Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সাগরদিঘিতে অনাস্থা স্থগিতে নির্দেশ প্রশাসনের

সাগরদিঘিতে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আকলেমা বিবির বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিলেন দলের সদস্যেরাই। শুক্রবারের সেই অনাস্থা সভা শেষ মুহূর্তে স্থগিত করে দিলেন জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসক প্রিয়াঙ্কা শিংলা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাগরদিঘিতে পথসভা করে স্থানীয় তৃণমূল নেতা সামশুল হুদা এই ঘটনাকে প্রশাসনের ‘নির্লজ্জ দলবাজি’ বলে উল্লেখ করে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ০১:২৪
Share: Save:

সাগরদিঘিতে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আকলেমা বিবির বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিলেন দলের সদস্যেরাই। শুক্রবারের সেই অনাস্থা সভা শেষ মুহূর্তে স্থগিত করে দিলেন জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসক প্রিয়াঙ্কা শিংলা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাগরদিঘিতে পথসভা করে স্থানীয় তৃণমূল নেতা সামশুল হুদা এই ঘটনাকে প্রশাসনের ‘নির্লজ্জ দলবাজি’ বলে উল্লেখ করে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মহকুমাশাসককে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে পঞ্চায়েত আইনের ১০১(৩) ধারা বলে অনাস্থা সভা ডেকে কোনও অবস্থাতেই উচ্চ আদালতের নির্দেশ ছাড়া তা স্থগিত রাখা যায় না। তাই শুক্রবার সমস্ত সদস্য সভায় হাজির হবেন এবং সভা করবেন। মহকুমাশাসক প্রশাসনিক পর্যবেক্ষককে সভায় পাঠাবেন। না হলে মহকুমাশাসকের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হবে।”

অনাস্থা সভা স্থগিত রাখার ঘটনায় ক্ষুব্ধ কংগ্রেস ও সিপিএমও তৃণমূলের বিক্ষুব্ধদের পাশেই দাঁড়িয়েছে। ব্লক কংগ্রেস সভাপতি অলোক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এ রাজ্যে যেন তালিবানি প্রশাসন চলছে। হঠাৎ করে এ ভাবে সভা বন্ধ করে দেওয়া মানে শাসকদলকে সুযোগ করে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।” সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য জ্যোতিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শাসকদলকে তুষ্ট করতেই প্রশাসনের এই পদক্ষেপ। এটা করে পঞ্চায়েত আইনকে লঙ্ঘন করা হল। সাগরদিঘির মানুষ সব ঘটনা দেখছেন।” সভা স্থগিতের কারণ হিসেবে মহকুমাশাসক অবশ্য বলছেন, “সভাপতি আকলেমা বিবি লিখিত ভাবে বৃহস্পতিবার আমার কাছে অভিযোগ করেছেন যে, তাঁর দলের সদস্যদের জোর করে আটকে রাখা হয়েছে এবং অনাস্থার নোটিসে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। তাই ১৪ নভেম্বর অনাস্থার সভা স্থগিত রেখে ২১ নভেম্বর অনাস্থার সমর্থক ১১ জন সদস্যকে আমার সামনে হাজির হয়ে শুনানিতে যোগ দেওয়র জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছে।”

সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতিতে ৩৩টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ১৬, কংগ্রেস ৯ ও বামেরা ৮টি আসন দখল করে। পরে কংগ্রেস ও বামেদের ২ সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। এই অবস্থায় তৃণমূল দুই গোষ্ঠীতে ভাগ হয়ে যায় সাগরদিঘিতে। গত ২৭ অক্টোবর পঞ্চায়েত সমিতির দলীয় সভাপতির বিরুদ্ধে মহকুমাশাসকের কাছে দলনেতা কিনার হোসেন-সহ ১১ জন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল সদস্য অনাস্থার নোটিস জমা দেন। নোটিস পেয়ে সভাপতির তরফে সাগরদিঘি থানায় পুলিশের কাছে একটি অভিযোগও দায়ের করা হয়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে সাগরদিঘি থানার পুলিশ ওই ১১ জন সদস্যের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের জবানবন্দিও নেন ২৯ অক্টোবর। তাঁরা অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। মহকুমাশাসকের নির্দেশে ২৯ অক্টোবর অনাস্থার প্রস্তাবক পঞ্চায়েত সমিতির ১১ জন সদস্যের কাছে গিয়ে সাগরদিঘির বিডিও দেবব্রত সরকার তাঁদের সকলেরই স্বাক্ষর মিলিয়ে দেখেন এবং মহকুমাশাসকের কাছে একটি রিপোর্টও পাঠান। তারপরেই মহকুমাশাসক ১৪ নভেম্বর অনাস্থা সভার দিন ঘোষণা করে চিঠি পাঠান পঞ্চায়েত সমিতির ৩৩ জন সদস্যের কাছে।

অনাস্থার সমর্থক সদস্যদের স্বাক্ষর পরীক্ষার কথা স্বীকার করলেও মহকুমাশাসক এ দিন বলেন, ‘‘সদস্যদের আটকে রেখে স্বাক্ষর করানোর অভিযোগটি যেহেতু অত্যন্ত গুরুতর, তাই ১৪ নভেম্বর অনাস্থা সভা করা ঠিক হবে না।” সদস্যদের জোর করে আটকে রাখা হলে সেই অভিযোগ তো সাগরদিঘি থানায় পুলিশের কাছে করার কথা। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত থানায় তো কেউ কোনও অভিযোগ করলেন না? মহকুমাশাসকের কাছে অবশ্য সে প্রশ্নের কোনও সদুত্তর মেলেনি।

পঞ্চায়েত সভাপতি আকলেমা বিবি বলেন, “এর আগে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হলেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তাই এবার পুলিশের কাছে না গিয়ে মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। তার ভিত্তিতে তিনি সভা স্থগিত রেখেছেন। সভা স্থগিতের দায় মহকুমাশাসকের, আমাদের নয়।”

অনাস্থা এনেছেন যাঁরা, তাঁদের অন্যতম তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির দলনেতা কিনার হোসেন বলেন, “সংখ্যাগরিষ্ঠতা নাই দেখে পঞ্চায়েত সভাপতি কলকাতা হাইকোর্টে মামলার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। তার জন্য সময়ের সুযোগ করে দিতেই এই ভাবে প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে সভা স্থগিত করা হয়েছে পঞ্চায়েতের আইন ভেঙে। আমি মহকুমাশাসককে ফোন করে অনাস্থা সভা স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য বলেছি। না হলে পথে নামব এবং আদালতে যাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tmc panchayat no confidence motion sagardighi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE