Advertisement
১৯ মে ২০২৪

বাড়ির মেঝে খুঁড়ে নিখোঁজ বালকের দেহ

আট দিন ধরে নিখোঁজ এক বালকের মৃতদেহ উদ্ধার হল বাড়ির মাটির মেঝে খুঁড়ে। মুর্শিদাবাদের রানিতলা থানার নাজিরচক গ্রামের ঘটনা। মৃত জিব্রাইল হক (৫) গত ২০ মে থেকে নিখোঁজ ছিল। প্রথমে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করলেও পরে মৃতের মা আদরা বিবি স্বামীর প্রথম পক্ষের স্ত্রী আজেফা বিবি ও তাঁর ছেলে জাকারিয়ার বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন।

শুভাশিস সৈয়দ
রানিতলা  শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৪ ০০:২৬
Share: Save:

আট দিন ধরে নিখোঁজ এক বালকের মৃতদেহ উদ্ধার হল বাড়ির মাটির মেঝে খুঁড়ে। মুর্শিদাবাদের রানিতলা থানার নাজিরচক গ্রামের ঘটনা। মৃত জিব্রাইল হক (৫) গত ২০ মে থেকে নিখোঁজ ছিল। প্রথমে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করলেও পরে মৃতের মা আদরা বিবি স্বামীর প্রথম পক্ষের স্ত্রী আজেফা বিবি ও তাঁর ছেলে জাকারিয়ার বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ আজেফা বিবিকে গ্রেফতার করে। আদালতের নির্দেশে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতে গেলেও এই নিয়ে মুখ খোলেননি আফেজা বিবি। গত ২৬ মে গ্রেফতার হয় জাকারিয়া। পুলিশের দাবি, জেরায় ভেঙে পড়ে সে স্বীকার করে, প্রতিহিংসাবশত খুন করেছে সৎ ভাইকে।

মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “প্রতিহিংসা থেকেই ওই খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান। গলা টিপে শ্বাসরোধ করে খুনের পরে ঘরের ভিতরে প্রায় সাড়ে পাঁচ ফুট গর্ত করে মৃতদেহ মাটি চাপা দিয়েছিল জাকারিয়া। গোটা বিষয়টি তার মা আজেফা বিবি জানতেন। ধৃতদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করার পাশাপাশি প্রমাণ লোপাটেরও অভিযোগ আনা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভগবানগোলা-২ ব্লকের রানিতলা থানার নাজিরচকের সম্পন্ন চাষি হাবিবুর রহমানের প্রথম পক্ষের স্ত্রী আজেফা বিবির সন্তান জাকারিয়া শেখ। স্কুলে পড়াকালীন বাড়ি থেকে সম্বন্ধ দেখে প্রতিবেশী এক কিশোরীর সঙ্গে জাকারিয়ার বিয়ে হয়।

বিয়ের কিছু দিনের মধ্যেই জাকারিয়ার শাশুড়ি আদরা বিবির সঙ্গে বাবা হাবিবুর রহমানের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে আদরা বিবিকে নিয়ম মেনে বিয়েও করেন হাবিবুর। ওই বিয়ের পরে প্রথম পক্ষের স্ত্রী আজেফা বিবি ও তাঁর ছেলে জাকেরিয়াকে পাঁচ বিঘা জমি-সহ বাড়ি লিখে দেন হাবিবুর এবং দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীকে নিয়ে পাশেই বাড়ি বানিয়ে থাকতে শুরু করেন। দ্বিতীয় পক্ষের সন্তান জিব্রাইল। গত বছর নাবালক হওয়া সত্ত্বেও জিব্রাইলের নামে ৮ বিঘা জমি রেজিস্ট্রি করে দেন হাবিবুর।

নাজিরচক গ্রামে উঁচু পাঁচিল দেওয়া ঘেরা ওই জায়গায় প্রায় ২০-২৫ ফুট দূরত্বে পরপর দু’টো বাড়ি। গত ২০ মে সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ জমির বরবটি তুলতে হাবিবুর ও আদরা বিবি মাঠে যান। আদরা বিবি বলেন, “পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে খেলা করছিল বলে রোদের মধ্যে ছেলেকে নিয়ে মাঠে যাইনি। পরে সাড়ে ১০টা নাগাদ বাড়ি ফিরে এসে ছেলেকে দেখতে না পেয়ে খোঁজ শুরু হয়। মাইকে প্রচারও করা হয়।” সর্বত্র খোঁজ করেও ছেলের সন্ধান না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ওই সন্ধ্যায় বাবা হাবিবুর রানিতলা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন।

২১ মে তাঁর ছেলেকে অপহরণ করে লুকিয়ে রাখার আশঙ্কা প্রকাশ করে আজেফা বিবি ও জাকারিয়ার বিরুদ্ধে রানিতলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন আদরা বিবি। ওই অভিযোগ পেয়ে পুলিশ আজেফা বিবিকে গ্রেফতার করে আদালতের নির্দেশে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতে নেয়। কিন্তু পুলিশের জেরায় ওই মহিলা কোনও কথা স্বীকার করেননি।

গত ২৬ মে গ্রেফতার হয় জাকারিয়া। আদালতের নির্দেশে তার ১০ দিনের পুলিশ হেফাজত হয়। শেষ পর্যন্ত জেরায় ভেঙে পড়ে বুধবার গভীর রাতে জাকারিয়া ওই খুনের কথা স্বীকার করে বলে পুলিশের দাবি।

খুনের পিছনে কারণ কী?

পুলিশের দাবি, জেরায় জাকারিয়া জানিয়েছে—বাবা শাশুড়িকে বিয়ে করার পরে লজ্জায় বাড়ির বাইরে সে বের হতে পারত না। বন্ধু-বান্ধব থেকে আত্মীয়-পরিচিত সকলেই তাকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করত। এমনকী ওই বিয়ের পরে তার স্ত্রী-ও তাকে ছেড়ে চলে যায়। টাকা-পয়সা চাইতে গেলে বাবা তাকে বিভিন্ন ভাবে অপমান করত। অন্য দিকে ভাই জিব্রাইলকে আদর করত, বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনে এনে দিত। এই সব দেখে প্রতিশোধ নিতেই ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে সে।

জেরায় জাকারিয়া পুলিশকে বলেছে, ঘটনার দিন জিব্রাইলকে তার মা বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসেন। বন্ধ ঘরে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে সৎ ভাইকে খুন করে সে নিজে। এরপর ঘরের ভেতরে মাটি খুঁড়ে মৃতদেহ পুঁতে ফেলে। বাড়ির বাইরে তালা লাগিয়ে পাড়া ঘুরতে বেরিয়ে যান আজফা বিবি। ঘটনার পরেই কলকাতা চলে যায় জাকারিয়া। মায়ের গ্রেফতারের খবর পেয়ে গ্রামে ফিরে এলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

শুক্রবার ভগবানগোলা ২-এর বিডিও কৌশিক মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে ওই ঘরের ভেতরে মাটি খুঁড়ে মৃতদেহ তুলে ময়না-তদন্তের জন্য লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞকে দিয়ে ময়না-তদন্তের জন্য পরে ওই মৃতদেহ মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আজ, শুক্রবার ওই ময়না-তদন্ত হবে।

হাবিবুর বলেন, “উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে জাকারিয়া কলকাতার কলেজে ভর্তি হয়ে পড়াশোনার নামে ওই পাঁচ বিঘা জমি বিক্রি করে দেয়। পরে জানতে পারি কলেজে ভর্তি হয়নি। ওই টাকা নিয়ে কলকাতায় থেকে ফূর্তি করে উড়িয়েছে। গ্রামে ফিরে এখন বেকার হয়ে বাড়িতে বসে রয়েছে ছেলে। কোনও কাজকর্ম করে না। ওকে নিয়ে হতাশ ছিলাম। কিন্তু এমনটা করবে ভাবতে পারিনি।” এই ঘটনায় বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

shubhashis sayed ranitala dead body of s boy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE