Advertisement
E-Paper

ভাঙা রাস্তার ধুলোয় অস্থির বহরমপুর

ধুলোয় ঢাকা পড়েছে আকাশ। না হবুচন্দ্র রাজার রাজ্যে নয়। খোদ বহরমপুরে ভাঙাচোরা রাস্তার ধুলো উড়ে এলাকবাসীর দমবন্ধ হওয়ার জোগাড়। রাজ্য সড়ক ও জাতীয় সড়ক, সেই সঙ্গে পুরসভার রাস্তা ত্রহ্যস্পর্শে নাভিশ্বাস উঠেছে বহরমপুরবাসীর। ধুলোর হাত থেকে রেহাই পেতে অনেকেই ‘মাস্ক’ ব্যবহার করছেন। সচেতনতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাস্কের চাহিদাও বেড়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৩১
গোধূলি আলো আর ধুলোয় ঢেকেছে জাতীয় সড়ক। বহরমপুরে গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।

গোধূলি আলো আর ধুলোয় ঢেকেছে জাতীয় সড়ক। বহরমপুরে গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।

ধুলোয় ঢাকা পড়েছে আকাশ। না হবুচন্দ্র রাজার রাজ্যে নয়। খোদ বহরমপুরে ভাঙাচোরা রাস্তার ধুলো উড়ে এলাকবাসীর দমবন্ধ হওয়ার জোগাড়।

রাজ্য সড়ক ও জাতীয় সড়ক, সেই সঙ্গে পুরসভার রাস্তা ত্রহ্যস্পর্শে নাভিশ্বাস উঠেছে বহরমপুরবাসীর। ধুলোর হাত থেকে রেহাই পেতে অনেকেই ‘মাস্ক’ ব্যবহার করছেন। সচেতনতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাস্কের চাহিদাও বেড়েছে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বিরক্ত নাগরিকরা এখন প্রায়ই নিজেদের মধ্যে মজা করে বলেন, ‘মাস্ক বিক্রেতাদের সঙ্গে গোপন আঁতাত রয়েছে বলেই রাস্তা সংস্কার হচ্ছে না’। তবে যাই হোক বিপদ মোটেও কম নয়।

পুজোর বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই বহরমপুর পুরসভার বিষ্ণুপুর রোডের বেহাল দশা। পুজোর ঠিক আগে কোনও ভাবে রাস্তায় তাপ্পি মারার কাজ করে বহরমপুর পুরসভা। কিন্তু তারপর থেকে প্রতি দিন কয়েক হাজার ভারী পণ্যবাহী লরি ও বাস চলাচল করেছে। ফলে রাস্তা আবার আগের চেহারায় ফিরে গিয়েছে। কংগ্রেস পরিচালিত পুর-কর্তৃপক্ষ অবশ্য নির্বিকার। ওই রাস্তার উপরে নিয়মিত কর আদায় করা হয়ে থাকে পণ্যবাহী লরি চালকদের।

অন্য দিকে জাতীয় সড়ক। অস্তিত্ব টিঁকে আছে শুধু ওই নামটুকুর উপরেই। রক্ষণাবেক্ষণে শূন্যের বেশি নম্বর জুটবে না ৩৪ নম্বর ওই জাতীয় সড়কের। দীর্ঘ অবহেলা ও উপেক্ষার ফলে বহরমপুরের বুক চিরে চলে যাওয়া ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সর্বাঙ্গে ক্ষত। এখানে অবশ্য তাপ্পি মারার কাজটুকুও হয়নি। কেটে গিয়েছে পুজো। সারা বছরের মত পুজোর চার দিনও ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর যাতায়াত করেছে গাড়ি ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত, ভাঙা পাথরের কুচির বাধা উপেক্ষা করে। পুজোর আগে বৃষ্টি হওয়ায় পিচের চাদর উঠে প্রায় পুকুরে পরিণত হয়েছে জাতীয় সড়কের নানা অংশ। পাশ কাটিয়েই মানুষের ঢল নেমেছে দুর্গাদর্শনে। কিন্তু বৃষ্টি থামতেই শহর গিলতে শুরু করেছে রাস্তার ধুলো।

বাস চালক থেকে নিত্যযাত্রী, স্কুল পড়ুয়া থেকে বয়স্ক মানুষ সকলেই এই ধুলোর জ্বালায় অস্থির। সবথেকে বেশি অসুবিধায় পড়েছেন অস্থায়ী দোকান মালিকরা। খোলা আকাশের নীচে তাঁদের ব্যবসা প্রতিদিন ধুলোয় ঢাকা পড়ছে। নিজেরাও নাক, মুখ ঢেকে কোনও রকমে বাঁচার চেষ্টা চালাচ্ছেন। বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে পঞ্চাননতলার দিকে যেতে এমন দৃশ্য রোজই চোখে পড়ে। শুধু অস্থায়ী দোকানদাররা নন। কোনও কোনও ব্যবসায়ী ধুলো থেকে বাঁচতে তাঁদের স্থায়ী দোকান ঘর শেষ পর্যন্ত বাড়তি অর্থ খরচ করে কাঁচ দিয়ে মুড়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন। নীলিমেশ বিশ্বাস নামে এক গাড়ির যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ী বলেন, “এমন অনেক খরিদ্দার আসেন, যাঁরা কাঁচ ঠেলে দোকানে ঢুকে যন্ত্রাংশ কিনতে অভ্যস্ত নন। ফলে ব্যবসার দিক থেকে ক্ষতি সম্ভাবনা রয়েছেই। কিন্তু ধুলোর হাত থেকে বাঁচতে কাঁচ লাগাতে হয়েছে।” আর এক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন, “জাতীয় সড়ক রীতিমতো বিপজ্জনক। পিচের চাদর উঠে গিয়ে রাস্তার নরম মাটি বেরিয়ে পড়েছে। তার উপর দিয়ে ভারী বাস, পণ্যবাহী লরি গেলেই চাকার সঙ্গে ধুলো উড়ছে। খোলা আকাশের নিচে যারা বিভিন্ন গ্যারাজে কাজ করেন, তাঁদের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ার প্রবণতাও আগের তুলনায় বেড়েছে।

সে কথা মানছেন চিকিত্‌সকেরাও। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিত্‌সক জয়দীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “বহরমপুরে শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ বাড়ছে। দীর্ঘ দিন কাশি সারছে না। সমস্যা নিয়ে অনেকেই আসছেন, এর জন্য অনেকাংশেই দায়ী ধুলো, ধোঁয়া।” জয়দীপবাব মনে করেন যাঁদের রাস্তার ধারের দোকান বা বাড়ি রয়েছে তাদের এলার্জি ও হাঁপানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বংশগত ভাবে ওই রোগ বহন করে চলেছেন এমন রোগীদের ধোঁয়া-ধুলোর সংস্পর্শ রোগের মাত্রা বা উপসর্গ বেড়ে যেতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রেও যারা ওই পথ দিয়ে নিয়মিত স্কুলে বা বিভিন্ন কারণে যাতায়াত করে, তাদেরও শ্বাসকষ্টজনিত রোগ দেখা দিতে পারে।

রাস্তা সারাইয়ের দাবিতে সম্প্রতি চুঁয়াপুরের আর্যপল্লি এলাকার বেশ কয়েকশো বাসিন্দা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। তৃণমূলও ওই একই দাবিতে প্রতিবাদে সামিল হয়। কিন্তু রাস্তা সংস্কার নিয়ে কোনও কথা শেষ পর্যন্ত হয়নি। ধুলোর সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে বহরমপুর পুরসভার বিশেষ করে মধুপুর-বিষ্ণুপুর এলাকার বাসিন্দাদের। এর পাশাপাশি কান্দি-বহরমপুর রাজ্য সড়কের বেহাল দশার কারণে রাধারঘাট থেকে উত্তরপাড়া, বহরমপুরের পঞ্চাননতলা-চুঁয়াপুর-ভাকুড়ি এলাকার বাসিন্দাদেরও নাজেহাল অবস্থা। পঞ্চাননতলা ডন বস্কো নগরের বাসিন্দা অধ্যাপক নিজাইরুল ইসলাম বলেন, “ধুলোর কারণে স্বাভাবিক ভাবে রাস্তায় যাতায়াত করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে মোটরবাইক নিয়ে বহরমপুর শহরে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। অসতর্কতায় যে কোনও সময়ে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। ক্রমাগত দূষণ বাড়ছে। অথচ সবাই নির্বিকার।”

সব থেকে ভয়ঙ্কর অবস্থা গির্জার মোড় থেকে ভাকুড়ি পর্যন্ত। জাতীয় সড়কের পিচের চাদ উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত হয়ে গিয়েছে। রাস্তার মধ্যে প্রায় আড়াই থেকে তিন ফুট পর্যন্ত গর্ত। তার উপর দিয়ে পণ্যবাহী বড় বড় লরি গেলে মনে হয় যেন চড়াই-উতরায় পেরিয়ে পাহাড়ি পাকদণ্ডী বেয়ে চলেছে। বেহাল রাস্তায় যেখানে-সেখানে লরি বিকল হয়ে পড়ে থাকছে। ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটির মালদা ডিভিশনের প্রকল্প আধিকারিক মহম্মদ সাইফুল অবশ্য বিশেষ কথা বলতে চাননি। তবে তাঁর আশ্বাস, “অবিলম্বে রাস্তা সংস্কার করা হবে।”

berhampur dust pollution
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy