রাজ্যে বিদ্যুতের চাহিদা গত বছরের চেয়ে অনেকটাই বেড়েছে। চাহিদা বেড়েছে বিহার ও ওড়িশাতেও। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন ঠিক রাখতে গিয়ে মাফিয়াদের দাপটে কয়লার জোগান নিয়ে সঙ্কটে পড়েছে ফরাক্কার এনটিপিসি।
ফরাক্কায় এনটিপিসির ২১০০ মেগাওয়াটের ৬টি ইউনিটের জন্য বছরে ১০.৬ মিলিয়ন টন কয়লা আসে ইস্টার্ন কোল ফিল্ডসের রাজমহলের ক্যাপটিভ কয়লাখনি থেকে। কয়লা আনার জন্য খনি থেকে ফরাক্কার প্ল্যান্ট পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার নিজস্ব রেললাইন পেতেছে এনটিপিসি। কিন্তু ওই রেলপথের ৩৪ কিলোমিটার থেকে ৫৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বারহেট, পাতরার মতো এলাকায় কয়লার রেককে দাঁড় করিয়ে মাফিয়ারা কয়লা লুঠ করছে বলে অভিযোগ। এই ব্যাপারে ফরাক্কার এনটিপিসি কর্তৃপক্ষ বার বার অভিযোগ জানিয়েছেন ঝাড়খন্ডের পুলিশ প্রশাসনের কাছে। কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি।
ফরাক্কার জেনারেল ম্যানেজার পি কে বান্দ্রিয়া বলেন, “প্রয়োজনীয় কয়লার সিংহভাগই আসে রাজমহল থেকে। কিন্তু গত দু’বছর ধরে মাফিয়া রাজ শুরু হয়েছে ঝাড়খন্ডের সাহেবগঞ্জ এলাকা জুড়ে। কখনও রেললাইনের ফিসপ্লেট খুলে, কখনও অন্য কারসাজি করে কয়লাবোঝাই রেকের বগি বেলাইন করে দেওয়া হচ্ছে। কখনও রেক দাঁড় করিয়ে দু’-তিন ঘণ্টা ধরে কয়লা লুঠ চলছে। খনি থেকে ফরাক্কা প্ল্যান্টে কয়লা আসার কথা তিন ঘণ্টায়। কিন্তু এই অত্যাচারে ফরাক্কায় সেই কয়লা আনতে ছ’-সাত ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। ফলে প্রতিদিন ৫ রেক কয়লার পরিবর্তে আসছে মাত্র ২ রেক।”
এনটিপিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, ফরাক্কা ইউনিট থেকে ৩৩ শতাংশ বিদ্যুৎ পায় পশ্চিমবঙ্গ, বিহার পায় ২০ শতাংশ। বাকি বিদ্যুৎ যায় ঝাড়খন্ড, সিকিম, ওড়িশা-সহ অন্যত্র। গত বছর অগস্টে পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়ায় ৬টি ইউনিটের ৫০০ মেগাওয়াটের ১টি ইউনিট বন্ধ রাখতে হয়। বাকি ৫ টিতে ১৬০০ মেগাওয়াটের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন নামিয়ে আনা হয় ১১২৫ মেগাওয়াটে। এ বারে পশ্চিমবঙ্গ প্রাপ্য ৩৩ শতাংশ বিদ্যুৎ না নিতে পারলেও গত বারের থেকে চাহিদা বেড়ে ২৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বিহারেও চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ শতাংশ। স্বভাবতই বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ায় প্রয়োজনীয় কয়লার জোগান জরুরি হয়ে পড়েছে।
ফরাক্কা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার অসিত মুখোপাধ্যায় জানান, মাত্র দু’মাস আগে মাফিয়ারা ঝাড়খন্ডের বারহেটের কাছে ফিসপ্লেট খুলে দেওয়ায় ৬টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে উল্টে যায়। রেকের ৩ হাজার টন কয়লা লুঠ করে নেয় দুষ্কৃতীরা। একই ভাবে তার কদিন আগেও উল্টে দেওয়া হয় কয়লা বোঝাই রেকের ৬টি বগি। সেই উল্টে থাকা বগির সিল করা দরজার ফাঁক দিয়ে ঢুকে ভিতর থেকে কয়লা বের করতে গিয়ে কয়লার স্তুপে চাপা পড়ে ওই এলাকার দু’জন শিশু। তাদের মধ্যে একজন মারা যায়, অন্য জন গুরুতর জখম হয়। এর ফলে মাফিয়াদের মদতে এলাকায় অশান্তি ছড়ায়। যার জেরে তিন দিন বন্ধ থাকে কয়লার জোগান। প্রতিনিয়ত এই ঘটনার মোকাবিলা করতে গিয়ে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে হচ্ছে এনটিপিসি-র কর্তাদের।
অসিতবাবু বলেন, “আগে রেকের সঙ্গে ৮ জন করে সিআইএসএফ জওয়ানকে নজরদারির জন্য পাঠানো হত। এখন ৩০ জন করে জওয়ান পাঠাতে হচ্ছে। কিন্তু জওয়ানদের সামনেই রেক থামিয়ে কয়লা লুঠ হচ্ছে। কারণ জওয়ানরা লাঠি কিংবা গুলি চালাতে গেলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওই এলাকার একাধিক থানার ওসি, সাংসদ, বিধায়ক-সহ রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। তাঁরা কয়লা লুঠ বন্ধের আশ্বাস দিলেও এখনও প্রতিদিন ৩৩ হাজার টন কয়লার ২০ শতাংশ লুঠ হচ্ছে।”
ঝাড়খন্ডের সাহেবগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার সুনীলকুমার ভাস্কর বসেন, “এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানাগুলিতে একাধিক মামলা রুজু হয়েছে। তাছাড়া প্রতিটি কয়লাবোঝাই রেকের সঙ্গে সিআইএসএফ জওয়ান মোতায়েন থাকে। তারপরেও কেন কয়লা লুঠ হচ্ছে তা দেখা হচ্ছে। এই ব্যাপারে এনটিপিসি কর্তাদের সঙ্গেও কথা বলব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy