নিহত অপর্ণা বাগের বাড়িতে বিমান বসু।
কৃষ্ণগঞ্জের ঘুঘড়াগাছির ঘটনায় তৃণমূলকে বেনজির আক্রমণ করল সিপিএম ও বিজেপি। বৃহস্পতিবার গ্রামের ভিতরে নিহত অপর্ণা বাগের বাড়ির একেবারে পাশের মাঠে সভা করলেন রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। বিমানবাবু যখন সভা করে বেরিয়ে যাচ্ছেন ঠিক তখনই গ্রাম থেকে সামান্য দূরে জঘাটা মোড়ে চলছিল বিজেপির সভা। এ দিন ওই সভায় ছিলেন এ রাজ্যের বিজেপির একমাত্র বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য।
ঘটনার পর আহত রাজীব মণ্ডল ও শ্যামলী তরফদারকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল থেকে স্থানান্তরিত করা হয় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। শ্যামলীদেবীকে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। কিন্তু সেখানেও তাঁর সঠিক চিকিত্সা হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন তাঁর পরিবারের লোকজন। অন্য দিকে রাজীবকে নীলরতনে ভর্তি নেওয়াই হয়নি। সাড়ে চার ঘণ্টা তাঁকে ফেলে রাখার পরে রাজীবকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
আহতদের এই চিকিত্সার বহর দেখে বিমানবাবুর কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তো স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি প্রচার করেন সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। অথচ এক হাসপাতালে শ্যামলীদেবীর চিকিত্সা হচ্ছে না। অন্য হাসপাতাল তো রাজীবকে ভর্তিই নিল না। শেষে আমাদের ছেলেরাই তাকে অন্যত্র নিয়ে এল।” এ দিন বিমানবাবু ঘুঘড়াগাছির নিহত ও আহতদের পরিবারের হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দেওয়ার পাশাপাশি চিকিত্সা সংক্রান্ত সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
আহতদের পরিবারের সদস্যরা জানান, এই ক’দিন চিকিত্সার জন্য তাঁদের চড়া সুদে টাকা ধার করতে হয়েছে। শ্যামলীদেবীর স্বামী উত্তমবাবু বলেন, “এমনিতেই আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তার উপরে এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া, ওষুধ কেনাএ সব করতে গিয়ে প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। এত ধার ও সুদের টাকা কী করে শোধ করব বুঝতে পারছি না।”
তবে বামফ্রন্টের তরফে জানানো হয়েছে, আহতের চিকিত্সার জন্য তারা আর্থিক সাহায্য করেছে। প্রয়োজনে আরও সাহায্য করা হবে। এ দিকে বিজেপির শমীকবাবুও বলেন, “আমরাও আহতদের চিকিত্সার জন্য সবরকম ভাবে সাহায্য করব। কলকাতার হাসপাতালে আমি নিজে গিয়ে আহতদের সঙ্গে দেখা করে আসব।”
যা শুনে শ্যামলীদেবী ও রাজীব মণ্ডলের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, “তাহলে তো খুবই ভাল হয়। বিশ্বাস করুন, কলকাতার মতো অচেনা জায়গায় এসে আমরা খুবই বিপদে পড়ে গিয়েছি।”
এ দিন আহত ও নিহতদের পরিবারের পাশে থাকার অঙ্গীকারের পাশাপাশি দু’ দলই নিজেদের রাজনৈতিক মাটি শক্ত করার জন্যও মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছে। বিমানবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মা-মাটি-মানুষ। মা খুন হয়েছে, মাটি রক্তাক্ত হয়েছে আর মানুষের কোনও মূল্য নেই। এখানেও সেই একই চিত্র দেখা গেল। যে জমির জন্য এখানে প্রাণ গেল, যে ভাবেই হোক সেই জমি রক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।” তাঁর কটাক্ষ, “লঙ্কেশ্বর তৃণমূলের সাহায্য নিয়ে এখানে তো লঙ্কা-কাণ্ড বাধাতে চেয়েছিল। এখানে লঙ্কেশ্বরের দোসর আবার লক্ষ্মণ!”
শমীকবাবু বলেন, “তাপসী মালিক ও নন্দীগ্রামে যাঁরা নিহত হয়েছেন তাঁদের পরিবারের চোখের জলের সঙ্গে অপর্ণা বাগের সন্তানদের চোখের জল আলাদা নয়। তৃণমূল এখন লঙ্কার পিতৃত্ব অস্বীকার করছে। এখন তৃণমূল লঙ্কাকে ‘আমাদের নয়’ বলছে। কত জন লঙ্কাকে এ ভাবে অস্বীকার করবে?”
শমীকবাবু বলেন, “তৃণমূল তো এখন পুলিশকে শাখা সংগঠনে পরিণত করেছে। একের পর এক মহিলা খুন হচ্ছেন, ধর্ষিতা হচ্ছেন। অথচ মহিলা কমিশনকে কোনও পদক্ষেপ করতে দেখেছেন? সদস্যরা তো এখন শাহরুখ খানের সঙ্গে পা মেলাতে ব্যস্ত।”
সারদা-কাণ্ডে নাম না করে মদন মিত্র ও শুভাপ্রসন্নকে এক হাত নিয়েছেন শমীকবাবু। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, “একমাত্র তৃণমূলের তাপস পালেরই সত্যি কথা বলার সত্ সাহস রয়েছে। আয়নার সামনে তিনি দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘আমি একটা মাল’।” এ দিন বিজেপির মঞ্চে নিহতের স্বামীও ছিলেন।
রবিবারের ঘুঘড়াগাছির ওই ঘটনার পরে গ্রামে সব দল গেলেও এখনও পর্যন্ত সেখানে পা পড়েনি তৃণমূলের। সোমবার গ্রাম থেকে প্রায় আট কিমি দূরে সভা করেছিল শাসক দল। শেষ পর্যন্ত গ্রামে অন্য দলের ভিড় দেখে ‘চাপে’ পড়ে আজ, শুক্রবার গ্রামে সভা করার কথা জেলা তৃণমূলের। সেই মতো প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করার কথা স্থানীয় ব্লক তৃণমূল সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোষচৌধুরীর। বৃহস্পতিবার গ্রামের একাংশ অবশ্য বলেন, “লক্ষ্মণবাবু এ বার কী সাফাই দেন তা শোনার জন্য আমরাও মুখিয়ে আছি।”
বৃহস্পতিবার সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy