বৃষ্টির জলে থই থই হাসপাতাল। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক।
আগের থেকে উন্নত হয়েছে নিকাশি ব্যবস্থা। তবু বর্ষার শুরুতেই নাকাল করিমপুর। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতেই জল জমেছে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতাল। রেগুলেটেড মার্কেটের প্রধান ফটকে কিংবা থানার সামনে জমা জলে কোথাও পায়ের পাতা ডুবে যাচ্ছে, তো কোথাও জল হাঁটু অবধি।
সামান্য বৃষ্টিতেই করুণ দশা করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের। বৃষ্টির জলের সঙ্গে মিশেছে নোংরা জল। নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের প্রায় সাড়ে চার লক্ষ মানুষ এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। প্রতিদিন প্রায় ৩৫ জন মানুষ ভর্তি হন। বহির্বিভাগে প্রায় ৪০০ মানুষ চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসেন প্রতিদিন। ভারী বৃষ্টি হলেই হাঁটুর উপরে জল জমে যায় হাসপাতাল চত্বরে। রোগীর আত্মীয় পরিজনরা বাধ্য হন জলের উপর দিয়েই যাতায়াত করতে।
গত শুক্রবার থেকে হাসপাতালে ভর্তি আছেন রসিকপুরের ইয়াকুব সেখ। তার স্ত্রী হামিরা বিবি বলেন, “স্বামীর দেখভালের জন্য আমাকে যাতায়াত করতে হচ্ছে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে হাসপাতালের সামনে নোংরা জল জমেছে। খুব অসুবিধা হচ্ছে।” করিমপুরের লক্ষ্মী পাড়ার শৈলেন স্বর্ণকারের কথায়, “গত তিন-চার দিন টানা বৃষ্টিতে হাসপাতালের নিকাশি নালার জল উপরে উঠে এসেছে। নোংরা আবর্জনা ভেসে বেড়াচ্ছে সামনের রাস্তায়। তার মধ্যেই দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে রোগী ও বাড়ির লোকজনদের।”
করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের সুপার রাজীব ঘোষ অবশ্য বলেন অবস্থা নাকি আগের থেকে অনেক ভাল। আগে নিকাশি নালার আবর্জনা সেভাবে পরিষ্কার করা হত না। এখন যতটা সম্ভব পরিষ্কার করা হয়। তাই বৃষ্টির জল ঘণ্টা দু’য়েক সময় আটকে থাকে। তবে কাজ যে আরও বেশি করতে হবে তা তিনি স্বীকার করে নেন। বলেন, “আমাদের চেষ্টার পাশাপাশি সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে। বিভিন্ন রকম পলি ব্যাগ হাসপাতালের যত্রতত্র ফেলা হয়। সে গুলো নালায় জমা হয়। যার ফলে বন্ধ হয়ে যায় নিকাশি ব্যবস্থা।”
নিকাশি ব্যবস্থা উন্নয়নের কথা বলেন করিমপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান কংগ্রেসের তারক সরখেলও। তিনি বলেন “আগে বিস্তীর্ণ এলাকায় জল জমত। গত ২ বছরে করিমপুরেরর রামকৃষ্ণপল্লি, নতুনপল্লি, মণ্ডলপাড়া প্রভৃতি এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থার সংস্কারের ফলে জল আর তেমন জমছে না। তাছাড়া, করিমপুর জগন্নাথ হাইস্কুল থেকে বাথামপাড়া মোড় এবং বাসস্ট্যান্ড থেকে জলঙ্গি নদী পর্যন্ত নতুন নালাও তৈরি করা হয়েছে। বাকি এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য এ বছর টেন্ডার ডাকা হয়েছে।”
বাস্তব চিত্র অবশ্য বলছে অন্য কথা। হাসপাতালের মতোই অবস্থা করিমপুর রেগুলেটেড মার্কেটের। এই অঞ্চলেই ভূমি সংস্কার দফতরের অফিস, দমকলের মতো জরুরী বিভাগ রয়েছে। প্রতিদিন হাজার মানুষের যাতায়াত। তাছাড়াও সপ্তাহের দু’দিন হাট বসে এখানে। করিমপুর ১ ও ২ ব্লকের বহু কৃষক তাঁদের জমির উৎপাদিত কাঁচা সবজি বিক্রি করতে আসেন। সমস্যায় পড়তে হয় তাঁদেরও। প্রতি সপ্তাহে পটল বিক্রি করতে আসেন হোগলবেড়িয়া নাসির পাড়ার সুভাষ মণ্ডল, মানিক নগরের সুজয় মণ্ডলরা। তাঁরা বলেন, বস্তা ভর্তি পটল নিয়ে সাইকেলে করেই আমরা যাতায়াত করি করিমপুর হাটে। গোটা রাস্তায় কোনও অসুবিধা হয় না। হাটে ঢোকার মুখে সাইকেল নিয়ে যাওয়া যায় না। সামান্য বৃষ্টির হলেই জল থইথই করে।
করিমপুর দমকলের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সুখেন সরকার বলেন, “বর্ষার সময়ে আগুনের ঘটনা কম থাকলেও অনেক সময়ই বিশেষ কাজে আমাদের বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। যাতায়াতের প্রধান রাস্তাই খারাপ। প্রায় সব সময় জল জমে থাকে। আমদের কর্মীরা যে কোনও কাজে বাইরে গেলে হাঁটু সমান জল পেরিয়ে যেতে হয়। রেগুলেটেড মার্কেটের আধিকারিক কে বারবার বলেও কোনও কাজ হয়নি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy