ছেলের খুনের ঘটনায় পুলিশি তদন্তে ভরসা করতে পারেননি বাবা। সিআইডি তদন্তের আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন কৃষ্ণনগরের রবীন্দ্রপল্লি এলাকার বাসিন্দা অনিল মণ্ডল। হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত কৃষ্ণনগরের কোতোয়ালি থানার পুলিশের তদন্তে সন্তুষ্ট না হয়ে নদিয়ার পুলিশ সুপারের কাছে ওই খুনের তদন্তের রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন।
হাইকোর্টে অনিলবাবুর পক্ষের আইনজীবী মীর আনোয়ার বলেন, “পুলিশের তদন্তে বিচারক সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তাই জেলার পুলিশ সুপারের কাছে রিপোর্ট তলব করেছেন।” তিনি জানান, আগামী ৪ অগস্ট পরবর্তী শুনানি। সেই দিনই পুলিশ সুপারের রিপোর্ট দেখে তদন্তের দায়িত্ব সিআইডিকে দেওয়া হবে কি না সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বিচারপতি। ৩ মার্চ সন্ধে থেকে নিখোঁজ ছিল কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্র অতনু মণ্ডল। পরের দিন বিকেলে কৃষ্ণনগরের চরশম্ভুনগর ঘাট এলাকায় জলঙ্গি নদী থেকে পাথর বাঁধা অবস্থায় তার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। অনিলবাবু তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্তদের মধ্যে অতনুর গৃহশিক্ষক ও এক বান্ধবীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এখনও পর্যন্ত আর এক অভিযুক্ত অধরা। আয়কর দফতরের কর্মী অনিলবাবুর অভিযোগ, “পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করলেও তদন্ত কোনও ভাবেই এগোচ্ছিল না। আমার ছেলের খুনের ঘটনায় বাকি যারা যুক্ত তাদের কাউকেই গ্রেফতার করছে না পুলিশ।’’ তিনি জানান, প্রথম দিকে পুলিশ খুব সক্রিয় থাকলেও হঠাৎ রহস্যজনক ভাবে একেবারে চুপচাপ হয়ে গিয়েছে। জেলা পুলিশের কর্তাদের কাছে তিনি ধর্ণা দিয়েছেন দিনের পর দিন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। এক সময় কোতোয়ালি থানার অফিসাররাই তাঁকে নিজেদের অক্ষমতার কথা জানিয়ে সিআইডি তদন্তের জন্য আবেদন করার পরামর্শ দেন। সব জানিয়ে তিনি চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকেও।
শেষ পর্যন্ত সিআইডি তদন্তের জন্য ১০ জুন হাইকোর্টে আবেদন করেন অনিলবাবু। এই মামলায় তাঁর আইনজীবীরা হলেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও মীর আনোয়ার। মীর আনোয়ার বলেন, “১৭ জুন মামলার প্রথম শুনানি হয়। সব শুনে বিচারপতি সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠান। ২৬ জুন পুলিশ আদালতে রিপোর্ট জমা দেয়। আমরাও সেই রিপোর্টের কপি পাই।” তিনি জানান, রিপোর্টে পুলিশ লিখেছে যে, নিহত ছাত্রের বাবার কথা শুনেই নাকি পুলিশ আদালতে ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট জমা দেয়নি। কিন্তু এটা সঠিক কথা নয়। তাছাড়া প্রশ্ন হল, ৯০ দিনের মধ্যে পুলিস কেন তার তদন্ত শেষ করতে পারল না? নির্ধারিত সময়ের মধ্য পুলিস চার্জশিট জমা দিতে না-পারার জন্যই মূল অভিযুক্তরা ছাড়া পেয়ে গেল। ২ জুলাইয়ের শুনানিতে তদন্তের বিভিন্ন গাফিলতি ও দুর্বলতা দেখেশুনে বিচারপতি জেলার পুলিশ সুপারের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছেন। আইনজীবী মীর আনোয়ার বলেন, “পুলিশের তদন্তে অনেক ফাঁক আছে। রয়েছে গাফিলতিও। সেসব আমরা আদালতের সামনে তুলে ধরেছি।” জেলার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, “তদন্তের কী অবস্থা তা আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। আদালত যা নির্দেশ দেবে সেই মতোই সব কিছু হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy