অবশেষে বহরমপুর কলেজ ও কৃষ্ণনাথ কলেজ লাগানো হল ‘ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা’। গত কয়েক দিন ধরে লাগাতার ছাত্র-সংঘর্ষের পর মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন অবিলম্বে বহরমপুরের ওই দুটি কলেজে সিসিটিভি বসানোর নির্দেশ দিয়েছিল। তা মেনে বহরমপুর কলেজে গত সোমবার এবং মঙ্গলবার কৃষ্ণনাথ কলেজে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগানোর কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে প্রায় দু’বছর আগে বেলডাঙা শিউনারায়ণ ফতেপুরিয়া কলেজে, দেড় বছর আগে নওদার আমতলা কলেজে ও বহরমপুর গার্লস কলেজে সিসিটিভি বসানো হয়েছে, সেখানে বহরমপুর কলেজ ও কৃষ্ণনাথ কলেজ কর্তৃপক্ষ সিসিটিভি বসানোর ক্ষেত্রে পিছিয়ে কেন?
বহরমপুর কলেজের অধ্যক্ষ সমরেশ মণ্ডলের নির্লিপ্ত জবাব, “সিসিটিভি বসানোর বাপারে এত দিন অনুভব করিনি।” অন্য দিকে কৃষ্ণনাথ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কল্যাণাক্ষ ঘোষ বলেন, “অনেক দিন আগেই সিসিটিভি বসানোর বিষয়টি অনুভব করেছি। কিন্তু দৈনন্দিন কলেজে এত কাজের চাপ থাকে যে হয়ে ওঠেনি।”
মুর্শিদাবাদ জেলা তথা রাজ্যের মধ্যে ছাত্র-সংঘর্ষের ঘটনা যদি সব চেয়ে বেশি ঘটে থাকে, সেই কলেজের নাম বহরমপুর কলেজ। গণ্ডগোলের দিক থেকে পিছিয়ে নেই কৃষ্ণনাথ কলেজও। সোশ্যাল মিডিয়া মজা করে ওই দুটি কলেজের নাম রেখেছে‘গণ্ডগোল-হট্টগোল’ কলেজ। গত কয়েক দিন ধরে ওই দুটি কলেজে লাগাতার ছাত্র-সংঘর্ষের জেরে পঠনপাঠন শিকেয় উঠেছে। গত ২২ নভেম্বর ‘সোশ্যাল’ অনুষ্ঠানের দিন বহরমপুর কলেজে ছাত্র পরিষদ ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মধ্যে গণ্ডগোল বাধে। তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্র-সংঘর্ষ ঘটে কৃষ্ণনাথ কলেজে। গত ৮ ডিসেম্বর ফের ওই বহরমপুর কলেজে নতুন ছাত্রছাত্রীদের নাম ও ঠিকানা সংগ্রহ করা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। ৯-১০ ডিসেম্বর দু’দিন ওই কলেজ বন্ধ থাকে। ১১ ডিসেম্বর খোলার পরেই ‘বহিরাগতদের’ হামলা হয় বহরমপুর কলেজে। হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বহরমপুরের কলেজের আংশিক সময়ের শিক্ষিকা তথা জেলা পরিষদ সদস্য কংগ্রেসের সাহানাজ বেগমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঘটনার সময়ে কলেজে তাঁর উপস্থিতি ও অনুপস্থিত নিয়ে ‘বিভ্রান্তি’ তৈরি হয়। শিক্ষিকার দাবি, ঘটনার সময়ে তিনি কলেজে ছিলেন না। অন্য দিকে ঘটনার সময়ে ওই শিক্ষিকাকে দেখা গিয়েছে বলে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পাল্টা দাবি করে। কলেজের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল অবশ্য বৈঠক করে ওই শিক্ষিকার পাশে দাঁড়ায়। কলেজের মধ্যে সিসিটিভি বসানো থাকলে খুব সহজেই ওই বিভ্রান্তি এড়ানো সম্ভব হত।
এই অবস্থায় পঠনপাঠনের উপযুক্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বহরমপুর মহকুমা এলাকার ৬টি কলেজের অধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ-সহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে গত ১২ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসনিক কর্তারা বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে সিসিটিভি বসানোর সিদ্ধান্ত হয়। বহরমপুরের মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস বলেন, “বহরমপুর মহকুমা এলাকায় ছ’টি কলেজের মধ্যে বহরমপুর গার্লস কলেজ, আমতলা ও বেলডাঙা কলেজে ইতিমধ্যে সিসিটিভি রয়েছে। বাকি বহরমপুর কলেজ, কৃষ্ণনাথ কলেজ ও হরিহরপাড়া কলেজে সিসিটিভি ছিল না। ওই কলেজ কর্তৃপক্ষগুলিকে অবিলম্বে সিসিটিভি বসানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।”
নির্দেশ মেনে বহরমপুর কলেজে ১০টি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে ইতিমধ্যে। অন্য দিকে কৃষ্ণনাথ কলেজে লাগানো হয়েছে তিনটে ক্যামেরা, তা-ও ভাড়া করা। কৃষ্ণনাথ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, “সিসিটিভি বসানোর বিষয়টি নিয়ে আমরা অনেক দিন ধরেই ভাবনা-চিন্তা করছিলাম। এখন প্রশাসন যেহেতু চেয়েছে তাই মাসিক চুক্তিতে ভাড়া করে তিনটে ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।”
দুই কলেজে সিসিটিভি নিয়ে যতই গড়িমসি থাক, এর বাস্তবতা কিন্তু অনেক দিন আগেই বুঝেছিলেন বেলডাঙা শিউনারায়ণ ফতেপুরিয়া কলেজ কর্তৃপক্ষ। গত ২০১১ সালের অগস্টে দুই ছাত্র সংগঠনের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষের জেরে কলেজের সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি হেনস্থা হন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। ওই ঘটনার পরেই তড়িঘড়ি পরিচালন সমিতির বৈঠক ডেকে কলেজে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত হয়। সেই মতো কলেজে মোট ৯টি ক্যামেরা লাগানো হয়। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুজাতা মুখোপাধ্যায় বলেন, “সিসিটিভি বসানোর পরে কলেজে সেই অর্থে বড় ধরনের কোনও গণ্ডগোল হয়নি। ছাত্র সংঘর্ষও অনেকখানি কমে গিয়েছে।” নওদার আমতলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত কলেজ অধ্যক্ষ গীতালি বেরা বলেন, “আমাদের কলেজে ১৮টি ক্যামেরা রয়েছে। ছাত্র সংগঠনের সংঘর্ষ থেকে যে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতেই মূলত ওই সিসিটিভি বসানোর সিদ্ধান্ত হয়। সিসিটিভি বসানোর পরেই কলেজে সংঘর্ষ যেমন বন্ধ হয়ে গিয়েছে, তেমনই কলেজের বাগান নষ্ট থেকে ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও কমে গিয়েছে।” সুফল মিলেছে বলেই আরও কয়েকটি ক্যামেরা বসানোর চেষ্টা করছেন এই কলেজ কর্তৃপক্ষ।
‘সিসিটিভি দাওয়াই’ বহরমপুর ও কৃষ্ণনাথ কলেজেও ছাত্র সংঘর্ষ ঠেকাতে পারবে কিনা, সেটাই এখন দেখার!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy