঁক ছিল। তার জেঠতুতো দিদি পূজা বলে, “ভাই বেশিরভাগ সময়ই গান শুনত। স্কুলে যাওয়ার সময়ও কানে হেডফোন গোঁজা থাকত। কত বারণ করেছি, কিছুতেই শুনত না।” এ দিন সকালেই রাখি কিনে নিয়ে এসেছিল পূজা। কিন্তু রাখি না পরে বেরিয়ে যায় সুদীপ্ত। বলে যায় ফিরে এসে রাখি পরবে। সেই রাখি আর পরা হল না তার।

একমাত্র ছেলের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে বাকরুদ্ধ বাবা সুজিত মণ্ডল। সুদীপ্তর জেঠা নন্দ মণ্ডল বাবলা গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএমের উপ-প্রধান। তিনি বলেন, “বাড়ির বড় ছেলে, তার উপর বছর তিনেক আগে মা-হারা হল। সকলের খুব আদরের। এই তো সকালেই বেড়াতে যাবে বলে মাতামাতি করছিল। কিন্তু আর বাড়ি ফিরবে না। ভাবতেই পারছি না।”

head phone train accident santipur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy