Advertisement
E-Paper

কৃষ্ণনগরে সংখ্যালঘু ভোটেই পিছিয়ে জলুবাবু

প্রত্যাশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত জিততে পারলেন না। প্রবল মোদী ঝড়ের মধ্যেও বিজেপি-র ‘সম্ভবনাময়’ কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে পরাজিত হলেন ‘স্টার’ প্রার্থী সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় ওরফে জলুবাবু। এর পিছনে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের প্রায় ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটকে দায়ী করছেন জলুবাবুর ঘনিষ্ঠজনেরা। তাঁদের দাবি, এককাট্টা ভাবে সংখ্যালঘু ভোট পড়েছে বিজেপি-র বিরুদ্ধে। পরিসংখ্যানের সঙ্গে সেই দাবি কিছুটা মিললেও বিজেপি-র অন্য একটি অংশের অভিযোগ, সংগঠনকে যথাযথ ভাবে ব্যবহার করেননি জলুবাবু।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৪ ০০:০৬

প্রত্যাশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত জিততে পারলেন না। প্রবল মোদী ঝড়ের মধ্যেও বিজেপি-র ‘সম্ভবনাময়’ কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে পরাজিত হলেন ‘স্টার’ প্রার্থী সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় ওরফে জলুবাবু। এর পিছনে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের প্রায় ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটকে দায়ী করছেন জলুবাবুর ঘনিষ্ঠজনেরা। তাঁদের দাবি, এককাট্টা ভাবে সংখ্যালঘু ভোট পড়েছে বিজেপি-র বিরুদ্ধে। পরিসংখ্যানের সঙ্গে সেই দাবি কিছুটা মিললেও বিজেপি-র অন্য একটি অংশের অভিযোগ, সংগঠনকে যথাযথ ভাবে ব্যবহার করেননি জলুবাবু। প্রার্থী ও সংগঠনের সুষ্ঠু সমন্বয়ে বরং পাশের কেন্দ্র রানাঘাটে চমকে দেওয়া ফল করেছেন বিজেপি-র ‘আনকোরা’ প্রার্থী সুপ্রভাত বিশ্বাস।

কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের প্রাক্তন সাংসদ জলুবাবুকে এবারও যখন প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেছিল বিজেপি, তখন অনেকেই জয়ের সম্ভাবনা দেখেছিল। জলুবাবুর মনোনয়ন পত্র দাখিলের দিন কিংবা কৃষ্ণনগরে মোদীর সভায় যে বিপুল সাড়া মিলেছিল, তাতে সেই সম্ভাবনা জোরালো হয়ে উঠছিল ক্রমশ। তুলনায় পাশের রানাঘাট কেন্দ্রে বিজেপি-র ফল নিয়ে খুব একটা আশাবাদী ছিলেন না কেউ। কারণ ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগরের প্রার্থী সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় যেখানে পেয়েছিলেন প্রায় ১ লক্ষ ৭৬ হাজার ভোট, সেখানে রানাঘাটের বিজেপি প্রার্থী সুকল্যাণ রায় পেয়েছিলেন মাত্র ৫৩ হাজার ভোট। এবার ফল প্রকাশের পরে দেখা যায় রানাঘাটের প্রার্থী সুপ্রভাত বিশ্বাস পেয়েছেন প্রায় ২ লক্ষ ৩৩ হাজার ভোট (গতবারের থেকে প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার বেশি)। আর জলুবাবু এবার পেয়েছেন প্রায় ৩ লক্ষ ২৯ হাজার ভোট, গতবারের তুলনায় ১ লক্ষ ৫৩ হাজার বেশি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রবল মোদী হাওয়াতেও কেন একদা নিজের জেতা আসনে জিততে পারলেন না জলুবাবু, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দলের অভ্যন্তরে।

হারের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জলুবাবুর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল সংখ্যালঘু ভোট। সেই ভোট না পাওয়ার কারণেই শেষ পর্যন্ত হারতে হয়েছে সত্যব্রতবাবুকে। তাঁদের দাবি, কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোট প্রায় ৩০ শতাংশের বেশি। সেদিক থেকে রানাঘাট কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোট অনেক কম (১৫ শতাংশও নয়)। আর সেই কারণেই এবার রানাঘাট কেন্দ্রের তুলনায় কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে বিজেপির ভোট অপেক্ষাকৃত কম বেড়েছে। বলা যায় তুলনামূলক ভাবে খারাপ ফল করেছে বিজেপি।

বস্তুত, বুথভিত্তিক ভোটের ফল বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাচ্ছে, সেই দাবি খুব একটা অযৌক্তিক নয়। কৃষ্ণনগর পুরসভা এলাকায় তৃণমূলের থেকে প্রায় ১৫ হাজার ভোট বেশি পেয়েছে বিজেপি। ২৪টি ওয়ার্ডের ভিতরে ২৩টি ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়ে থাকলেও কেবল মাত্র ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে তারা পিছিয়ে। উল্লেখ্য, একমাত্র এই ওয়ার্ডেই সিংহভাগ ভোটার সংখ্যালঘু (৭০ শতাংশের বেশি)। চাপড়া বিধানসভা এলাকায় সংখ্যালঘু ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৫২ শতাংশ। সেখানেও অনেকটাই পিছিয়ে বিজেপি। তৃণমূল যেখানে ৬৪০১৬ এবং সিপিএম ৬২৫৩৪ ভোট পেয়েছে সেখানে সত্যব্রতবাবু পেয়েছেন প্রায় অর্ধেক। তিনি পেয়েছেন মাত্র ৩৩২০৬টি ভোট। কালীগঞ্জে সংখ্যালঘু ভোট প্রায় ৪৭ শতাংশ। নিজের এলাকা হলেও এখানেও আশানুরূপ ভোট পাননি জলুবাবু। তৃণমূল যেখানে পেয়েছে ৫৭ হাজার ভোট, সিপিএম যেখানে পেয়েছে প্রায় ৫২ হাজার ভোট, সেখানে বিজেপি পেয়েছে হাজার চুয়াল্লিশ ভোট। অথচ গতবার এই বিধানসভা কেন্দ্র থেকেই জলুবাবু সব চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন, প্রায় ৩২ হাজার। সেই মতো এবার তাঁর আরও অনেক বেশি ভোট পাওয়ার কথা ছিল বলে মনে করছেন দলের কর্মীরা। প্রায় একই অবস্থা পলাশিপাড়াতেও। সেখানেও সংখ্যালঘু ভোটের পরিমান ৩৫ শতাংশের বেশি। এই কেন্দ্রে সিপিএম ভোট পেয়েছে প্রায় ৬০ হাজার, তৃণমূল ভোট পেয়েছে প্রায় ৫৭ হাজার আর বিজেপি ভোট পেয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার।

তবে শুধু সংখ্যালঘু ভোটই নয়, কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে অপেক্ষাকৃত খারাপ ফল হওয়ার পিছনে জলুবাবুর ব্যক্তিগত ভূমিকাকেও দায়ী করছে দলের একাংশ। ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে তৃণমূল সাংসদ তাপস পালের কাছে পরাজয়ের পরে অভিমানে ‘রাজনৈতিক সন্ন্যাস’ নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন জলুবাবু। তারপর থেকে দলের সংগঠনের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ না থাকায় একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। ভোটের সময়ও জলুবাবু সেই দূরত্ব মোছার চেষ্টা করেননি বলে দলের একাংশের অভিযোগ।

সর্বোপরি মোদীর ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ’ বিতর্কও ভোটের ফলে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন সত্যব্রতবাবু। তিনি বলেন, ‘‘মোদীজির বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করেছে বিরোধী দলগুলি। তারও একটা প্রভাব পড়েছে এই নির্বাচনে।” কিন্তু সে ক্ষেত্রে তফসিলি অধ্যুষিত রানাঘাট কেন্দ্রে বেশি প্রভাব পড়ার কথা। কারণ সেখানে বহু ওপার বাংলার মানুষ বাস করেন। বিজেপি জেলা নেতৃত্বের দাবি, রানাঘাট কেন্দ্রে বিজেপি সাংগঠনিক ভাবে ভোট করায় সেখানে কর্মীরা মানুষের কাছে গিয়ে বিষয়টি বোঝাতে পেরেছিলেন। কৃষ্ণনগরে যেটা সম্ভব হয়নি।

sushmit halder krishnanagar minority vote jolubabu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy