Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভিটেছাড়া বারো ঘর, বিপদে আরও ৩০

শীতের গঙ্গাও পাড় ভাঙছে। নদিয়া জেলার চাকদহের সান্যালচর এলাকায় গত তিন দিন ধরে চলছে ভাঙন। এখনও পর্যন্ত ১২টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে। বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে আরও ৩০ টি বাড়ি। গৃহহীন পরিবারের মানুষরা এই শীতের রাত কাটাচ্ছেন পলিথিনের ছাউনি টাঙিয়ে। শনিবার রাতে চাকদহ ব্লকের চান্দুরিয়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ মালোপাড়ায় ভাঙন শুরু হয়। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সামান্য সময়ও পাওয়া যায়নি। চোখের নিমেষে ভয়ঙ্কর মূর্তি ধরে গঙ্গা গ্রাস করে ঘরবাড়ি। তারপর থেকে চোখে ঘুম নেই কারও।

সান্যালচরে ভাঙন দেখছেন বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র।

সান্যালচরে ভাঙন দেখছেন বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানাঘাট শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:১৯
Share: Save:

শীতের গঙ্গাও পাড় ভাঙছে। নদিয়া জেলার চাকদহের সান্যালচর এলাকায় গত তিন দিন ধরে চলছে ভাঙন। এখনও পর্যন্ত ১২টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে। বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে আরও ৩০ টি বাড়ি। গৃহহীন পরিবারের মানুষরা এই শীতের রাত কাটাচ্ছেন পলিথিনের ছাউনি টাঙিয়ে।

শনিবার রাতে চাকদহ ব্লকের চান্দুরিয়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ মালোপাড়ায় ভাঙন শুরু হয়। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সামান্য সময়ও পাওয়া যায়নি। চোখের নিমেষে ভয়ঙ্কর মূর্তি ধরে গঙ্গা গ্রাস করে ঘরবাড়ি। তারপর থেকে চোখে ঘুম নেই কারও।

মাটির রাস্তার ধারে পলিথিনের ছাউনির নীচে আস্তানা গেড়েছেন সান্যালচর দক্ষিণ মালোপাড়া এলাকায় বাসিন্দা গণেশ ঠাকুর। ডান দিকে বাঁধা রয়েছে গরু। বাঁদিকে বিছানা, খাওয়াদাওয়া। গত তিন দিন এ ভাবেই কেটেছে। গনেশবাবুর স্ত্রী আহ্লাদি ঠাকুর বলেন, “অন্যের জমিতে এভাবে ঘর বানিয়ে বসবাস করছি। গরুটাকে তো কোথায় রাখব? ”

একই ভাবে গৃহহীন তাপস বিশ্বাস বলেন, “সাধারণত শীতের সময় এ ভাবে ভাঙন দেখা যায় না। তাই, ভেবেছিলাম শীত কাটলেই অন্যত্র চলে যাব। কিন্তু, সেই সুযোগটুকুও পেলাম না। সব তলিয়ে গিয়েছে।”

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে তিন দিনের ভাঙনে এলাকার ১২টি পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে আরও কমপক্ষে ৩০টি বাড়ি। তাঁদের অধিকাংশই বাড়ি ঘর ভেঙে নিয়ে অন্যত্র যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এমনকী একটি বিদ্যুতের টাওয়ার বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। ইতিমধ্যেই ওই টাওয়ারটির বিদ্যুত্‌ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।

এই বিদ্যুতের টাওয়ারটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন। নদিয়া থেকে বর্ধমানে সাতগাছিয়ায় বিদ্যুত পরিবাহিত হয় এর মাধ্যমে। সুতরাং এটিকল হলে বেশ অসুবিধায় পড়বেন এলাকার বাসিন্দারা। যদিও রাজ্য বিদ্যুত্‌ বিভাগের (ট্রান্সমিশন) সহকারী বাস্তুকার বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এ ধরণের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন টাওয়ার আরও রয়েছে। একটির পরিবর্তে অন্যটি ব্যবহার করা সম্ভব। তাই এক্ষুণি অসুবিধা হচ্ছে না। তবে সে গুলির কোনও একটি খারাপ হলে এটির অভাব অনুভব করা যাবে।” বিশ্বনাথবাবু জানান, পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য ওই জায়গায় বোল্ডার দিয়ে বাঁধানো হচ্ছে। পরবর্তীতে ‘পাইল ফাউন্ডেশন’ করা হবে। যার ফলে নদীর মধ্যে থাকলেও কোনও ক্ষতি হবে না।

শনিবার একটি বাড়িতে একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠান চলছিল। সেখানেই গিয়েছিলেন দক্ষিণ মালোপাড়ার বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দা সরস্বতী বিশ্বাস বলেন, “হঠাত্‌ মাইকে ঘোষণা হয় ভাঙনের কথা। বাড়ি ফিরতে ফিরতে গঙ্গা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। চোখের সামনে একের পর এক ঘর নদীর গর্ভে চলে গেল। এর আগেও ভাঙন হয়েছ, কিন্তু এত অল্প সময়ের মধ্যে এভাবে ভাঙন হবে তা আমরা বুঝতে পারিনি। কিছুই বাঁচাতে পারিনি।”

সোমবার সকালে নদী পাড় থেকে মাত্র ফুট দশেক দূরে খোলা আকাশের নীচে রান্না করছিলেন বছর ৬৫ বয়েসের গৌরী বিশ্বাস। তিনি বলেন, “গত ৫০ বছরে আগে কত বাড়ি, কত খেলার মাঠ, চাষের জমি একে-একে গঙ্গায় চলে যেতে দেখেছি। আমরাও পিছিয়ে এসেছি। কিন্তু এ বার কোথায় যাব?” তাঁর ছেলে মিহির বিশ্বাস বলেন, “এক সময় আমাদের মিষ্টির দোকান ছিল। ২০১১ সালের ভাঙনে সেই দোকান গিয়েছে। এখন সব্জীর ব্যবসা করছি। নদী ঘাড়ের উপর নিশ্বাস ফেলছে। এখান থেকে সরে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই। ঘরের জিনিসপত্র রাস্তার ধারে রাখছি।”

দোকান নিয়ে দুশিন্তায় রয়েছেন মহেশ্বরী বিশ্বাস। তাঁর চায়ের দোকান এখন নদী পাড় থেকে কয়েক ফুট দূরে রয়েছে। তিনি বলেন, “নদীর পাড় না বাধালে আবার সব হারাতে হবে। এর আগে দু’বার এভাবে সর্বস্বান্ত হয়েছি। জানি না এবার কি হবে!”

স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের ইতিকা বিশ্বাস বলেন, “বিঘা দশেক চাষের জমিও নদীতে চলে গিয়েছে। এই এলাকার ২৫০টি পরিবার নদীর আশপাশে রয়েছে। তাঁদের জন্য গীতাঞ্জলি প্রকল্পের ২০০টি ঘরের জন্য আবেদন জানিয়েছি। এখনও প্রশাসনের কাছ থেকে আশ্বাস পাইনি।”

তবে এভাবে যে গীতাঞ্জলি প্রকল্পের আওতায় বাড়ি বানিয়ে দেওয়া যায় না তা জানিয়ে দিয়েছেন বিডিও। সোমবার দুপুরে এলাকা পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন চাকদহের ভারপ্রাপ্ত বিডিও তপজ্যোতি বিশ্বাস। তিনি বলেন, “ওই এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রিপল, শীতের কম্বল-সহ অনান্য বস্ত্র দেওয়া হয়েছে। গৃহহীনদের জমি দিয়ে তার পাট্টা দেওয়া যায় কিনা সেটা দেখা হচ্ছে। কারণ, নিজস্ব জমি না থাকলে গীতাঞ্জলি প্রকল্পে ঘর দেওয়া যায় না।”রানাঘাটের সেচ আধিকারিক প্রণব সামন্ত অবশ্য ভাঙনের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, “ওই এলাকার ভাঙনের বিষয়টি আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। আমি খোঁজ খবর নিয়ে উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের জানাব, যাতে ভাঙন রোধে কিছু করা যায়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

soil erosion ranaghat nadia sanyalchar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE