Advertisement
E-Paper

খেতে নেমে ভোট চাইলেন প্রার্থী

হ্যালো...মাইক টেস্টিং...হ্যালো...মাঘের সকালের মিঠে রোদ্দুর তখন চড়তে শুরু করেছে। কালো রঙের হুডখোলা জিপে মাইক বাঁধার কাজ প্রায় শেষ। কর্মীরাও তৈরি। মেঠো পথে ধুলো উড়িয়ে কৃষ্ণগঞ্জ থেকে দোগাছি কুঠিরপাড়া হয়ে গাড়ি ছুটে চলেছে দুর্গাপুরের দিকে। মাইকে এক কর্মী বলে চলেছেন, “আমাদের প্রার্থী কৃষিবিজ্ঞানী। আপনাদের কাছে এসেছেন ভোট চাইতে...।”

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৩৭
চাষিকে পরামর্শ দিতে ব্যস্ত বিজেপি প্রার্থী মানবেন্দ্রনাথ রায়। সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

চাষিকে পরামর্শ দিতে ব্যস্ত বিজেপি প্রার্থী মানবেন্দ্রনাথ রায়। সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

হ্যালো...মাইক টেস্টিং...হ্যালো...

মাঘের সকালের মিঠে রোদ্দুর তখন চড়তে শুরু করেছে। কালো রঙের হুডখোলা জিপে মাইক বাঁধার কাজ প্রায় শেষ। কর্মীরাও তৈরি। মেঠো পথে ধুলো উড়িয়ে কৃষ্ণগঞ্জ থেকে দোগাছি কুঠিরপাড়া হয়ে গাড়ি ছুটে চলেছে দুর্গাপুরের দিকে। মাইকে এক কর্মী বলে চলেছেন, “আমাদের প্রার্থী কৃষিবিজ্ঞানী। আপনাদের কাছে এসেছেন ভোট চাইতে...।”

দুর্গাপুরে একটি মিষ্টির দোকানের সামনে এসে দাঁড়াল প্রচার-গাড়ি। খেত থেকে তখন বাড়ি ফিরছিলেন মাঝবয়সী শ্রীপতি মণ্ডল। মাইকের প্রচার শুনে গুটিগুটি পায়ে তিনি এগিয়ে এলেন গাড়ির কাছে। হাতের কাছে কৃষিবিজ্ঞানী প্রার্থীকে পেয়ে তাঁর যেন জিজ্ঞাসার শেষ নেই, “গাঁদা ফুলের চাষ করেছি, বুঝলেন। সার, জল কোনও কিছুরই খামতি রাখছি না। তারপরেও গাছ সব শুকিয়ে যাচ্ছে। কী করি বলুন তো?”

পরনে কালো প্যান্ট, অফ হোয়াইট পাঞ্জাবি, পায়ে স্নিকার্স, গলায় উত্তরীয়। শ্রীপতিবাবুর সমস্যা খুব মন দিয়ে শুনলেন তিনি। তারপর আচমকা বলে বসলেন, “চলুন তো জমি থেকে চট করে একবার ঘুরে আসি।” এতটা অবশ্য আশা করেননি ওই প্রৌঢ়। দলীয় কর্মীরা তো থ। শ্রীপতিবাবুর হাত ধরে ততক্ষণে মাঠের দিকে হাঁটা শুরু করেছেন কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী মানবেন্দ্রনাথ রায়।

প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে প্রার্থীর পিছু নিলেন জনাকয়েক কর্মী। শ্রীপতিবাবুর ফুলের জমির আগেই থেমে গেলেন মানবেন্দ্রবাবু। নজর পাশের জমির দিকে। সেখানে ধানের চারা রোয়ার কাজ করছিলেন চাষিরা। কাদামাখা আলপথ ভেঙে এগিয়ে গেলেন তিনি। জানতে চাইলেন, “এত বেশি বয়সের চারা লাগাচ্ছেন কেন?” তারপরে তিনি চাষিদের বুঝিয়ে দিলেন, বেশি বয়সের চারা লাগালে কী ক্ষতি হয়। কী ভাবে বাদামী শোষক পোকার হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে হয়। ‘শ্রী’ পদ্ধতিতে চাষ করলে কম খরচেও কী ভাবে অধিক ফলন পাওয়া সম্ভব।

তারপর শ্রীপতিবাবুর গাঁদা চাষ সরেজমিনে দেখে তিনি ওই প্রৌঢ়কে আশ্বস্ত করলেন, কী ভাবে কেঁচো সার আর উপকারি ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। হাসছেন শ্রীপতিবাবু, “কী বলে যে আপনাকে ধন্যবাদ দেব। আমি কালই কেঁচো সারের ব্যবস্থা করব।” পাশ থেকে এক কর্মীর ফুটনোট, “ধন্যবাদের সঙ্গে সঙ্গে ভোটটাও যেন দিতে ভুলবেন না।”

বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে। কর্মীরা তাড়া দিচ্ছেন, “দাদা, সবটা তো আজ কমপ্লিট হবে না। একটু যদি তাড়াতাড়ি করেন।” কিন্তু মাঠ, চাষি পেয়ে প্রার্থীর যেন অন্য কোনওদিকে খেয়ালই নেই। চাষিদের দেখলেই তিনি ভোট চাওয়া বাদ দিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন ফলন কী করে আরও বাড়ানো যায় সেই সব আলোচনায়। হঠাৎ কর্মীদের তিনি বলে বসলেন, “জানেন, মাঠে এলেই আর কোনও দিকে খেয়াল থাকে না। আপনারা কেউ বিরক্ত হচ্ছেন না তো?”

“কী যে বলেন, দাদা! বিরক্ত হব কেন? এ ভাবেও তো আমরা বহু মানুষের কাছে যেতে পারছি। তাঁরাও খুশি হচ্ছেন।” চকিতে উত্তর কর্মীদের। এরপর একটি জনসভা সেরে ফের হুডখোলা জিপ এগিয়ে চলল দক্ষিণপাড়ার দিকে। এরপর বেশিরভাগ সময়টা তিনি প্রচার সারলেন পায়ে হেঁটেই। প্রার্থীর সঙ্গে পা মেলাতে গিয়ে হাঁফিয়ে উঠছিলেন কর্মীরাও। ওই এলাকার চারটি বুথই যে সারতে হবে। চলার পথে কখনও বৃদ্ধকে জড়িয়ে ধরলেন, কখনও কাঁচা রাস্তার পাশে টিনের বাড়িতে সটান ঢুকে নমস্কার করে বললেন, “ভোটটা তাহলে আমাকেই দিচ্ছেন।” প্রচারের ফাঁকেই দলীয় এক কর্মীর বাড়িতে সদলবলে চা বিস্কুট খেয়ে ফের হাঁটা।

এত যে হাঁটছেন, জিতবেন তো? মানবেন্দ্রবাবুর সহাস্য উত্তর, “১৪-১৫ কিলোমিটার হাঁটার অভ্যাস আছে। আর জয়ের ব্যাপারে একশো শতাংশ নিশ্চিত। দেখছেন না বিজেপি নিয়ে মানুষের ভিতরে কেমন উন্মাদনা তৈরি হয়েছে।’’ কিন্তু এই উন্মাদনা দিয়ে কি এত বড় একটা লড়াইয়ে জেতা যাবে? যেখানে গত লোকসভা ভোটে বিজেপির ঝুলিতে ভোট পড়েছিল সাকুল্যে প্রায় ২৯ হাজার। প্রার্থীর উত্তর, “এই কেন্দ্রে ৮০ শতাংশ ভোটার উদ্বাস্তু। তাঁদের সকলের নাগরিকত্বও নেই। তাঁরা বুঝে গিয়েছেন যে, নরেন্দ্র মোদীর সরকার তাঁদের পাশে আছে। আর সেই কারণেই তাঁরাও আমার পাশে থাকবেন।”

সেই ২১ জানুয়ারি কল্যাণীর বাড়ি ছেড়ে তিনি পড়ে আছেন কৃষ্ণগঞ্জের দলীয় কার্যালয়ে। খাওয়া-দাওয়া সারছেন স্থানীয় একটি সস্তার হোটেলে। টানা এই বাইরের খাবারে শরীর খারাপ করবে না?

“সেই শৈশব থেকেই তো জীবনের সঙ্গে লড়াই করে আসছি। বাবা মার হাত ধরে বাংলাদেশ থেকে এ দেশে চলে এসে আশ্রয় নিয়েছিলাম বগুলার উদ্বাস্তু শিবিরে। তারপর সময়ের স্রোতে নানা জায়গায় ভেসে বেড়াতে হয়েছে। প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে কী ভাবে লড়াই করে জিততে হয় সেটা আমি আমার জীবন থেকেই শিখেছি।” প্রত্যয়ী জবাব বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিজ্ঞানী, বিজেপির প্রার্থী, মানবেন্দ্রনাথ রায়ের।

krishnaganj bjp candidate by-election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy