Advertisement
E-Paper

পাচার হইনি, বিয়ে করে সুখে আছি

ছোটবেলার প্রেম। বাবা-মা রাজি না হওয়ায় প্রেমিকের সঙ্গে বাড়ি ছেড়েছিলেন তরুণী। মেয়ের বাবা সব জেনেও থানায় প্রেমিকের বিরুদ্ধে অপহরণের পাশাপাশি পাচারের অভিযোগ জুড়ে দিয়েছিলেন। পুলিশ ছেলেকে না পেয়ে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছিল তাঁর এক আত্মীয়কে। বারবার তল্লাশি, হেনস্থা, হুমকিবাকি ছিল না কিছুই। হয়রানি থেকে নিষ্কৃতি পেতে অবশেষে আদালতে দাঁড়িয়ে মেয়ে বলে গেলেন, ‘পাচার নয়, বিয়ে করে স্বামীর সঙ্গে সুখেই আছেন’ তিনি। মেয়ের বয়ানে সন্তুষ্ট বহরমপুর আদালতের বিচারক গত বৃহস্পতিবার জামিন দিলেন ধৃত আত্মীয়কে।

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৪ ০১:০৫

ছোটবেলার প্রেম। বাবা-মা রাজি না হওয়ায় প্রেমিকের সঙ্গে বাড়ি ছেড়েছিলেন তরুণী। মেয়ের বাবা সব জেনেও থানায় প্রেমিকের বিরুদ্ধে অপহরণের পাশাপাশি পাচারের অভিযোগ জুড়ে দিয়েছিলেন। পুলিশ ছেলেকে না পেয়ে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছিল তাঁর এক আত্মীয়কে। বারবার তল্লাশি, হেনস্থা, হুমকিবাকি ছিল না কিছুই। হয়রানি থেকে নিষ্কৃতি পেতে অবশেষে আদালতে দাঁড়িয়ে মেয়ে বলে গেলেন, ‘পাচার নয়, বিয়ে করে স্বামীর সঙ্গে সুখেই আছেন’ তিনি। মেয়ের বয়ানে সন্তুষ্ট বহরমপুর আদালতের বিচারক গত বৃহস্পতিবার জামিন দিলেন ধৃত আত্মীয়কে।

ঘটনাচক্রে গত বুধবারই সুপ্রিম কোর্ট ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮ এ ধারার অপব্যবহার নিয়ে সরব হয়েছে। বধূ নির্যাতনের ঢাল হিসাবে যে আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল, তা ক্রমে একাংশের অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে জানিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সতর্ক করেছে, অভিযোগ পেলেই গ্রেফতার করা যাবে না অবিবেচকের মতো। মুর্শিদাবাদের ঘটনায় স্পষ্ট, আইনের অপব্যবহার হচ্ছে অন্যত্রও।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার দৌলতপুরের রাকেশ হালদার ও নওদার ঘোড়ামারা গ্রামের প্রতিমা মণ্ডলের ভালবাসার সম্পর্কটা স্কুল থেকে। দু’জনেই মানিকনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তেন। উচ্চ মাধ্যমিকের পরে মেয়ের বাড়ির লোকেরা ‘অসবর্ণ’ সেই সম্পর্কের কথা জানতে পেরে আপত্তি করেন। পাশের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের সেনাবাহিনীর এক কর্মীর সঙ্গে প্রতিমার বিয়ে ঠিক করেন তাঁরা। এতে তীব্র আপত্তি জানান প্রতিমা ওরফে পুতুল। তিনি বাড়িতে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, রাকেশ ছাড়া কাউকে বিয়ে করবেন না। এরপর রাকেশকে বিয়ে করে নেওয়ার প্রস্তাব দেন পুতুল। কিন্তু রাকেশ তখনও চাকরি পাননি। এই অবস্থায় প্রথমটায় বিয়েতে সায় ছিল না রাকেশের। পরে প্রেমিকার কথা ভেবেই রাজি হন তিনি। মাস দেড়েক আগে দু’জনে পালিয়ে বিয়ে করেন। পরিচিত এক জনের সঙ্গে দিল্লি চলে যান দু’জনে। সেখানে রাকেশ একটা বেসরকারি সংস্থায় চাকরিও পেয়ে যান।

এ দিকে, পুতুলের বাবা গৌতম মণ্ডল মেয়ের মনের কথা ভাল ভাবে জানা সত্ত্বেও রাকেশের বিরুদ্ধে নাবালিকা পাচার, সোনাদানা-সহ নগদ টাকা নিয়ে চম্পট দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন থানায়। রাকেশকে হাতের কাছে না পেয়ে তাঁর বাড়ির লোকদের গৌতমবাবু হুমকি দেন বলে অভিযোগ। রাকেশের বাবা দাদন হালদার বলেন, “বৌমার বাড়ির লোকেরা আমাদের হুমকি দিচ্ছিল। এমনকী আমাদের আত্মীয়দেরও হুমকি দিচ্ছিল। ভয় পেয়ে গরু-ছাগল বিক্রি করে মেয়ের বাড়ি চলে আসি।” পুলিশ তদন্তে নেমে ওই যুবককে না পেয়ে তাঁর জামাইবাবু তাপস হালদারকে গ্রেফতার করে। তল্লাশির নামে রাকেশের বাড়িতে গিয়ে বারবার হেনস্থা করা হয় বলেও অভিযোগ।

ফোনে তা জানতে পেরে প্রতিমা আদালতে গিয়ে পুরো বিষয়টি জানানোর সিদ্ধান্ত নেন। গত ৩ জুলাই প্রতিমা বহরমপুর আদালতে বিচারক পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে হাজির হয়ে বলেন, “আমার বাবা জেদের বশে আমাকে নাবালিকা সাজিয়ে পাচারের অভিযোগ এনেছেন। যা আদৌ সত্য নয়। আমি পাচার হইনি। বিয়ে করে স্বামীকে নিয়ে সুখে আছি।’’ আদালতে বয়স ও বিয়ের শংসাপত্র জমা দেন তিনি। বিচারক সব দিক খতিয়ে দেখে জামিন দেন রাকেশের জামাই তাপসকে। ছেলের বাড়ির আইনজীবী কাঞ্চনলাল মুখোপাধ্যায় ও অতীন্দ্র উপাধ্যায় বলেন, ‘‘মেয়ে আদালতে হাজির হয়ে নিজের মুখে সত্য ঘটনাটি খুলে বলেছেন। জন্ম ও বিয়ের আসল শংসাপত্র দেখে বিচারক সন্তুষ্ট। তাপস হালদারের জামিন মঞ্জুুর হয়েছে। রাকেশের জামিনের জন্য আগামী ২৫ জুলাই শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।’’ সদ্য জামিনে মুক্ত তাপস বলেন, “মিথ্যা অভিযোগে যে ভাবে দাগ পড়ল, তাতে ভবিষ্যতে চাকরি পেতে বা অন্য কাজে অসুবিধা হবে আমার। এই ভাবে মিথ্যা মামলা সাজানোর আগে মেয়ের বাড়ির লোকজনকে একটু ভেবে দেখতে বলব আমি।”

ইতিমধ্যে একটি সেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে মেয়ের সঙ্গে মেয়ের বাবার কথা হয়েছে। তাতে অবশ্য রাগ পড়েনি গৌতমবাবুর। নিজের জেদ থেকেও পিছিয়ে আসেননি তিনি। মিথ্যা পাচারের অভিযোগ করলেন কেন জানতে চাইলে প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলেন, “আমার মেয়ে আগে বাড়ি ফিরে আসুক। তারপর যা বলার বলব। এখন নয়।’’ ওই সেচ্ছাসেবী সংস্থার সভাপতি উজ্জ্বল গায়েন মেনে নেন, “পাচার বা অপহরণের ঘটনা নয়। পাত্র-পাত্রীর জাত নিয়ে সমস্যার জন্য এই গণ্ডগোল। সেটা মেটাতে দু’পক্ষের মধ্যে কথা বলিয়ে পরিস্থিতি উন্নতির চেষ্টা করছি। আশা করছি সব কিছু মিটে যাবে।”

subrata mukhopadhyay beldanga girl happy after marriage not kidnapped
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy