দেশ ভাগের ছয় দশক পরও ওপার বাংলা থেকে আসা বহু শরণার্থী সুষ্ঠু পুনর্বাসন পাননি। প্রতি পনেরো দিন অন্তর বিনা মূল্যে তাঁদের কেজি তিনেক চাল-গম-ডাল দেওয়ার কথা সরকারের। কিন্তু গত দেড় বছর ধরে সরকারি সেই ত্রাণ নিয়মিত মিলছে না। ফলে কার্যত অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে নদিয়া জেলার প্রায় চারশো শরণার্থীকে।
দেশভাগের পর ওপার বাংলা থেকে দলে দলে শরণার্থী এ পার বাংলায় চলে আসেন। এঁদের সিংহভাগকেই পুনর্বাসন দেয় সরকার। কিন্তু সংখ্যায় স্বল্প হলেও এখনও অনেকে পুনর্বাসনের আওতায় আসেননি। তাঁরা পনেরো দিন পরপর বিনামূল্যে তিন কেজি চাল, চার কেজি গম ও ৪০০ গ্রাম করে মুসুরের ডাল পান। জেলা উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরের মাধ্যমে বিনা পয়সায় এই চাল-গম বিতরণ করা হয়। নদিয়া জেলার ধুবুলিয়া, চামটা, কুপার্স, রানাঘাট ও চাঁদমারি ক্যাম্পের প্রায় ৪০০ জন বাসিন্দা সরকারি এই সুবিধা পান। জেলা উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতর খাদ্য দফতরের কাছ থেকে বিপিএল দরে ওই চাল-গম কেনে।
কিন্তু গত বছর জেলার পাঁচটি ক্যাম্পের উদ্বাস্তুরা নিয়মিত ত্রাণ পাননি। ধুবুলিয়ার ৬ নম্বরের বাসিন্দা চম্পা দে জানান, ২০১৩ সালে বরাদ্দ পাননি তাঁরা। ২০১৪ সালের প্রথম দিকে একসঙ্গে বেশ কিছু চাল-গম পেয়েছেন শুধু। উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতর সূত্রের খবর, ২০১৩ সালে খাদ্য দফতর চাহিদা মতো চাল-গম দেয়নি। তাই বছরের শেষে দফতর নিজেই টেন্ডার ডেকে বাজার মূল্যে চাল-গম কিনে উদ্বাস্তুদের মধ্যে বিতরণ করে। চলতি বছরে এখনও অবধি উদ্বাস্তু পুর্নবাসন দফতর চাহিদা মতো চাল-গম পাচ্ছে না। ফলে লোকজন ঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণ চাল-গম-ডাল পাচ্ছেন না। উদ্বাস্তু দফতরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘আগে খাদ্য দফতর আমাদের চাহিদা মতো চাল-গম-ডাল দিত। কিন্তু বছর দেড়েক ধরে চাহিদার অর্ধেক মাল দিচ্ছে। ফলে আমরা উদ্বাস্তুদের সঠিক সময়ে চাল-গম দিতে পারছি না। আবার বছরের শেষে ছাড়া আমরা টেন্ডারও ডাকতে পারছি না। তাই চলতি বছরে সমস্যা চলবেই। বছরের শেষের দিকে টেন্ডার ডেকে সমস্ত মাল উদ্বাস্তুদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।’’
খাদ্য দফতর চাল-গম-ডাল দিতে পারছে না কেন? জেলা খাদ্য দফতরের নিয়ামক অসীমকুমার নন্দী বলেন, ‘‘ওয়েলফেয়ার স্কিমের মাধ্যমে আমরা উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরকে বিপিএল দরে চাল-গম দিই। বছর দু’য়েক ধরে নদিয়া জেলায় ওই স্কিমে বেশ কিছু নতুন প্রকল্প অর্ন্তভুক্ত হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ রয়ে গিয়েছে আগের মতোই। তাই ওয়েলফেয়ার স্কিমের আওতায় যে সমস্ত প্রকল্প রয়েছে, সব ক’টিতে আমরা চাহিদা মতো রেশন সামগ্রী দিতে পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy