কামদুনি ধর্ষণ-কাণ্ডে শুনানি চলছেই। খোরজুনার সাক্ষ্যগ্রহণ পিছোচ্ছে ঘনঘন। তবে, নদিয়ার গেদে সীমান্তে ধর্ষণ করে ছাত্রী খুনের ঘটনায় বিচার মিলল বছর ঘোরার আগেই।
১৭ দিনের মাথায় আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছিল পুলিশ। ১৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণের পর সোমবার ধর্ষণ করে খুন ও প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে স্থানীয় যুবক বিমল সর্দার ওরফে ব্যাটারিকে দোষী সাব্যস্ত করল কৃষ্ণনগর জেলা আদালত। আজ, মঙ্গলবার সাজা শোনাবেন তৃতীয় জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়।
২০১৩ সালের জুন মাসে বারাসতের কামদুনিতে বাড়ি ফেরার পথে এক কলেজ ছাত্রীকে পরপর ধর্ষণ করে খুন করে কয়েকজন দুষ্কৃতী। ঠিক তার তিন দিন পরে, সোমবার ১০ জুন বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন গেদের উত্তরপাড়া গ্রামে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ধর্ষণের পর খুন হয় সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী।
মামলা চলাকালীন ঘটনাটা বিশদে জানা যায়। সে দিন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। স্কুলের এক শিক্ষিকার সঙ্গে বাড়ি ফিরছিল ওই ছাত্রী। শিক্ষিকা ট্রেন ধরতে চলে যাওয়ার পর ছাত্রী রাস্তার পাশে একটি ছাউনির নীচে দাঁড়িয়ে ছিল। প্রায় ঘণ্টা খানেক দাঁড়িয়ে থাকার পরে গ্রামের যুবক বিমল তার ছাতার তলায় বাড়ি ফেরার প্রস্তাব দেয় কিশোরীকে। উল্টো দিকে গ্রামের তাপস মজুমদারের দোকান। আদালতে তাপসবাবু জানিয়েছেন, তিনি ওই ছাত্রীকে বিমলের সঙ্গে যেতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার পরেও বৃষ্টি না কমায় কিশোরী বিমলের সঙ্গে ফিরতে রাজি হয়। এরপর আর ওই কিশোরীর খোঁজ মিলছিল না। পরদিন বিমল স্থানীয় একটি বাঁশ বাগানের ভিতরে হলুদ ক্ষেতে কাজ করার সময় অন্য দিনমজুরদের জানায়, কিশোরীর মৃতদেহ পড়ে আছে পিছনে। দেহ উদ্ধারের পরে গ্রামে হইচই পড়ে গেলে জানা যায়, আগের দিনই বিমলের সঙ্গে এক ছাতায় বাড়ি ফিরছিল ওই কিশোরী। গ্রামবাসীরা চেপে ধরলে বিমল স্বীকার করে নেয়, বাঁশবাগানে কিশোরীকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে খুন করেছে সে। তার আরও দুই সঙ্গী এই ঘটনায় যুক্ত বলে পুলিশকে জানিয়েছিল সে। পুলিশ তিন জনকেই গ্রেফতার করে। তবে, তদন্তে পুলিশ জানতে পারে বাকি দু’জন এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তাঁদের নাম চার্জশিট থেকে বাদ দিয়ে দেয় পুলিশ। পুলিশকে বিমল আরও জানিয়েছিল, প্রেম নিবেদন করায় ওই কিশোরী জুতো খুলে সপাটে মেরেছিল তাকে। সেই রাগে সে খুন করেছে। পরে অবশ্য এর সপক্ষে তথ্য মেলেনি মামলায়।
এ দিকে, বারাসতের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে সম-সাময়িক কামদুনি মামলার শুনানি চলছেই। কামদুনি, গেদের ঘটনার কয়েক দিন পরে (২৩ জুন) মুর্শিদাবাদের বড়ঞা থানার খোরজুনা গ্রামে বধূকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনাতেও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়নি। সাড়া জাগানো পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণ কাণ্ডের দু’বছর পরেও মূল দুই অভিযুক্ত ধরা পড়েননি। কাটোয়া গণধর্ষণ মামলা আটকে আছে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে, এক জন অভিযুক্ত অধরা। মধ্যমগ্রামে ধর্ষণ-কাণ্ডে কিশোরীর অপমৃত্যুর ঘটনায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে সবে। সেখানে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট তৈরি না করেই গেদের বিচার দ্রুত মিলল কী ভাবে? সরকার পক্ষের আইনজীবী বিকাশ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলিশ দ্রুত চার্জশিট দিয়েছে। জেলা পুলিশের কর্তারা নিয়মিত তদন্ত ও মামলার তদারকি করেছেন। পাঁচ বার বিমলের আইনজীবীর পরিবর্তন না হলে আরও আগে বিচার শেষ হয়ে যেত।”
তৎপরতার সঙ্গে বিচারপ্রক্রিয়াও এগিয়েছে বলে জানান বিকাশবাবু। তাঁর কথায়, “সিজেএম কোর্ট থেকে দ্রুত মামলাটিকে বিচারের জন্য জেলা জজের কাছে পাঠানো হয়েছে। আবার দ্রুত মামলাটি জেলা জজ থেকে তৃতীয় জেলা ও দায়রা আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া আমরা সময় চেয়ে একটা দিনও নষ্ট করিনি।” জেলার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, ‘‘গুরুত্ব সহকারে আমরা নিজেরা এই মামলার তদন্তে নজরদারি করেছি। বিজ্ঞানসম্মত ভাবে প্রতিটি তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছি। ফলে অকারণ দেরি হয়নি।”
স্থানীয় বাসিন্দা দীনবন্ধু হাওলাদার বলেন, “এত দ্রুত বিচার মিলবে ভাবতে পারিনি।” কিশোরীর মা মূক ও বধির। বাবা নেই। ভাই এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। সে বলে, “অভিযুক্তের ফাঁসি না হলে শান্তি নেই।” আজ, আদালতে মাকে নিয়ে যেতে চায় কিশোরীর ভাই। সাজা শুনতে চায় নিজের কানে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy