Advertisement
E-Paper

গণ্ডগোল চলছেই, দিনভর বন্ধ বহরমপুরের দু’টি কলেজ

সৌজন্যে কোথাও তৃণমূল ছাত্র পরিষদ তো কোথাও শাসকদলের পুলিশ। মুর্শিদাবাদের জেলা সদর বহরমপুরের অন্যতম দু’টি কলেজ ‘তুচ্ছ’ কারণে বন্ধ রইল মঙ্গলবার। কলেজ ম্যাগাজিনে অধীর চৌধুরীর ছবি ও রাজ্য সরকার বিরোধী লেখা থাকার বিরোধিতা করে এদিন কৃষ্ণনাথ কলেজে বন্ধ ডেকেছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। তার প্রতিবাদ করে ছাত্র পরিষদ। দু’পক্ষের গোলমাল এড়াতে কলেজ বন্ধ রাখার নোটিস গেটে টাঙিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ। কিলোমিটার দু’য়েক দূরে বহরমপুর কলেজ গেটেও এ দিন বন্ধ থাকার নোটিস পড়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৪৪
রাস্তায় বসে প্রতীকী পড়াশোনা কলেজের ছাত্র পরিষদের সমর্থকদের। বুধবারও প্রাতঃবিভাগের পঠনপাঠন বন্ধ থাকবে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

রাস্তায় বসে প্রতীকী পড়াশোনা কলেজের ছাত্র পরিষদের সমর্থকদের। বুধবারও প্রাতঃবিভাগের পঠনপাঠন বন্ধ থাকবে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

সৌজন্যে কোথাও তৃণমূল ছাত্র পরিষদ তো কোথাও শাসকদলের পুলিশ। মুর্শিদাবাদের জেলা সদর বহরমপুরের অন্যতম দু’টি কলেজ ‘তুচ্ছ’ কারণে বন্ধ রইল মঙ্গলবার।

কলেজ ম্যাগাজিনে অধীর চৌধুরীর ছবি ও রাজ্য সরকার বিরোধী লেখা থাকার বিরোধিতা করে এদিন কৃষ্ণনাথ কলেজে বন্ধ ডেকেছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। তার প্রতিবাদ করে ছাত্র পরিষদ। দু’পক্ষের গোলমাল এড়াতে কলেজ বন্ধ রাখার নোটিস গেটে টাঙিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ। কিলোমিটার দু’য়েক দূরে বহরমপুর কলেজ গেটেও এ দিন বন্ধ থাকার নোটিস পড়ে। ব্ল্যাকবোর্ডে চক দিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ লেখেন—‘জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে কলেজ বন্ধ রাখা হল।’ অধ্যক্ষ সমরেশ মণ্ডলের দাবি, গোলমাল এড়াতে কলেজ বন্ধ রাখার জন্য পুলিশ থেকেই চাপ দেওয়া হয়েছে।

কৃষ্ণনাথ কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার প্রকাশিত হয়েছে কলেজ পত্রিকা। সেখানে ছাত্র পরিষদের প্রতিনিধির লেখা প্রতিবেদন নিয়ে ‘আপত্তির’ জেরে মঙ্গলবার অলিখিত ভাবে কলেজ বন্ধ-এর ডাক দেয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। সেই মতো সোমবার রাতে কলেজের গেটে পোস্টার মারে তারা। কিন্তু সরকারি ভাবে কলেজ বন্ধ থাকার কথা ঘোষণা না হওয়ায় প্রাতঃবিভাগে ক্লাস করতে ছাত্ররা হাজির হন। ততক্ষণে ছাত্র পরিষদের সদস্যরাও কলেজে পৌঁছে গেছেন। বন্ধের সমর্থনে লেখা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পোস্টার তাঁরা ছিঁড়ে দেন বলে অভিযোগ। একটা ক্লাস শুরু হয়ে যায়। ওই খবর পেয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যরা কলেজে পৌঁছে ছাত্রদের ক্লাস থেকে বের করে দেন বলে অভিযোগ। ডামাডোলে বন্ধ হয়ে যায় কলেজ। তখন কলেজের সামনের রাস্তায় বই-খাতা নিয়ে বসে পড়ে ‘প্রতীকি’ প্রতিবাদ জানান কিছু ছাত্রছাত্রী। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শান্তা চক্রবর্তী রায় বলেন, “ছাত্র সংগঠনের এক পক্ষ কলেজ বন্ধ করতে চায়, অন্য পক্ষ তা রুখতে মরিয়া ছিল। এই অবস্থায় কলেজে গণ্ডগোলের আশঙ্কা তৈরি হয়। তখন সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে কলেজের প্রাতঃ ও দিবা বিভাগের পঠনপাঠন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিই।” আজ বুধবারও প্রাতঃবিভাগের পঠনপাঠন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে দিবা বিভাগে রুটিন মাফিক সমস্ত ক্লাস হবে। এমএসসি শারীরবিদ্যার পরীক্ষাও নেওয়া হবে।

জেলা ছাত্র পরিষদের সভাপতি সরফরাজ শেখ রুবেল বলেন, “ভোটের আগে কলেজে বিশৃঙ্খলার পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। ওই কারণে এ দিন কলেজ বন্ধের ডাক দেয়। কিন্তু সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা তা রুখে দিয়েছে।” তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা নেতা রাজা ঘোষ অবশ্য বিশৃঙ্খলার দায় চাপাচ্ছেন ছাত্র পরিষদের কাঁধে। তিনি বলেন, “কৃষ্ণনাথ কলেজ পত্রিকা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সরকারকে কালিমালিপ্ত করার কাজে ব্যবহার হয়েছে। এই কারণে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে এ দিন কলেজ গেটে পিকেটিং করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি সরফরাজ শেখ রুবেলের নেতৃত্বে মোটরবাইক বাহিনী এসে ওই পতাকা ও ফ্লেক্স ছিঁড়ে দেয়। আমাদের সদস্যরা প্রতিবাদ জানালে তাদের মারধরও করা হয়। রুবেল-সহ চার জনের বিরুদ্ধে বহরমপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।”

বহরমপুরের কলেজে এখন আবার গণ্ডগোলটা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের মধ্যে। ৮ ডিসেম্বর কলেজের নব্য ছাত্রছাত্রীদের নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর ‘গার্ড ফাইল’ থেকে লিখে সংগ্রহ করা নিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও ছাত্র পরিষদের সদস্যদের মধ্যে বচসা থেকে শুরু হয়ে যায় হাতাহাতি। ওই খবর পেয়ে বহরমপুর থানার আইসি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গিয়ে ‘কলেজ বন্ধ রাখার’ কথা বলেন। এ দিন সকালে আইসি অরুণাভ দাস ফের ফোন করে কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন বলে অধ্যক্ষ সমরেশবাবু জানান। তিনি বলেন, “আইসিকে ওই নির্দেশ লিখিত আকারে দিতে বলি। তিনি তাতে রাজি হননি। এর পরে আইসি-র সঙ্গে আমার কথোপকথনের বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপারকে জানাই। এসপি-ও আমাকে কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। বুধবার সর্বদল বৈঠক ডেকে মীমাংসাসূত্র বের করার পরে কলেজ খোলার কথা এসপি বলেন।” সেই মতো কলেজে ঢোকার মুখে ব্ল্যাকবোর্ডে চক দিয়ে লিখেও দেওয়া হয়—‘জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে কলেজ বন্ধ রাখা হল।’ পুলিশ সুপার অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর কথায়, “কলেজ বন্ধ রাখার বিষয়ে আমি আইসি-কে কোনও কথা বলতে বলিনি।” তবে সর্বদল বৈঠক ডাকা র কথা মেনেছেন পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, “আগামী দিন কলেজ ছাত্রসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ওই সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

students clash krishnath college baharampur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy