Advertisement
E-Paper

ঘুঘড়াগাছি নিয়ে জল মাপছে সিপিএম

গোড়া থেকেই পরিবারটার পাশে ছিল সিপিএম। ফাঁসির সাজা ঘোষণার রাতেই কৃষকসভা ও খেতমজুর সমিতির নেতারা বাড়িতে গিয়ে দেখা করেছেন। পরের দিন গ্রামে গিয়েছে মহিলা সমিতি। কিন্তু ঘুঘড়াগাছি নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে চাইছে না সিপিএম। বরং বিধানসভা নির্বাচনের আগে এলাকার মানুষের মন বুঝতে চাইছে। এককথায় ‘জল মাপা’ যাকে বলে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:৫৯

গোড়া থেকেই পরিবারটার পাশে ছিল সিপিএম। ফাঁসির সাজা ঘোষণার রাতেই কৃষকসভা ও খেতমজুর সমিতির নেতারা বাড়িতে গিয়ে দেখা করেছেন। পরের দিন গ্রামে গিয়েছে মহিলা সমিতি।

কিন্তু ঘুঘড়াগাছি নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে চাইছে না সিপিএম। বরং বিধানসভা নির্বাচনের আগে এলাকার মানুষের মন বুঝতে চাইছে। এককথায় ‘জল মাপা’ যাকে বলে।

সিপিএমের নদিয়া জেলা সম্পাদক সুমিত দে অবশ্য দাবি করেন, ‘‘প্রথম থেকেই আমরা ওই পরিবারের পাশে ছিলাম। সব রকম ভাবে। তা না হলে একক লড়াইয়ে এত বড় জয় কখনই সম্ভব হয় না।’’ সেই সঙ্গে তিনি যোগ করতে ভোলেননি, ‘‘আমরা এখনও ওঁদের পাশে আছি। আমাদের কৃষক সভা ও খেতমজুর সমিতির জেলা নেতৃত্ব সাজা ঘোষণার দিনই ওঁদের বাড়িতে দেখা করে সাহস জুগিয়ে এসেছেন। পরের দিন গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির নেত্রীরাও গ্রামে গিয়ে বেদিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।’’

ঘুঘড়াগাছিতে অপর্ণা বাগ হত্যা মামলায় বৃহস্পতিবার একদা তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ লঙ্কেশ্বর ঘোষ ওরফে লঙ্কা-সহ ১১ জনকে ফাঁসির সাজা দিয়েছে কৃষ্ণনগর আদালত। কিন্তু জেলের বাইরে থাকা লঙ্কার সাঙ্গোপাঙ্গদের ভয়ে গ্রামের কোনও পরিবারকেই পাশে পাচ্ছেন না অপর্ণা বাড়ির লোকজন। প্রথম দিকে যাঁরা সক্রিয় ভাবে আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন, তাঁদেরও দেখা মিলছে না। দেখা মিলছে না স্থানীয় সিপিএম নেতাদের।

সিপিএম কেন আরও প্রত্যক্ষ ভাবে পরিবারটির পাশে দাঁড়াল না?

গ্রামেরই এক সিপিএম কর্মী পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘‘আমরা সত্যিই ভয়ে আছি। আমাদের তো ওই গ্রামেই থাকতে হবে। এই রাস্তা দিয়েই কৃষ্ণগঞ্জে যেতে হবে। কিন্তু নেতাদের তো তা করতে হয় না। তবুও তারা কেন আসছে না?’’ তাঁর মতে, নেতারা এসে যদি প্রকাশ্যে পরিবারটার পাশে দাঁড়ান, তা হলে ওঁরাই শুধু সাহস পাবেন, তা নয় গ্রামের সিপিএম কর্মীরাও সাহস পাবেন। ভয় ভেঙে ওদের পাশে এসে দাঁড়াতে পারবেন।

অপর্ণা বাগের খুনের ঘটনার পরে সিপিএম সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিহত ও আহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিল। জেলা নেতারা তো ছিলেনই। ছুটে এসেছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসু, বৃন্দা কারাটের মতো সর্বভারতীয় নেতৃত্ব। আর্থিক সাহায্যও করে দল। ওই ঘটনায় আহত ছাত্র রাজীব মণ্ডলের চিকিৎসার সমস্ত ব্যয় বহন করে বাড়ি ফিরিয়ে আনে। কিন্তু সাজা ঘোষণার পরে সেই সক্রিয়তা চোখে পড়ছে না।

অপর্ণা বাগের এক আত্মীয়ের মতে, ‘‘অপর্ণা মারা যাওয়ার পরে অবশ্যই দলের পাশে থাকার দরকার ছিল। কিন্তু তখনকার থেকে এখন অনেক বেশি প্রয়োজন। কারণ তখন প্রথম দিকে তো পরিবারের পাশে অনেকই ছিল। গ্রামের মানুষও ছিল। কিন্তু এখন তো কেউই নেই। এই সময়েই তো দলের বেশি প্রয়োজন।’’

কিন্তু সেটা হচ্ছে না কেন?

নাম প্রাকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসীর ব্যাখ্যা, ‘‘তখন যে সামনে বিধানসভা উপনির্বাচন ছিল। আবার মূল অভিযুক্ত লঙ্কেশ্বর তৃণমূলের লোক, ব্লক সভাপতির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। এই সুযোগ কি কেউ ছাড়ে? তাই তখন সিপিএম অত উঠে-পড়ে লেগেছিল।’’ নির্বাচনী প্রচারেও সে সময়ে ঘুঘড়াগাছি প্রসঙ্গ বারবার তুলে এনেছিলেন সিপিএম নেতারা। যদিও ভোটে তার বিশেষ প্রভাব পড়েনি।

ঘুঘড়াগাছির বুথে অবশ্য হাতে-নাতে ফল পেয়েছিল সিপিএম। পঞ্চায়েত ভোটে এই বুথে সিপিএম মাত্র ৩ ভোটে জয়ী হলেও উপ-নির্বাচনে ৫৫ ভোটে এগিয়ে যায়। তা হলে কেন আসন্ন ভোটের কথা মাথায় রেখে সিপিএম আরও সক্রিয় হচ্ছে না? স্থানীয় এক সিপিএম নেতার দাবি, ‘‘আমাদের নেতারা আসলে জল মেপে নিতে চাইছেন। এত বড় একটা অস্ত্রকে তাড়াহুড়ো করে নষ্ট করতে চাইছেন না। তা ছাড়া এক সঙ্গে এগারো জনের ফাঁসি এলাকার মানুষ ঠিক কী ভাবে নিচ্ছেন, সেটাও তো বুঝতে হবে।’’

সিপিএমের এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘দেখুন না বিধানসভা ভোটের আগে আবারও ঘুঘড়াগাছি কী ভাবে প্রচারের সামনে চলে আসে। কোনও ভাবেই আমরা এত বড় ঘটনাকে হাতছাড়া করতে রাজি নই।’’ একই ইঙ্গিত দলের জেলা সম্পাদক সুমিত দে-র কথাতেও। তাঁর দাবি, ‘‘গত উপনির্বাচনে আমাদের সামগ্রিক বিপর্যয়ের মধ্যে ঘুঘড়াগাছির প্রভাব হয়তো আলাদা করে বোঝা যায়নি। এ বার কিন্তু সেটা হবে না। মানুষ তার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে উপলব্ধি করেছে, তৃণমূল ঘটনাটা ঘটিয়েছে। আদালতের রায় কিন্তু আমাদের অভিযোগকেই প্রতিষ্ঠা দিল।’’

এমনিতেই এই বিতর্কিত প্রায় ২২ বিঘা জমির সঙ্গে সিপিএম দীর্ঘ দিন ধরে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই জমির আরআর পাট্টা পেয়েছিলেন স্থানীয় ফটিক সরকার। কিন্তু তিনি কোনও দিনই এই জমির দখল পান নি। সিপিএমের লোকেদের হাতেই জমির দখল ছিল। এই নিয়ে নকশাল পন্থী সংগঠন সিওআই (এমএল)-এর সঙ্গে তাদের লড়াইও হয়। শেষে ১৯৮৬ সাল নাগাদ সিওআই (এমএল) ওই জমি নিজেদের দখলে নিয়ে এসে গ্রামের ৫৪টি দরিদ্র পরিবারের মধ্যে ভাগ করে দেয়।

সেই সময়ে ঘুঘড়াগাছি-সহ গোটা এলাকায় সিওআই (এমএল)-এর ভাল প্রভাব ছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে তাদের সংগঠন দুর্বল হতে থাকে। প্রভাব বাড়তে থাকে সিপিএমের। সেই জায়গা থেকেই অপর্ণা বাগের পরিবার-সহ আরও যে সব পরিবারে এখনও সিপিএমের ছাতার তলায় রয়েছে, তারা দলকে আরও বেশি করে পাশে চাইছে। তাঁদের প্রশ্ন, সে দিন যদি সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুরা আসতে পারেন, এখন কেন আসতে পারবেন না? গ্রামেরই এক তৃণমূল কর্মীর কটাক্ষ, ‘‘উপনির্বাচনেই সিপিএমের নেতারা বুঝতে পেরেছেন যে মানুষ ঘুঘড়াগাছি খাবে না। তাই এ বার ওটা নিয়ে আর খাটতে চাইছে না।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy