সরকারি হাসপাতালে নিখরচার মাতৃযানে টাকা চাওয়ায় প্রতিবাদ করেছিলেন এক যুবক। ‘শিক্ষা দিতে’ হাসপাতাল চত্বরেই বেধড়ক পেটানো হল তাঁকে। আজমাইল শেখ নামে মুর্শিদাবাদ জেলার রঘুনাথগঞ্জ থানার জরুর গ্রামের ওই যুবককে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে মঙ্গলবার বিকেলে। মাতৃযানের চালক ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে রঘুনাথগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ জানানো হলেও এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।
বিদ্যুতের কাজের মিস্ত্রি আজমাইল জানান, বোন পিঙ্কি বিবির এক বছরের ছেলে রহেদ আলিকে গত ১১ ফেব্রুয়ারি জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরদিন সে সুস্থ হয়ে হাসপাতালেরই মাতৃযানে বাড়ি ফেরে। বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার পর মাতৃযানের চালক পিঙ্কি বিবির কাছ থেকে ১০০ টাকা চান। তিনি দিতে না চাইলে জোর-জবরদস্তি করে চালক ওই টাকা নেন বলে অভিযোগ। আজমাইলের কথায়, “আমি টেলিফোনে সমস্ত ঘটনা হাসপাতালের রোগী সহায়তা কেন্দ্রে জানালে লিখিত অভিযোগ জমা দিতে বলে ওরা। কয়েকদিন পর গত ৭ মার্চ মাতৃযানের নম্বর-সহ লিখিত অভিযোগ জমা দিই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। মঙ্গলবার একটি অচেনা নম্বর থেকে আমাকে ফোন করে তদন্তের নামে জঙ্গিপুর হাসপাতালে ডাকা হয়। বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ হাসপাতালে গিয়ে দেখি ওই মাতৃযান চালক তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে বাইরের গেটে দাঁড়িয়ে আছেন। ৪ জন আমাকে হাসপাতালের রান্নাঘরের কাছে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। আমি কোনও রকমে পালিয়ে হাসপাতালের মধ্যে ঢুকে যাই। পরে এক বন্ধুর সাহায্যে থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দিই।”
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে প্রসূতি ও শিশুদের (এক বছর পর্যন্ত) হাসপাতালে যাতায়াতের বিনামূল্যে পরিষেবা দিতে মাতৃযান রয়েছে। জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে এই রকম ৭টি মাতৃযান রয়েছে। হাসপাতালের সুপার শাশ্বত মণ্ডল বলেন, “মাতৃযানে ওঠার জন্য কোনও পয়সাকড়ি লাগার কথা নয়। তবু ইদানীং পয়সা-কড়ি আদায়ের কিছু অভিযোগ কানে আসায় আমরা রোগী সহায়তা কেন্দ্রের কর্মীদের সক্রিয় করি। গত মাসে মাতৃযানের সুবিধা নিয়েছেন এমন কিছু প্রসূতির কাছে খোঁজ খবর করে দেখা যায় অনেকের কাছেই টাকা নেওয়া হয়েছে। এদের একজন লিখিত অভিযোগ করায় সংশ্লিষ্ট মাতৃযানের মালিককে শো-কজও করা হয়েছে। উত্তর পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অভিযুক্ত মাতৃযানের মালিক বিউটি বেগম অবশ্য বলেন, “গাড়ির চালকদের রোগীর পরিজনরা কেউ কেউ কিছু বখশিস দেন। এক্ষেত্রেও মাতৃযানের চালক হয়তো সেরকমই ১০০ টাকা নিয়েছে। তবু এটা ঠিক হয়নি। অভিযোগ করায় প্রতিবাদীকে ডেকে এনে মারধর কোনও মতেই সমর্থনযোগ্য নয়। পুলিশে অভিযোগ হয়েছে। পুলিশ যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে।”
বস্তুত, মাতৃযানে টাকা চাওয়ার অভিযোগ এটাই প্রথম নয়। শুধু জেলা নয়, রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে এর আগেও এমন অভিযোগ উঠেছে। তবে, লিখিত অভিযোগ না হওয়ায় আগে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। শুধু টাকা চাওয়াই নয়, মাতৃযান চালকদের বিরুদ্ধে তেলের খরচে কারচুপি, টাকা নিয়ে সাধারণ যাত্রী তোলা-সহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সেই জন্য জিপিএস লাগানোর কথাও ভাবা হচ্ছে। মুর্শিদাবাদ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অজয় চক্রবর্তী বলেন, “মাতৃযানের বিরুদ্ধে পয়সা কড়ি আদায়ের অভিযোগ পেলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার সরকারি নির্দেশ রয়েছে। অভিযোগ করার জন্য প্রতিবাদকারীকে মারধর তো আরও অন্যায়। অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy