ভাড়াটের ঘরে নিমন্ত্রণ ছিল। শনিবার রাতে তারপর থেকেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন নদিয়ার ধানতলা থানার আড়ংঘাটার শবদলপুর গ্রামে কালাচাঁদ রায় ও তাঁর স্ত্রী, কিশোরী কন্যা, পুত্র, বৌমা এবং নাতনি সহ পরিবারের ৬ জন। রবিবার সকালে শবদলপুরে তাঁদের বাড়ির নিজেদের ঘর থেকেই বেহুঁশ অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করা হয়। তাঁদের ঘরের আলমারি খোলা ছিল। লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছিল জিনিসপত্র। ভাড়াটেদের কোনও সন্ধান মেলেনি। জেলা পুলিশ সুপার অণর্র্ব ঘোষ বলেন, “প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে ওই ভাড়াটিয়ারা কালাচাঁদবাবুর পরিবারের সকলকে বেহুঁশ করে জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়েছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি চালান হচ্ছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।” কালাচাঁদবাবুদের গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে অসুস্থরা এখনও স্বাভাবিক অবস্থায় না আসায় ঠিক কী ঘটেছিল ও কত কী খোয়া গিয়েছে তা পরিষ্কার করে জানা যাচ্ছে না। কোনও অভিযোগও এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি।
ওই ভাড়াটে পরিবারের কারও নাম পর্যন্ত জানা যায়নি। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই ভাড়াটিয়া পরিবারটি কারও সঙ্গে মেলামেশা করতেন না।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রৌঢ় কালাচাঁদবাবু গাড়ির ব্যবসা করেন। তাঁর তিন তলা বাড়ি। তিন তলাতে তিনি সপরিবারে থাকেন। দোতলা ও একতলা ভাড়া দেন। দোতলাতে মাস দেড়েক আগে ভাড়া এসেছিল যে পরিবারটি, তারাই শনিবার রাতে কালাচাঁদবাবুদের খাওয়াদাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ করে। ওই পরিবার দু’টো ঘরে থাকত। একটি ঘরে থাকতেন পরিবারের কর্তা ও তাঁর স্ত্রী। পাশের ঘরে থাকতেন দুই যুবক। যাঁদের ওই ভাড়াটে পরিবারের কর্তা ভাইপো ও ভাগনে বলে ডাকতেন। তাঁদের একজন আবার নিজেকে ‘কবিরাজ’ বলেও পরিচয় দিয়েছিলেন। কর্তা নিজেকে ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। তবে তাঁদের মূল বাড়ি কোথায় তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা এই ঘটনার পরে জানান, কালাচাঁদবাবুর নতুন ভাড়াটে পরিবার কখনও বলত তাঁদের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগণার কাকদ্বীপে, আবার কখনও বলত বর্ধমানের কালনায়।
তবে এই পরিবারের সঙ্গে কালাচাঁদবাবুদের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল দ্রুত। কালাচাঁদবাবুর ছেলে বাপ্পা রায়ের শ্যালক রাজু সরকার বলেন, “এটা আমি জানি যে, ভাড়া দেওয়ার সময় ওই পরিবারের কর্তার কাছ থেকে তাঁর ভোটের সচিত্র পরিচয়পত্র নিয়েছিলেন কালাচাঁদবাবু। পরে দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে সেই পরিচয়পত্র তাঁদের ফিরিয়েও দেওয়া হয়।” এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কালাচাঁদবাবুদের কেউই কথা বলার মতো অবস্থা ছিলেন না তাঁরা। তবে রাজুবাবুর দাবি, আকার ইঙ্গিতে তাঁর বোন জানিয়েছেন, নিমন্ত্রণ করে নিয়ে গিয়ে ঠান্ডা পানীয় খাইয়ে তাঁদের বেঁহুশ করে দেওয়া হয়। তারপরে কী হয়েছে তা তাঁরা জানেন না।
বাপ্পা ট্রেকারের ব্যবসা করেন। সকালে তাঁকে ফোন করে কোনও উত্তর না পেয়ে বাপ্পার ট্রেকারের চালক রাজু সাহা ওই বাড়িতে গিয়ে সকলকে বেহুঁশ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের খবর দেন। চলে আসেন বাড়ির অন্য ভাড়াটিয়ারাও। খবর যায় পুলিশের কাছেও।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই বাড়িতে ভাড়াটিয়া থাকত বলে তত গুরুত্ব গিয়ে কারও উপর নজর দেওয়া হয়নি। তবে দু’টি ছেলেকে মাঝে মাঝে আসা যাওয়া করতে দেখা যেত। তবে তাঁদের এলাকার কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে তাঁদের দেখা যেত না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy