চাষের জমি দখলকে কেন্দ্র করে কৃষ্ণগঞ্জের ঘুঘড়াগাছিতে তাঁর নেতৃত্বেই গ্রামবাসীর উপর বোমা-গুলি চলেছিল। সেই গুলিতেই মারা যান গৃহবধূ অপর্ণা বাগ। আহত হ’ন আরও তিনজন। জেলা তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ লঙ্কেশ্বর ঘোষ, ওরফে লঙ্কা, পুলিশের কাছে তার জবানবন্দিতে এ কথা স্বীকার করেছে। গত বছর ২৩ নভেম্বর কৃষ্ণগঞ্জের ওই ঘটনার তদন্ত করে সম্প্রতি চার্জশিট আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ। তাতে দেখা যাচ্ছে, সেদিনের ঘটনায় অভিযুক্ত অপর দুই ধৃতও লঙ্কার ভূমিকার কথা জানিয়েছে পুলিশকে। নিজেদের জড়িত থাকার কথাও স্বীকার করেছে।
লঙ্কা এলাকায় জমি মাফিয়া বলে পরিচিত। মাস তিনেক আগের ওই ঘটনার দিন লঙ্কা তার দলবল নিয়ে ট্রাক্টর সমেত ঘুঘড়াগাছির একটি ২১ বিঘা জমি চাষ করতে যায়। ওই জমিটি গ্রামবাসীরা ভাগভাগি করে চাষ করছিলেন। জমি দখল হয়ে যাচ্ছে দেখে সকলে ছুটে যান। তখনই বোমা-গুলি ছোঁড়ে লঙ্কার দলবল। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন অপর্ণা বাগ (৩৮)। গুলিবিদ্ধ হন এক ছাত্র এবং আরও দুই মহিলা।
লঙ্কা ঘোষ তার জবানবন্দিতে জানিয়েছে, জমির মালিক অলোক সরকারের কাছ থেকে ঘুঘড়াগাছির ২১ বিঘা জমি ১৮ লক্ষ টাকায় সে তার পরিচিত দু’জনকে পাইয়ে দেয়। গৌতম ঘোষ ও জয়দেব ঘোষ নামে ওই দুই ব্যক্তিকে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ দেন জমির মালিক। এরপর ওই জমি দখলমুক্ত করার জন্য গৌতম ও জয়দেবের কাছ থেকে ‘কমিশন’ নিয়েছিল লঙ্কা। সেদিন জমি দখলের অভিযানেও ছিল গৌতম-জয়দেব। আরও ছিল নেপাল ঘোষ, পলাশ ঘোষ, বাসু ঘোষ, রাজকুমার ঘোষ, মানবেশ বিশ্বাস ও অন্যরা। তারা জমিতে ট্রাক্টর চালানো শুরু করলে গ্রামের লোক ছুটে আসেন। ভয় দেখাতে পরপর বোমা ছোঁড়ে লঙ্কার দলবল। তাতেও গ্রামবাসী বাধা মানেনি। ‘‘বাধ্য হয়ে গুলি চালাই,’’ দাবি করেছে লঙ্কা। তাদের গুলিতেই অপর্ণা বাগ মারা গিয়েছেন বলেও লঙ্কা স্বীকার করে নিয়েছে।
ঘটন্ার কথা স্বীকার করে নিয়েছে অন্য দুই ধৃত, পলাশ ঘোষ ও পরেশ ঘোষও। পরেশ জানিয়েছে, সে-ই লঙ্কার জমি সংক্রান্ত কাগজপত্র তৈরি করত। ঘুঘড়াগাছির ওই জমির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দু’জনের নামে তৈরি করা হলেও, জমির মালিককে নগদ ১২ লক্ষ টাকা অগ্রিম দিয়েছিল মোট আটজন। তার মধ্যে লঙ্কাও ছিল। বাকি টাকা জমি বিক্রি করে দেওয়ার কথা হয়েছিল। জমি দখলের অভিযানে সেদিন ওই আটজন-সহ আরও অনেকে ছিল। তবে পরেশ ঘোষের আইনজীবী সৌরভ ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, “যে জবানবন্দি পুলিশ চার্জশিটে জমা করেছে, সেটা সম্পুর্ণ পুলিশের মন-গড়া। এমন কোন জবানবন্দি অভিযুক্ত দেয়নি।”
তবে লঙ্কা ঘোষ-সহ অন্যান্য ধৃতদের স্বীকারোক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে জেলার আইনজীবী মহল। ২৪৭ পাতার এই চার্জশিটে ১২জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, ৪২ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। চার্জশিটে পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে মিলেছে পাঁচটি ৯ এমএম কে এফ-লেখা পিতলের খোল, একটি লাল ১২ বোরের খোল, লোহার তৈরি জালের কাটি ও কিছু পাথরকুচি, যাতে বারুদের গন্ধ লেগে ছিল। এছাড়াও প্রায় তিন ইঞ্চির লোহার তৈরি কলের পাইপ, যাতে বারুদের গন্ধ লেগে
ছিল। এগুলি ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট হাতে এলে পুলিশ অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দেবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy