রাতের অন্ধকারে ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত অবস্থায় এক বৃদ্ধার মাথায় ভারি কিছু দিয়ে আঘাত করে লুঠপাট করল দুষ্কৃতীরা। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে হাঁসখালির বগুলা কলেজপাড়া এলাকায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রণতি বিশ্বাস নামে ওই বৃদ্ধাকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করলেও এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বগুলা কলেজ সংলগ্ন ওই বাড়িতে প্রণতিদেবীর সঙ্গে থাকেন তাঁর তিন ছেলে। নীচের তলায় থাকেন প্রণতিদেবী ও তাঁর বড় ও মেজো ছেলে। উপরের তলায় থাকেন তাঁর ছোট ছেলে। শনিবার রাত এগারোটা নাগাদ সকলে ঠাকুর দেখে বাড়ি ফেরেন। তখন সব ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু রবিবার সকালে তিনি ঘুম থেকে না ওঠায় সকলে ডাকাডাকি করতে থাকেন। কিন্তু প্রণতিদেবীর কোনও সাড়া শব্দ না পাওয়ায় পরিবারের লোকজন সামনের দরজা কোনওমতে খুলে ভিতরে ঢুকে দেখেন, মেঝে রক্তে ভেসে যাচ্ছে। আর খাটে মশারির ভিতরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন প্রণতিদেবী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে প্রথমে বগুলা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। তাঁর ছোট ছেলে গৌতম বিশ্বাস বলেন,‘‘রাতে মা নীচের ঘরে একাই থাকেন। এ দিন সকালে সাড়া না পেয়ে দরজা খুলে দেখি মেঝে রক্তে ভেসে যাচ্ছে। খাটে মশারির ভিতরে রক্তাক্ত অবস্থায় মা পড়ে আছে। ঘরের পিছনের দরজা খোলা ছিল।’’ তিনি জানান, প্রণতিদেবীর গলায় সোনার হার আর হাতে চুড়ি ছিল। সে সবই খুলে নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। কাচের আলমারিটাও খোলা ছিল। তার ভিতরে সব কিছু এলোমেলো, ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
এই ঘটনায় উঠে এসেছে বেশ কিছু প্রশ্ন। ঘরের সামনের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। বন্ধ থাকার কথা পিছনের দরজাটিও। তাহলে কে খুলে দিল পিছনের দরজা? দুষ্কৃতীরা কি তবে আগেই ঢুকে বসেছিল? সকলে ঘুমিয়ে পড়ার পরে বৃদ্ধার মাথায় আঘাত করে লুঠপাট চালিয়ে কি পিছনের দরজা খুলে পালিয়ে গেল তারা? এরপরেই যে প্রশ্ন উঠে আসে, তবে কি পরিবার ঘনিষ্ঠ কেউ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারী আধিকারিকেরা। জেলার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, “সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে যুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।”
এই প্রথম নয়, আগেও এই কলেজপাড়ায় রাতের অন্ধকারে বাড়ির ভিতরে ঢুকে এক মাঝবয়সী মহিলা ও তাঁর বাড়িতে থাকা এক ছাত্রীকে কুপিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। ওই মহিলা শেষ পর্যন্ত বেঁচে গেলেও ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছিলেন বগুলা কলেজের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রী। মাস কয়েক আগে ওই এলাকারই এক বাড়িতে রাতের অন্ধকারে পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকে বাড়ির বৃদ্ধ দম্পতিকে নৃশংস ভাবে কুপিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। ঘটনাস্থলেই বৃদ্ধাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান ওই বৃদ্ধ। তার পরে আবারও একই ভাবে এক বৃদ্ধার ঘরের ভিতরে ঢুকে তাকে ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে লুঠপাট চালানোর ঘটনা ঘটল। এলাকায় একই রকম ঘটনা পরপর ঘটায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বাসিন্দারা।