Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নয়া কৌশল পরিবার চলো, প্রচারে ঝাঁপাচ্ছে বিজেপি

প্রচারে অস্ত্র নরেন্দ্র মোদী আর গুজরাত মডেল। প্রবীণ বিজেপি নেতা সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় ওরফে জলুবাবুর জনপ্রিয়তার পালে সেই হাওয়া লাগিয়ে নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগর লোকসভা আসনটিতে জেতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিজেপি। লোকবল কম হলেও চেনা ছকের বাইরে রকমারি প্রচার কৌশলে বাজিমাতের আশায় রয়েছে তারা। কখনও কলেজের বাইরে মোদীর মুখোশ পড়ে লিফলেট বিলি করছেন দলের কর্মীরা।

‘পরিবার চলো’য় কর্মীরা। দক্ষিণ কালীনগরে সুদীপ ভট্টাচার্যের ছবি।

‘পরিবার চলো’য় কর্মীরা। দক্ষিণ কালীনগরে সুদীপ ভট্টাচার্যের ছবি।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৪ ০০:২৩
Share: Save:

প্রচারে অস্ত্র নরেন্দ্র মোদী আর গুজরাত মডেল। প্রবীণ বিজেপি নেতা সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় ওরফে জলুবাবুর জনপ্রিয়তার পালে সেই হাওয়া লাগিয়ে নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগর লোকসভা আসনটিতে জেতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিজেপি। লোকবল কম হলেও চেনা ছকের বাইরে রকমারি প্রচার কৌশলে বাজিমাতের আশায় রয়েছে তারা। কখনও কলেজের বাইরে মোদীর মুখোশ পড়ে লিফলেট বিলি করছেন দলের কর্মীরা। ‘পরিবার চলো’ কর্মসূচিতে বাড়ি-বাড়ি আলাপচারিতার ফাঁকে ঠিকানা,ফোন নম্বর নিয়ে নিবিড় জনসংযোগ গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। সেই ঠিকানায় পৌঁছে যাবে মোদীর চিঠি। এমনকী শেষবেলা (ভোট ১২ মে) নরেন্দ্র মোদী-সহ সর্বভারতীয় নেতৃত্ব কৃষ্ণনগরে এসে জনসভা করবেন বলেও শোনা যাচ্ছে।

কিন্তু জেলায় মাত্র দু’টো পঞ্চায়েতে একক ভাবে ক্ষমতায় বিজেপি, ৬টায় অন্য দলের সঙ্গে জোট করে। পঞ্চায়েত সমিতি দখল তো দূর, মাত্র একটি আসনে বিজেপি-র প্রতিনিধি আছে। জেলা পরিষদে তা-ও নেই। কোনও বিধানসভা আসনও নেই। তারপরেও জেতার আশা করছে কী ভাবে তারা?

বিজেপি সূত্রে খবর, জেলার দু’টি আসনরানাঘাট, কৃষ্ণনগরের মধ্যে শেষটিকেই পাখির চোখ করছে তারা। জেলা নেতৃত্বের দাবি, ২০০৮ এ পঞ্চায়েতে মাত্র ২ শতাংশ ভোট পাওয়ার পর ২০০৯ সালে কৃষ্ণনগর লোকসভায় জলুবাবু ১৬ শতাংশের উপর ভোট পেয়েছিলেন। সেখানে ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের নিরিখে বিজেপি-র ভোট প্রায় ৬ শতাংশ। ফলে এ বার ভোট আরও অনেকটাই বাড়বে বলে আশা করছে তারা। জলুবাবু বলেন, “গতবার প্রবল পরিবর্তনের হাওয়ায় সব ভোট একমুখী হয়ে গিয়েছিল। এ বার সেই পরিস্থিতি নেই। উল্টে আছে মোদী ঝড়।” বিজেপি জেলা নেতৃত্বের আশা, কৃষ্ণনগরে তৃণমূলের প্রার্থী তাপল পালকে নিয়ে দলের একাংশের ক্ষোভ, সিপিএমের ভোট কাটাকাটিতে তাদের পথ আরও সুগম হবে। নদিয়ায় বিজেপি-র জেলা সভাপতি কল্যাণ নন্দী বলেন, “১৯৯৯ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত জলুবাবু যতদিন সাংসদ ছিলেন লোকে কাজের মানুষ বলেই জেনেছিল। এ বার সাংসদ তাপসের সঙ্গে সাংসদ জলুবাবুর কাজের তুল্যমূল্য লড়াই হবে।”

পালে হাওয়া তুলতে এক-দু’মাস নয়, গত বছর দুর্গাপুজোর পরে-পরেই শুরু হয়ে গিয়েছিল বিজেপি-র প্রস্তুতি। প্রথমে নদিয়া জেলা পরিষদের আসন অনুসারে ৪৭টি অঞ্চলে অবজার্ভর ঠিক করে তাঁদের তত্ত্বাবধানে জেলার ১৭টি ব্লক, ১৮৭টি পঞ্চায়েত এবং দশটি পুরসভার ১৮৬টি ওয়ার্ডের জন্য কমিটি তৈরি হয়। ভোটের দিনক্ষণ বা প্রাথী ঠিক হয়ে যাওয়ার পরে বুথ কমিটি গড়া হয়। এখন যা পরিস্থিতি তাতে চাপড়া বা কালীগঞ্জের মতো এলাকা ছাড়া জেলার ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ এলাকায় বুথ কমিটি গড়ার আশায় রয়েছে বিজেপি। তাদের সাহায্য করার জন্য রয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)। নদিয়ার বেশ কিছু জায়গায় আরএসএস-এর ভালই সাংগঠনিক জোর রয়েছে।

চলতি বছর প্রথম দু’মাস জেলার বিভিন্ন জায়গায় ৬০টি জনসভা ও পথসভা করে বিজেপি। মোদীর ব্রিগেড সমাবেশে নতুন করে চাঙ্গা হন কর্মীরা। ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত প্রচার হয়েছে ছাত্র-যুবদের কথা মাথায় রেখে। জনা পনেরোর যুবকদল মোদীর ছবি, পদ্মফুল আঁকা জামা গায়ে মোদীর মুখোশ পড়ে জেলার প্রতিটি কলেজের সামনের রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে দলের লিফলেট বিলি করেছে। এর পরে শুরু হয়েছে পরিবার চলো, অর্থাৎ বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ভোট চাওয়া। দলে নবীনে-প্রবীণে মিলিয়ে খুব বেশি হলে চার থেকে পাঁচ জন হাতে এক গোছা লিফলেট আর একটা লম্বা ফর্ম নিয়ে যাচ্ছেন। কর্তা বাড়িতে থাকলে বৈঠকখানায় বসে কিছুক্ষণ আলাপচারিতা সেরে তাঁর নাম ও ফোন নম্বরটি খোপ কাটা ফর্মে লিখে নিচ্ছেন নেতা-কর্মীরা। যাতে পরে ফোন করে জেলা বা রাজ্যের নেতারা ওই সব পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। ওই ঠিকানাগুলিতে ডাকহরকরার বেশ পরে মোদীর চিঠি পৌঁছনোরও কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি।

প্রচারে রয়েছে আরও রকমারি কৌশল। যেমন, ৬ এপ্রিল দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে যত বেশি সম্ভব জায়গায় পতাকা তুলে ভোট চাইবে বিজেপি। বাংলা নববর্ষের ঠিক আগে পৌঁছে যাবে মোদী ক্যালেন্ডার বাড়ি-বাড়ি। এরপর শুরু হবে বড় জনসভা। রানাঘাট কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সুপ্রভাত বিশ্বাস বলেন, “নরেন্দ্র মোদী থেকে আডবানি, বরুণ গাঁধী, সুষমা স্বরাজ, হেমামালিনী, অরুণ জেটলিরা আসবেন জেলায়।” ভোটের দু’তিন দিন আগে শেষ চমক ‘এক নোট এক ভোট’। ভোটের দিন বুথ তৈরি করা থেকে কর্মীদের খাওয়া-দাওয়া বাবদ খরচ ভোটারদের কাছ থেকে তোলা হবে এই কর্মসূচিতে। ভোটারদের কাছে আবেদন হবে, ‘একটা ভোট দিন সঙ্গে একটি নোট’।

ভোটযুদ্ধে কী হবে জানা নেই, প্রচার-যুদ্ধে অন্তত নদিয়ায় পিছিয়ে নেই বিজেপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE