Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দশমীর সকালে ঘট বিসর্জন, শোভাযাত্রায় মাতল কৃষ্ণনগর

টেলিভিশনের কিরণমালা সরাসরি রাস্তায়। একা নয়। রাক্ষস রানি কটকটি, প্যকাটি, সেনাপতি বিটকেল থেকে আদ্দিকালের বদ্যিবুড়ি সকলেই রয়েছেন। আর তাই না দেখে বছর ছয়েকের পাবলুর কী আনন্দ। কৃষ্ণনগর শহরেই বাড়ি পাবলু। বাবা মায়ের সঙ্গে ঘট বিসর্জন দেখতে এসেছিল। ভাবতে পারেনি সত্যিই কিরণমালাকে দেখা যাবে। শিশুদের হইহই করে উঠতে দেখে গর্বের হাসি হাসলেন পুজো কমিটির এক কর্তা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৩০
Share: Save:

টেলিভিশনের কিরণমালা সরাসরি রাস্তায়। একা নয়। রাক্ষস রানি কটকটি, প্যকাটি, সেনাপতি বিটকেল থেকে আদ্দিকালের বদ্যিবুড়ি সকলেই রয়েছেন। আর তাই না দেখে বছর ছয়েকের পাবলুর কী আনন্দ। কৃষ্ণনগর শহরেই বাড়ি পাবলু। বাবা মায়ের সঙ্গে ঘট বিসর্জন দেখতে এসেছিল। ভাবতে পারেনি সত্যিই কিরণমালাকে দেখা যাবে। শিশুদের হইহই করে উঠতে দেখে গর্বের হাসি হাসলেন পুজো কমিটির এক কর্তা।

আর শুধু কি কিরণমালা, একটা গোটা ভারতবর্ষ যেন উঠে এসেছিল কৃষ্ণনগরের রাস্তায়। সেখানে হারিয়ে যাওয়া ছন্দা গায়েন থেকে সারদাকাণ্ডের সুদীপ্ত সেন, সোনার মেয়ে মেরি কম থেকে সন্ত্রাসবাদের প্রতিবাদ সব কিছুই একসঙ্গে পাওয়া গেল। একের পর এক পুজোর ঘট আর তার সামনে পেছনে সারি সারি ট্যাবলো। কোনটায় খুসির ছবি, কোনটায় সচেতনতা। হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তা। কোথাও শিশু শ্রম, কন্যাভ্রূণ হত্যার বিরোধিতা। আবার কোথাও চিরাচরিত রবীন্দ্র-নজরুল-ডিএল রায়। সেই সঙ্গে রাস্তায় ঘুরে বেড়ান অজস্র চরিত্র, যারা সরাসরি উঠে এসেছে ডিজনি ওয়ার্ল্ড থেকে। কিম্বা একেবারে লোকায়ত রাইবেশে, রণ-পা নাচ।

শনিবার সারাদিন জগদ্ধাত্রী পুজো শেষ করেও মানুষের উত্‌সাহের অন্ত নেই। রবিবার দশমী পুজো শেষ হওয়ার পরেও শুরু হয়ে যায় ঘট বিসর্জনের পালা। সারা দুপুর বিভিন্ন মণ্ডপের ঘট বিসর্জন দিতে নিয়ে যাওয়া হয় শোভাযাত্রা সহকারে। তার জন্য চলে আলাদা প্রস্তুতি। যেমন পুজো কমিটিগুলির তরফে ঠিক তেমনই পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে।

এ বছর মোট ১২৫টি পুজোকে অনুমোদন দিয়েছিল কৃষ্ণনগর পুরসভা। সব পুজোই অবশ্য ঘট বিসর্জনের শোভাযাত্রায় অংশ নেয় না। যেমন এ বছর মাত্র ৩২ টি পুজো ঘট বিসর্জনে বেরিয়েছিল। কিন্তু তাতেই দর্শকদের চোখ জুড়িয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন উদ্যোক্তারা। দূর দূরান্ত থেকে আসা দর্শকদের প্রতিক্রিয়াতেও তার নজির মেলে। কলকাতার কলেজস্ট্রিট থেকে পুজো দেখতে এসেছিলেন কল্যাণ নন্দী। তিনি বলেন, ‘‘এমনটা কিন্তু কোথাও দেখা যায় না। অনেক জায়গাতেই এখন বড় করে জগদ্ধাত্রী পুজো হয় কিন্তু কৃষ্ণনগরের ঘট বিসর্জনের এই শোভাযাত্রা একেবারেই নিজস্ব। সত্যিই মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। ছোটরা তো আনন্দ পাবেই, কিন্তু বড়রাও সমান ভাবে উপভোগ করছে। প্রতিবারই কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রতিমা বিসর্জনের দিন সকালে নানান ট্যাবলোয় সজ্জিত হয়ে বিভিন্ন বারোয়ারি শোভাযাত্রা করে কদমতলা ঘাটে যায়। আর সেই শোভাযাত্রা দেখতে সকাল থেকে দুপুর তিনটে পর্যন্ত রাজবাড়ি থেকে জলঙ্গী নদীর কদমতলা ঘাট পর্যম্ত রাস্তার দু’পাশে ভিড় করে থাকে কালো মাথার সমুদ্র। ভিড়ে মিশে নানা বর্ণের, নানা ধর্মের মানুষ।

ভিড় সামাল দিতে এ বছর মোতায়েন করা হয়েছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী। ১৫০ জন মহিলা পুলিশ, ৪০০ কনস্টবল, ১২৫ জন পদস্থ আধিকারিক সেই সঙ্গে ৪০ জন ট্রাফিক পুলিশ। পথের দু’ধারে ছিল ৩০ টি নজরদারি ভিডিও ক্যামেরা। বিভিন্ন বাড়ির ছাদে তাদের আগে থেকেই লাগনো হয়েছিল।

দুপুর তিনটে নাগাদ হাতারপাড়া বারোয়ারির ঘট বিসর্জন হয়। এ বছরের মতো শেষ জগদ্ধাত্রী পুজোর আনন্দ। না, আদৌ তা নয়। বাড়ির পথে পা মেলাতেই ভিড়ের মধ্যে থেকে উঠে এল চাপা গুঞ্জন। সন্ধ্যায় আবার প্রতিমা বিসর্জন। রাতের আঁধার নামতেই আলোয় আলোয় ভরে সাঙ বাহনে দেবী প্রতিমা একে একে এগিয়েছে ঘাটের দিকে। আর পথের দু’পাশে জোড়ায় জোড়ায় চোখ তাকিয়ে থেকেেছে অনিমেষ। রঙিন আতশবাজির রোশনাইয়ে ভরে উঠেছে চারদিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

idol immersion krishnanagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE