Advertisement
E-Paper

তৃণমূলের জোড়া ডিম খেয়ে হুমায়ুনের নামে জিন্দাবাদ

মঞ্চ থেকে বড়জোর হাত বিশেক দূরে, শামিয়ানার আড়ালে গনগনে মাটির উনুনে ডিমের ডালনার প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্বে। ভাত, ঘন মুগের ডাল, আলু ভাজা, ডিমের ডালনা, টোম্যাটোর চাটনি মধ্যাহ্নভোজের আয়োজনে কোনও ত্রুটি ছিল না। দল থেকে সদ্য বহিষ্কৃত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন কবীরের খাসতালুক রেজিনগরে শাসক দলের কর্মী সম্মেলন। ‘লোক টানতে’, সম্মেলনের শুরুতে বুধবার সকালেও এক প্রস্ত জোড়া কলার সঙ্গে এক টুকরো কেক বিলিয়ে কর্মীদের মন পেতে ফাঁক রাখেননি দলীয় নেতারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৫ ০২:৫৯
বক্তা তখন মান্নান হোসেন। রেজিনগরের সভায়। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

বক্তা তখন মান্নান হোসেন। রেজিনগরের সভায়। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

মঞ্চ থেকে বড়জোর হাত বিশেক দূরে, শামিয়ানার আড়ালে গনগনে মাটির উনুনে ডিমের ডালনার প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্বে।

ভাত, ঘন মুগের ডাল, আলু ভাজা, ডিমের ডালনা, টোম্যাটোর চাটনি মধ্যাহ্নভোজের আয়োজনে কোনও ত্রুটি ছিল না।

দল থেকে সদ্য বহিষ্কৃত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন কবীরের খাসতালুক রেজিনগরে শাসক দলের কর্মী সম্মেলন। ‘লোক টানতে’, সম্মেলনের শুরুতে বুধবার সকালেও এক প্রস্ত জোড়া কলার সঙ্গে এক টুকরো কেক বিলিয়ে কর্মীদের মন পেতে ফাঁক রাখেননি দলীয় নেতারা।

কিন্তু দুপুরে, রেজিনগরের বুথ ভিত্তিক সেই কর্মী সম্মেলনে, নিজের এলাকার কথা বলতে উঠে আচমকাই সুর কেটে দিলেন নুর নবি। বেলডাঙা-২ ব্লকের ওই তৃণমূল নেতা তাঁর মিনিট পনেরোর বক্তব্য শেষে মা-মাটি-মানুষ এবং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে জয়ধ্বনির সঙ্গে অভ্যাসবশে জুড়ে দিয়েছিলেন, “হুমায়ুন কবীর জিন্দাবাদ।” যা শুনে, মঞ্চে বসে থাকা মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল সভাপতি মান্নান হোসেনের মুখ হাঁ, তাঁর পুত্র, দলের যুব নেতা সৌমিক হোসেনের কপালে ভাঁজ আর সভায় উপস্থিত দলীয় নেতা-কর্মীরা এ ওর গায়ে ঠেলা দিয়ে বলতে শুরু করেন, “সে কী রে, তৃণমূলের জোড়া ডিম খেয়ে হুমায়ুনের নামে জয়ধ্বনি!”

নবি অবশ্য তত ক্ষণে জিভ কেটে দোষ ঢাকতে মাইকের সামনে বার বার বলতে শুরু করেছেন, “অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল তো, ভুল করে বলে ফেলেছি...সরি সরি।” স্থানীয় অঞ্চল সভাপতি পরিস্থিতি সামাল দিতে তাঁর হাত থেকে মাইক প্রায় কেড়ে নিয়ে বলতে থাকেন, “কর্মীরা দুঃখিত, এটা ভুল করে হয়ে গিয়েছে। কিছু মনে করবেন না।” তবে তূণ থেকে বেরিয়ে যাওয়া তির কি ফিরিয়ে নেওয়া যায়?

এ দিন সন্ধ্যায় হুমায়ুন বলেন, “দেখলেন তো, জেলার নেতা-কর্মীরা এখনও আমাকে ভুলতে পারেননি। বহিষ্কার করলেই কি স্থানীয় কর্মীদের মন থেকে আমাকে মুছে ফেলা যায়?”

শাস্তির খাঁড়া নেমে এলেও এলাকায় যে তাঁর প্রতিপত্তি কমেনি, তা মানছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অনেকেই। দিন কয়েক আগেই তাঁর অনুগামীদের নিয়ে বড়সড় সভায় তিনি তার প্রমাণও রেখেছেন বলে মনে করছেন তাঁরা। দলের অন্দরের খবর, সোমবার রাতে, ধর্মীয় সভার নামে বাসিন্দাদের নিয়ে এলাহি আয়োজন করে তৃণমূলের মধ্যে ‘ভয়’ ধরিয়ে দিয়েছিলেন হুমায়ুন। চ্যালেঞ্জ জানাতে তড়িঘড়ি তাই পাল্টা সভা করার নির্দেশ এসেছিল তৃণমূল ভবন থেকে। জাতীয় সড়কের কোল ঘেঁষে রেজিনগর মোড়ে এ দিনের সভার আয়োজন সেই নির্দেশ মেনেই।

প্রাতরাশের পাশাপাশি তাই ডিমের ডালনা-সহ মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়েছিল। দলের এক নেতার হিসেব, “ধারণা করা গিয়েছিল পাত পড়বে প্রায় আড়াই হাজার। আয়োজন করতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের থেকে মোটা টাকা চাঁদাও আদায় করা হয়েছিল। কিন্তু লোক তেমন হয়নি।” দলের হিসেব বলছে, বড়জোর শ’পাঁচেক লোক হাজির হয়েছিলেন।

যা শুনে হুমায়ুনের অনুগামীদের দাবি, ‘দাদা’ থাকলে ব্যবসায়ীদের উপরে জুলুম করে টাকা তুলতে হত না। নিজের উদ্যোগেই সম্মেলনের আয়োজন করতেন তাঁদের দাদা। আর হুমায়ুনের টিপ্পনি, “অত আয়োজন, কিন্তু কর্মী তো হাতে গুনে শ’তিনেক। নষ্ট হবে বলে সবাইকে তাই একের বদলে জোড়া ডিম খাওয়াল তৃণমূল!”

tmc egg humayun kabir
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy