তাপমাত্রার পারদ চড়ছে ক্রমশ। ভর দুপুরে চড়া রোদ মাথায় কর্মীদের প্রচার নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন প্রার্থীরা।
এমনিতেই কৃষ্ণনগরের আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন। এই শহরের কোল ঘেঁষে চলে গিয়েছে কর্কটক্রান্তি রেখা। গরমটা তাই যেন একটু বেশি। গরমের হাত থেকে বাঁচতে প্রার্থীরা অধিকাংশই সকাল-সকাল প্রচার সেরে ফেলছেন। কিন্তু এলাকায় জনসংযোগের মূল কাজটা যাঁদের কাঁধে, সেই কর্মীরা তো আর দিনভর রোদের দোহাই দিয়ে বাড়ির মধ্যে বসে থাকতে পারেন না। চড়া রোদেও বেরোতে হচ্ছে তাঁদের। আর এতেই চিন্তায় পড়েছেন প্রার্থীরা। কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তাপস পাল স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেন, ‘‘দুপুর ১২টা থেকে রোদের তাপ না কমা পর্যন্ত প্রচার বন্ধ রাখার কথা বলেছি দলের কর্মীদের। চড়া রোদে বেরোলে অসুস্থ হয়ে পড়বে সকলে। ওদের সুস্থ থাকাটা খুবই জরুরি। কারণ ভোটযুদ্ধের প্রধান সৈনিক ওরাই।’’
কর্মীরা অবশ্য নিশ্চিন্তে বসে থাকতে পারছেন না বাড়িতে। কৃষ্ণনগরে এ বার চতুর্মুখী লড়াই। পঞ্চায়েত ভোটের নিরিখে তৃণমূল অনেক এগিয়ে থাকলেও সিপিএমের ভাল শক্তি রয়েছে কিছু পকেটে। আবার বিজেপি প্রার্থী সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তাও কম নয়। কংগ্রেসও ভালই ভোট কাটবে। সব মিলিয়ে শেষ বেলায় কে বেরিয়ে যাবে, বলা কঠিন। এই অবস্থায় বাড়ি-বাড়ি প্রচারে এতটুকুও ফাঁক রাখতে রাজি নন কোনও দলের কর্মীরা। কৃষ্ণগঞ্জ এলাকার এক সিপিএম কর্মী বলেন, “গরম তো থাকবেই। যত দিন যাবে, তত গরম বাড়বে। তাই বলে আমরা বাড়িতে বসে থাকতে পারি না। দু’-তিন বার লেবুর জল খাচ্ছি। শসা খাচ্ছি। দুপুরে পান্তা খেয়ে শরীর ঠান্ডা রাখছি। পাঁচ বছরে একবার লোকসভা ভোট। ভোট কাটাকাটির বাজারে এতটুকু ছাড় দিলে চলবে না।” কৃষ্ণনগরের সিপিএম প্রার্থী শান্তনু ঝা নিজেও মনে করেন দুপুরবেলাটা প্রচারের আদর্শ সময়। কারণ ওই সময়টা বাড়ির মেয়েদের হাতে কাজ কম থাকে। সন্ধ্যার পর তাঁরা ফের ব্যস্ত হয়ে পড়েন গৃহকর্মে, নয়তো সিরিয়াল দেখায়। তবে, এই গরমে রোদ না পড়লে কর্মীদের বেরোতে বারণ করছেন তিনিও। তাঁর কথায় ‘‘আমি নিজেই রোদের হাত থেকে বাঁচতে সকাল-সকাল প্রচার শুরু করে দিচ্ছি। কর্মীদেরও বলছি সকালে বেরিয়ে পড়তে। দুপুরে কয়েক ঘণ্টা প্রচার বন্ধ রেখে রোদ পড়ার পর আবার বেরোতে হবে।”
কর্মীদের বক্তব্য, দেওয়াল লিখনের মতো কাজগুলো সকাল-সকাল করে ফেলছেন তাঁরা। জনসংযোগও হচ্ছে সকাল-সকালই। তবে, সকালে বেরোলেও কাজ শেষ হতে হতে দুপুর গড়িয়েই যায়। ১২টা-১টার রোদটা এড়ানো যায় না। তারপর দুপুরবেলাটা একটু বিশ্রাম নিয়ে চারটে নাগাদ ফের কাজ শুরু হয়ে যায়। চাপড়ার তৃণমূলকর্মী মিজানুর রহমান মণ্ডল বলেন, “দুপুরবেলা এমনিতেও বাড়ি-বাড়ি গিয়ে লাভ হয় না। কারণ ওই সময়টা লোকজন ঘুমোয়। তবে, পার্টি অফিস বা অন্যত্র কাজ থাকলে আলাদা কথা। কর্মিসভা হলে যেতেই হয়।”
ঠিক এই কারণেই বেলা তিনটের আগে কর্মিসভা করছেন না বিজেপি প্রার্থী সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘সকালের দিকে করলে ক্রমশ তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। সেখানে সাড়ে ৩টে-৪টের পর রোদটা ক্রমে কমে আসে। বিকেল আর সন্ধেটা পাওয়া যায় হাতে। দুপুরে রোদে বেরিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার কোনও যুক্তি নেই।”
এ দিকে, ভোটের ময়দানে প্রচার-যুদ্ধে অন্যদের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে থাকা কংগ্রেস রোদ-তাপমাত্রাকে মোটেই গা করছে না। দীর্ঘ টানাপোড়েনের পরে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে রাজিয়া আহমেদের নাম প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। গত শনিবার থেকে প্রচার শুরু হয়েছে তাঁর। অনেকটা পিছিয়ে থেকে প্রচার শুরু করায় এখন যেন এক মুহুর্ত সময় নষ্ট করতে চাইছেন না তিনি। রাজিয়া বলেন, ‘‘ঝড়-জল-বৃষ্টিতে যে পরিস্থিতি তৈরি হোক না কেন, আমাদের প্রচারটা চালিয়ে যেতে হবে। কারণ এটা একটা লড়াই। আর লড়াইয়ের ময়দানে এতটুকু জমি ছাড়া যাবে না। তাই যতই গরম পড়ুক প্রচারের কাজ আমাদের চালিয়ে যেতে হবে। তবে দেখতে হবে কেউ যেন অসুস্থ হয়ে না পড়েন।’’
দিন যত এগিয়ে আসবে ততই বাড়তে থাকবে ভোটের উত্তাপ। সেই উত্তাপ কর্মীদের শেষ পর্যন্ত কতটা বাড়িতে বসে থাকতে দেবে তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রয়েই যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy