Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

মুচলেকা দিয়েও নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা পরিবারের

নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দেবেন না বলে পুলিশের কাছে মুচলেকা দেওয়ার পরেও ফের তলে-তলে বিয়ের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলেন বাবা। স্কুলের শিক্ষিকাদের সাহায্যে ওই নাবালিকা সে কথা ফের পৌঁছে দিল পুলিশকে। বাবাকে ফের ডেকে মুচলেকা লেখাল পুলিশ।

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
বেলডাঙা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৪২
Share: Save:

নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দেবেন না বলে পুলিশের কাছে মুচলেকা দেওয়ার পরেও ফের তলে-তলে বিয়ের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলেন বাবা। স্কুলের শিক্ষিকাদের সাহায্যে ওই নাবালিকা সে কথা ফের পৌঁছে দিল পুলিশকে। বাবাকে ফের ডেকে মুচলেকা লেখাল পুলিশ।

ঘটনাটি মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার খিদিরপুর গ্রামে। নাবালিকা ওই পাত্রী স্থানীয় অখণ্ডা নন্দ বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। বয়স চোদ্দো সবে। তার এক দিদি ও এক বোন আছে। বছর দু’য়েক আগে বড় মেয়ের সঙ্গে কলকাতায় মোজাইকের কাজ করা মিস্ত্রি পাত্রের বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন বাবা। কিন্তু বড় মেয়ে পড়াশোনা করতে চায় বলে সেই বিয়ে ভেস্তে দেয়। কথা রাখতে সম্প্রতি ওই পাত্রের সঙ্গেই মেজ মেয়ের বিয়ে দেওয়ার তোড়জোড় শুরু করেন বাবা। ১৮ এপ্রিল, শুক্রবার বিয়ে ঠিক হয়। কিন্তু বিয়েতে মোটেই মন ছিল না ওই নাবালিকার। কান্নাকাটি করছিল সে। দিন চোদ্দো আগে তার হয়ে স্কুলের শিক্ষিকারা বিডিওকে খবর দেন। এরপর বিডিও-র লোকজন ও পুলিশ এসে বিয়েটা আটকে দেয়। মেয়ের বাবা থানায় গিয়ে মুচলেকা দেন, সাবালিকা না হওয়া পর্যন্ত মেয়ের বিয়ে দেবেন না তিনি।

অভিযোগ, বাড়িতে ফিরেই মেজ মেয়ের উপর চোটপাট শুরু করেন বাবা। ওই নাবালিকার কথায়, “বাবা থানা থেকে ফিরে মারধর করে। শুক্রবার যেমন কথা ছিল, তেমনই ওই ছেলের সঙ্গে আমার বিয়ে হবে বলে জানিয়ে দেয়। কাউকে যাতে বলতে না পারি তার জন্য বাড়ি থেকে বেরোন বন্ধ করে দেয়। এমনকী স্কুলেও যেতে দিচ্ছিল না।”

বৃহস্পতিবার স্কুলে প্রথম ইউনিট টেস্টের ভৌত বিজ্ঞানের মৌখিক পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা দেবে বলে জোর করে ওই ছাত্রী স্কুলে আসে। এরপর কাঁদতে-কাঁদতে সহপাঠী ও শিক্ষিকাদের গোটা ঘটনাটা খুলে বলে। ওই ছাত্রীর কথায়, “আমি পড়াশোনা করতে চাই। যে ছেলের সঙ্গে আমার বিয়ের কথা চলছে, সেই ছেলের সঙ্গে আমার বড় দিদির বিয়ে ঠিক হয়েছিল দু’বছর আগে। কিন্তু দিদি আপত্তি তুলে বিয়ে বন্ধ করে। দিদি এখন বিএড পড়ছে। আমিও দিদির মতো পড়তে চাই।”

স্কুলের শিক্ষিকা আনিন্দিতা মোদক বলেন, “মেয়েটা ফোঁপাচ্ছিল। জিজ্ঞাসা করতেই কেঁদে বলে এবার পুলিশে খবর দিলে ওর বাবা মেরে ফেলবে। আমরা সাহস জুগিয়ে পুলিশে খবর দিই।” স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুদেষ্ণা সিংহ বলেন, “দিন দশ-বারো আগে ওই নাবালিকার জোর করে বিয়ের কথা আমিই প্রশাসনে জানিয়েছিলাম। পুলিশ মধ্যস্থতা করার পরেও ওই মেয়ের বাবা কী সাহসে বিয়ের আয়োজন করছিল বুঝলাম না।”

শুক্রবার থানায় এসে অবশ্য মেয়ের বাবা হক সেদ আলি শেখ বলেন, ‘‘একবার লিখিত মুচলেকা দেওয়ার পর মেয়ের বিয়ের চেষ্টা করিনি আর। মেয়ে ভুল বুঝছে আমাকে।” ‘চেষ্টা করলে ফল খারাপ হবে’ বলে মেয়ের বাবাকে এ দিন ফের সতর্ক করে দিয়েছে পুলিশ। বেলডাঙার ওসি অরূপ রায় বলেন, ‘‘লুকিয়ে নিয়ম না মেনে যাতে কিছুতেই ওই বিয়ে না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকব আমরা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

child marriage sebabrata mukhopadhay beldanga
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE