Advertisement
E-Paper

সামনে টানা তিন দিন ছুটি, প্রচারে ঝাঁপাচ্ছে সব দলই

পরপর তিন দিন ছুটি। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই তাই বাড়ি বাড়ি প্রচারে একরকম ঝাঁপিয়েই পড়ল সব ক’টি দলের প্রার্থীরাই। সব দলের নেতা-কর্মীদের কথায় মোটামুটি একই সুরউৎসবের মরসুম। এখন মানুষ বাড়িতে পাড়ায় আনন্দের মেজাজে থাকবেন। তাই এই সময়টা হাতছাড়া করতে চান না কেউই।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৪ ০১:১৫
দেওয়াল লিখতে ব্যস্ত প্রার্থী নিজেই। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

দেওয়াল লিখতে ব্যস্ত প্রার্থী নিজেই। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

পরপর তিন দিন ছুটি। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই তাই বাড়ি বাড়ি প্রচারে একরকম ঝাঁপিয়েই পড়ল সব ক’টি দলের প্রার্থীরাই। সব দলের নেতা-কর্মীদের কথায় মোটামুটি একই সুরউৎসবের মরসুম। এখন মানুষ বাড়িতে পাড়ায় আনন্দের মেজাজে থাকবেন। তাই এই সময়টা হাতছাড়া করতে চান না কেউই।

তার উপরে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের বহু ভোটারই নিত্যযাত্রী। কেউ রোজ আশেপাশের এলাকা থেকে কৃষ্ণনগরে যান। কেউ নিত্য কৃষ্ণনগর বা তার আশপাশের এলাকা থেকে কলকাতা যাতায়াত করেন। সেক্ষেত্রে তাঁদের কাছে পৌঁছতে গেলে ছুটির দিন ছাড়া উপায় নেই। সেই সুযোগটাই কাজে লাগাতে চাইছেন তৃণমূল থেকে বিজেপি বা সিপিএম। অনেক দলের সক্রিয় কর্মীরাই আবার নিত্যযাত্রী। পেশার কারণে তাঁদের রোজ বাসে বা ট্রেনে কর্মস্থলে যাতায়াতের ধকল নিয়ে হয় সপ্তাহে ছ’দিন। তাঁরাও তাই এই সময়টাই বেছে নিয়েছেন দলের হয়ে ভোটের প্রচারে নামতে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, “এমন টানা ছুটি ভোটের আগে তো বারবার আসবে না। তাই প্রচারের জন্য এমন সুযোগ আমরা হাতছাড়া করব না। বিশেষ করে নিত্যযাত্রীদের সহজে পাওয়া যাবে না। তাতে তাঁদের যেমন প্রচারে নামানো যাবে, তেমনই যাঁরা সাধারণ ভোটার, সেই সব নিত্যযাত্রীদের কাছে পৌঁছন যাবে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে-র কথাতেও একই সুর। তিনি বলেন, “আমরা প্রচারের নাম দিয়েছি ‘মিট দ্য ভোটার।’ এই টানা ছুটিতে কেবল বাড়ি বাড়ি প্রচারই আমরা করব না, সেই সঙ্গে দলের যে সব কর্মী অফিস খুলে গেলে আর তেমন ভাবে সময় দিতে পারবেন না, তাঁদের দিয়েও প্রচারের কাজ যতটা সম্ভব করিয়ে নেওয়া হবে।”

যেমন, যাঁরা দেওয়াল লিখনে দক্ষ শিল্পী, তাঁদের কদর এই ক’দিনে খুব বেড়েছে। এমন অনেকেই রোজ কলকাতা বা অন্য কোথাও চাকরির জন্য সপ্তাহভর ব্যস্ত থাকেন। এই সময়টায় তাঁরা যতটা সম্ভব দেওয়াল লিখন সেরে ফেলতে চান। একটি রাজনৈতিক দলের এমনই এক কর্মী অরিন্দম দাস বলেন, “দেওয়াল লিখনে সময় লাগে। বন্ধুদের বসে দিয়েছিলাম, দেওয়াল চুনকাম করে তৈরি রাখতে। এ দিন সন্ধ্যা থেকেই রং তুলি নিয়ে লিখতে শুরু করে দিয়েছি।” এখন দোলের সময়। তবে সব দলই লক্ষ রাখছে, যাতে দেওয়াল লিখনের উপরে দোলের রং না পড়ে। সে জন্যও পাড়ায় পাড়ায় যেন অলিখিত নজরদারি শুরু হয়ে গিয়েছে।

সিপিএম প্রার্থী শান্তনু ঝা বৃহস্পতিবার থেকে প্রচার শুরু করেছেন। বিজেপির সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রচার পরে শুরু করলেও অনেক আগে থেকেই তিনি বিভিন্ন এলাকায় কর্মিসভা করা শুরু করেন। সোমবার থেকে তৃণমূল প্রার্থী তাপস পাল আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রচার শুরু করেন। সব দলেরই প্রচার ক্রমশ তুঙ্গে উঠতে শুরু করে দিয়েছে আর এই তিন দিন যে তা চরম আকার নেবে, তা স্বীকার করে নিচ্ছে সব দলই। সিপিএমের সুমিতবাবু যেমন বলেন, “ভোটারদের একটা বিরাট অংশ নিত্যযাত্রী। সেই কারণে তিন দিনের টানা ছুটিতে আমরা প্রচারে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি।”

আবার বিজেপি এবারের প্রচারের কৌশল হিসাবে ‘পরিবার চলো’ কর্মসূচি নিয়েছে। দলের কর্মীরা এলাকার প্রতিটি বাড়ি পৌঁছে যাবেন। পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেবেন লিফলেট বা প্রচারপত্র। সেই সঙ্গে সংগ্রহ করা হবে সেই বাড়ির কোনও ফোন নম্বর। সেই নম্বর পৌঁছে যাবে জেলা নেতৃত্বের কাছে। এরপরে জেলা কার্যালয় থেকে সেই নম্বরে ফোন করে দেখা হবে, সত্যি দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী সেই বাড়িতে গিয়েছিলেন কি না। তারপরে সেই বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে প্রার্থী ও নরেন্দ্র মোদীর ছবির একটি ক্যালেন্ডার। বিজেপি এর জেলা সভাপতি কল্যান নন্দী বলেন, “টানা তিন দিনের ছুটি। প্রচার শুরুর মুখে এমন সুযোগ আমরা হেলায় হারাতে চাই না। কারণ এই সময়ের মধ্যে যত বেশি সংখ্যক নিত্যযাত্রীদের কাছে পৌঁছে গিয়ে আমাদের ‘পরিবার চলো’ কর্মসূচি বাস্তবায়িত করে ফেলতে হবে।” দোলের দিন তাঁরা কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করব।”

আবার তৃণমূলও এই ছুটির দিনগুলিকে কোনও ভাবেই নষ্ট করতে রাজি নয়। শুরু হয়ে গিয়েছে দেওয়াল লিখন থেকে ফ্লেক্স টাঙানোর কাজ। দোলে প্রার্থী নিজের বাড়িতে পুজোয় ব্যস্ত থাকবেন। কিন্তু তার পর দিন এতটুকু সময় নষ্ট না করে মূলত নিত্যযাত্রীদের কথা মাথায় রেখে সকাল থেকে শহরের বুকে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে পুরোদমে প্রচার শুরু করে দেবেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, “আমাদের কর্মীদের পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছি, এই ছুটির দিনগুলিতে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে।” তাঁর কথায়, “দোলের দিনেও রং খেলার মাধ্যমে জনসংযোগ গড়ে তুলতে আর উৎসবের মেজাজে থাকায় মানুষের সঙ্গে কথা বলাও সহজ হবে।”

তবে প্রধান রাজনৈতিক দল গুলি যখন ছুটির দিন গুলিতে প্রচারের কাজ অনেকটাই এগিয়ে রাখতে চাইছেন তখন কংগ্রেস কর্মীরা কার্যত বেকার। এখনও তাদের প্রার্থী ঘোষণা না হওয়ায় নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থেকে অন্যের প্রচার দেখা ছাড়া, তাদের আর কিছু করার নেই।

sushmit halder tapas pal krishnanagar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy