Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
গাংনাপুরে অগ্নিকাণ্ড

বাজি থেকেই আগুন, বলছেন এলাকাবাসী

রেলকলোনির ঝুপড়িতে যে ভাবে অবৈধ শব্দবাজি তৈরির কুটিরশিল্প চলছে, তাতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিলই। তা সত্যি করে শনিবার রাতে নদিয়ার গাংনাপুর রেল কলোনিতে ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে তিনটি ঝুপড়ি। মৃত্যু হয়েছে এক বালিকার। আহত আরও চার। বাড়িতে বসে শব্দবাজি বানাতে গিয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে মেনে নিচ্ছেন এলাকার লোকজন।

সৌমিত্র সিকদার
রানাঘাট শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০৩
Share: Save:

রেলকলোনির ঝুপড়িতে যে ভাবে অবৈধ শব্দবাজি তৈরির কুটিরশিল্প চলছে, তাতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিলই। তা সত্যি করে শনিবার রাতে নদিয়ার গাংনাপুর রেল কলোনিতে ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে তিনটি ঝুপড়ি। মৃত্যু হয়েছে এক বালিকার। আহত আরও চার। বাড়িতে বসে শব্দবাজি বানাতে গিয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে মেনে নিচ্ছেন এলাকার লোকজন।

নদিয়ার রানাঘাট-বনগাঁ শাখার গাংনাপুর রেল স্টেশন থেকে পশ্চিম দিকে খানিকটা দূরে হাইস্কুলের সামনে বিবেকানন্দ পল্লির বাজারে মূলত চলে অবৈধ ওই শব্দবাজির কারবার। এখানে পাঁচটি বাজি তৈরির কারখানা রয়েছে। আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ওই সব কারখানাগুলিতে আতসবাজি তৈরির নাম করে অবৈধ শব্দবাজি তৈরি হচ্ছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। প্রায় চল্লিশ বছর ধরে এই কারবার চলছে। যত দিন যাচ্ছে এখানকার বাজির চাহিদা বাড়ছে।

এখন ওই সব কারখানা থেকে কাঁচামাল নিয়ে আশপাশের বস্তি ও কলোনিতে বাড়ি-বাড়ি দিয়ে আসা হয়। বাড়িতে বসেই শব্দবাজি তৈরির কুটিরশিল্প চলে। চকোলেট বোমায় সলতে ভরে তাতে লেবেল সাঁটাতে হয়। সংসারের কাজ সামলে অবসর সময়ে এই কাজ করে থাকেন মূলত বাড়ির মহিলারা। বাজি তৈরি হয়ে গেলে বস্তায় বেঁধে ভ্যানে চাপিয়ে তা আবার চলে যায় কারখানায়।

এক সময় বিবেকানন্দ পল্লিতে বাড়ি-বাড়ি এই বাজি তৈরি হত। এখন, রেলকলোনি, করসাহেবের পুকুর পাড়, ওড়াংপাড়া, শ্রীরীশনগর, গোপীনগর পূর্ব ও পশ্চিম, বিলধার পাড়া-সহ আশপাশের এলাকাতেও বাজি তৈরির কারবার ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা কবিতা হালদার বলেন, “গাংনাপুরের কারখানা থেকে আমাদের কাছে ওই সব চকোলেটগুলো দিয়ে যাওয়া হয়। খুব সামান্যই মজুরি। অভাবের সংসারে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সেই কাজই করতে হয়।” এলাকা সূত্রে জানা যাচ্ছে, শনিবার রাত আটটা নাগাদ ঘরের মধ্যে লম্ফের সামনে বসে চকোলেট বোমা বাঁধছিলেন নমিতা হালদার। পাশেই ঘুমোচ্ছিল তাঁর এক নাতনি সুজাতা। ওই ঝুপড়ি থেকেই আগুন ছড়ায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। স্থানীয় বাসিন্দা কালু ঘটক বলেন, “হঠাৎই বাজি ফাটার শব্দ শুনতে পাই। প্রথমে ভেবেছিলাম আশপাশের কোনও বাড়িতে অনুষ্ঠান উপলক্ষে বাজি ফাটছে। পরে আওয়াজ বাড়তে থাকে। বেরিয়ে দেখি আগুন লেগেছে। ভাগ্যিস সেই সময় হাওয়া ছিল না। তাহলে, আমাদের বাড়িও পুড়ে যেত।” অগ্নিকাণ্ডে তিনটি ঝুপড়ি ভস্মীভূত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে নমিতাদেবীর নাতনি সুজাতার (১০)। এ ছাড়াও আট মাসের এক শিশু-সহ চার জন আহত হয়েছে। দেবগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান তথা অঞ্চল তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি অরুণ সিকদার বলেন, “আমাদের কাছে খবর আছে গাংনাপুরে বাজির কারখানাগুলোতে আতসবাজি তৈরির নাম করে শব্দবাজি তৈরি হচ্ছে। যা চরম অন্যায়। এর তীব্র প্রতিবাদ করছি। আমরা ওই গৃহহীন পরিবার তিনটির পাশে দাঁড়িয়েছি। তাদের ত্রিপল দিয়েছি। গীতাঞ্জলি প্রকল্পে যাতে তারা বাড়ি পায়, সেজন্য প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি।”

বিবেকানন্দ পল্লির বাজি তৈরির কারখানার মালিকেরা অবশ্য শব্দবাজি তৈরির কথা মানতে চাননি। একটি কারখানার মালিক প্রবীর রায় বলেন, “কে কী বলছেন, আমি জানি না। তবে, আমরা চকোলেট বাজি তৈরি করি না। আমরা তুবড়ি, রং মশলা তৈরি করে থাকি।” আর এক মালিক নারায়ণ রায় বলেন, “আমরা কাউকে শব্দবাজি তৈরি করতে দিইনি। তবে ঘটনাটা দুঃখজনক। এক জনের মৃত্যু হয়েছে। তাই মানবিকতার খাতিরে আমরা দোকান বন্ধ রেখেছি।”

রানাঘাটের মহকুমাশাসক রাজর্ষি মিত্র বলেন, “আমি যতদূর জানতে পেরেছি, ওই বাড়িতে বাজি তৈরি হয় একথা ঠিক। কিন্তু, এই ঘটনাটি বাজির কারণে হয়নি। ঘরের মধ্যে হ্যাজাক ছিল। তা ফেটে ওই ঘটনা ঘটেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

soumitra sikdar ranaghat fire works
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE