Advertisement
E-Paper

রাস্তা নরক, এখনও ডাকা হল না টেন্ডার

এবড়ো- খেবড়ো রাস্তা দিয়ে যেতে গিয়ে জোর ঝাঁকুনি লাগল। অটোর পিছনের আসনে বসা মায়ের কোল থেকে প্রায় ছিটকে পড়ে যাচ্ছিল সদ্যোজাত শিশু। সোমবার দুপুরের ওই ঘটনায় চমকে ওঠেন সহযাত্রীরা। শিশুকে বুকে চেপে ধরে কাঁপতে থাকেন তরুণী মা-ও। অল্পের জন্য তাঁর সন্তান বাঁচলেও, মধুপুর-বিষ্ণুপুর রোডের বেহাল দশার জন্য দুর্ঘটনা নিত্যদিনের ঘটনা। বহরমপুর ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে খবর, গত দুই মাসে ওই রাস্তায় দুর্ঘটনায় পড়েছে ৪৫টি গাড়ি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৪ ০১:৪৮
বেহাল রাস্তায় এ ভাবেই যাতায়াত করে ভারী গাড়ি। বহরমপুরে গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।

বেহাল রাস্তায় এ ভাবেই যাতায়াত করে ভারী গাড়ি। বহরমপুরে গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।

এবড়ো- খেবড়ো রাস্তা দিয়ে যেতে গিয়ে জোর ঝাঁকুনি লাগল। অটোর পিছনের আসনে বসা মায়ের কোল থেকে প্রায় ছিটকে পড়ে যাচ্ছিল সদ্যোজাত শিশু। সোমবার দুপুরের ওই ঘটনায় চমকে ওঠেন সহযাত্রীরা। শিশুকে বুকে চেপে ধরে কাঁপতে থাকেন তরুণী মা-ও। অল্পের জন্য তাঁর সন্তান বাঁচলেও, মধুপুর-বিষ্ণুপুর রোডের বেহাল দশার জন্য দুর্ঘটনা নিত্যদিনের ঘটনা। বহরমপুর ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে খবর, গত দুই মাসে ওই রাস্তায় দুর্ঘটনায় পড়েছে ৪৫টি গাড়ি।

কবে এই ভয়ানক অভিজ্ঞতা শেষ হবে, তারও ঠিক নেই। কারণ, পুরসভা রাস্তা সারানোর টেন্ডার ডাকার প্রক্রিয়া সবেমাত্র শুরু করেছে। কবে সারানোর কাজ শুরু হবে, কেউ জানে না।

গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে মধুপুর-বিষ্ণুপুর রোড এতটাই বেহাল হয়ে পড়েছে যে বহরমপুর-নিমতলা রুটের অটো চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার মুখে। অটো চালকদের কথায়, “দশ-বারো চাকার বড় বড় পণ্যবাহী লরি যখন রাস্তা খারাপের কারণে বিকল হয়ে পড়ে থাকছে, তখন অটো নিয়ে যাতায়াত করা মুশকিল। বেহাল রাস্তায় অটো চালাতে গিয়ে প্রতিদিনই কোনও না কোনও যন্ত্রাংশ কিনতে হচ্ছে।”

বর্ষার শুরুতেই যাতায়াতের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে ওই রাস্তা। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সপ্তাহ দুয়েক আগে সাময়িক ভাবে ইটের খোয়া ফেলে রাস্তা সংস্কারের চেষ্টা করে বহরমপুর পুরসভা। কিন্তু প্রতিদিন ভারী পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলের কারণে দু’দিনের মধ্যেই রাস্তা ফের আগের চেহারায় ফিরে গিয়েছে।

অথচ ওই রাস্তা দিয়েই কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়, ডন বস্কো, প্রভারানির মত ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে স্কুলের গাড়ি যাতায়াত করে। রাস্তার বেহাল দশার কারণে ১০ চাকার পণ্যবাহী একটি লরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গত শুক্রবার এক স্কুল ভ্যানের পিছনে ধাক্কা মারার উপক্রম করে। স্কুল ভ্যানের মধ্যে থেকে আর্ত চিৎকার করে কাঁদতে থাকে খুদে পড়ুয়ারা। ওই দৃশ্য দেখে পথচারী, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নেমে চিৎকার করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত কোনও রকমে লরি দাঁড় করায় চালক। অল্পের জন্য বাঁচে শিশুরা।

বিভিন্ন গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রির দোকান মধুপুর-বিষ্ণুপুর রোডের ধারে পরপর রয়েছে। ওই ব্যবসায়ীদের কথায়, রাস্তার কারণে বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড চত্বর থেকে এই রাস্তায় কেউ আসতে চাইছে না। ফলে আগের থেকে বেচাকেনাও অনেক কমে গিয়েছে। আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী নীলিমেশ বিশ্বাস বলেন, “দোকানের সামনে মোটরবাইক দাঁড় করিয়ে খরিদ্দার কোনও কিছু কেনাকেটা করবেন, তারও উপায় নেই। কারণ ফুটপাথও ভেঙে রাস্তায় চলে গিয়েছে। সেই সঙ্গে পাথর উঠে গিয়ে রাস্তায় বিছিয়ে পড়ে রয়েছে। বাস ও লরির চাকায় লেগে ওই পাথর ছিটকে জখম হয়েছেন অনেকেই। দোকানে আগের থেকে বিক্রি কমে গিয়েছে।”

যদিও পুরসভা ওই রাস্তায় ‘টোল-ট্যাক্স’ আদায় করে থাকে। ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ, রাস্তার কারণে ব্যবসা লাটে উঠেছে। অথচ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কয়েক হাজার পণ্যবাহী গাড়ির কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা টোল ট্যাক্স আদায় করছে পুর-কর্তৃপক্ষ। পুরসভা ওই কর আদায়ের জন্য এক জন ঠিকাদারকে দায়িত্ব দিয়েছে, তিনি আবার ৪০-৪৫ জন কর্মী রেখে কর আদায় করছেন। রয়েছে সিসিটিভিও। কিন্তু যার জন্য কর আদায়, সেই রাস্তা সংস্কারের কোনও পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত পুরসভা করেনি।

ফলে পুরসভার বিরুদ্ধে বহরমপুরের নাগরিকদের অসন্তোষ বাড়ছে। মধুপুর-বিষ্ণুপুর রোডের ওই দুর্দশা নিয়ে বার বার আবেদন করা হলেও কোনও সুরাহা হয়নি। এলাকার বাসিন্দাদের কথায়, গত কয়েক মাসে ওই রাস্তায় দুর্ঘটনার সংখ্যাও বহু গুণ বেড়েছে। গর্তে পড়ে সরকারি-বেসরকারি বাস থেকে ছোট গাড়ি, এমনকী বাইকও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। খানা-খন্দে ভরা ওই রাস্তা দিয়ে এখন দ্রুত গতির গাড়ি চলাচল করতেই পারছে না। রাস্তায় বড় বড় গর্ত। উঠে গিয়েছে পিচের চাদরও। কোথাও কোথাও গর্ত এতটাই বড় যে, তাতে চাকা পড়লে গাড়ি উল্টে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

বহরমপুর ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দু’মাসে ওই রাস্তায় দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে ৪৫টি গাড়ি। বাড়ছে যান জটও। প্রাণহানির আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে। ওই রাস্তা লাগোয়া ব্যবসায়ী মহলও আশঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পণ্যবাহী লরি বা বাস তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এসে কখনও না ঢুকে পড়ে!

বেহাল রাস্তা ও যানজটের কারণে ওই রাস্তা এড়িয়ে চলার কথা বলেন পঞ্চাননতলার এক মোটরবাইক শো-রুমের মালিক হিমাদ্রি দাশ। তিনি বলেন, “ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত নরকযন্ত্রণা ভোগ করার সামিল। কিন্তু গোরাবাজার থেকে বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড হয়ে মধুপুর-বিষ্ণুপুর রোড পেরিয়ে গাড়ি নিয়ে আসতে মাত্রাতিরিক্ত সময় লেগে যায়। তার মধ্যে কোনও লরি খারাপ হয়ে রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে থাকলে ভয়াবহ যানজটে আটকে পড়ে থাকতে হয়। সেই সঙ্গে রয়েছে পঞ্চাননতলা রেলগেট বন্ধ থাকলে বাতানুকূল গাড়ির মধ্যে বসেও ঘামতে হয়। ফলে ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা বন্ধ করে দিয়েছি।”

সড়ক বিশেষজ্ঞদের কথায়, প্রতি দিন ছোট-বড় বিভিন্ন ধরণের গাড়ি এবং বাস মিলিয়ে অসংখ্য যানবাহন ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। ফলে প্রতি দিন অত্যধিক গাড়ির চাপ নিতে না পারায় কিছু দিন অন্তর ওই রাস্তা বসে গিয়ে খানাখন্দ তৈরি করছে। ওই ধরণের গাড়ি চলাচলের জন্য যে ধরণের পোক্ত রাস্তা তৈরি করা উচিত, ওই রাস্তা সে ভাবে তৈরি করা হচ্ছে না। বৃষ্টির জলে রাস্তার নিচের মাটি নরম হয়ে যাচ্ছে। রাস্তা সংস্কারের ক্ষেত্রে অন্তত দু’তিন বার পিচের প্রলেপ অথবা ম্যাস্টিক অ্যাসফল্টের ব্যবহার প্রয়োজন।

মুর্শিদাবাদ জেলা পূর্ত দফতরের (সড়ক) নির্বাহী বাস্তুকার মুস্তাফা কামাল বলেন, “ওই রাস্তার নিচের মাটির ভার বহন করার ক্ষমতা আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা উচিত। এমনও হতে পারে পিচের তলা দিয়ে জল ঢুকে মাটি নরম করে দিচ্ছে। ফলে মাটির জমাট ভাব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ওই ধরণের জনবহুল ও ব্যস্ততম রাস্তা সংস্কারের ক্ষেত্রে অন্তত দু’তিন বার পিচের প্রলেপ বা ম্যাস্টিক অ্যাসফল্টের ব্যবহারেরও প্রয়োজন রয়েছে।”

পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য আশ্বাস দিয়েছেন, “রাস্তা তৈরির জন্য টেন্ডার ডাকা হবে। তার কাজ চলছে। এ বার পোক্ত রাস্তা তৈরি হবে।”

berhampore no tender called road is like hell
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy