ডোমকলের এসডিপিও অরিজিৎ সিংহ। —নিজস্ব চিত্র।
দুই পুলিশকর্তা, ভিন্ন দুই ছবি।
মালদহের পুকুরিয়াতে অভিযোগ উঠেছে, ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ পেয়ে থানাতেই সালিশি করেছে পুলিশ। পড়শি জেলা মুর্শিদাবাদের রানিনগরের দেখা গেল উল্টো চিত্র। এক নাবালিকাকে ধর্ষণ নিয়ে গ্রামে সালিশি সভা হচ্ছে, খবর পেয়ে তড়িঘড়ি পৌঁছে গেল পুলিশ। সভা থেকেই গ্রেফতার করল অভিযুক্তকে। শুক্রবার বহরমপুর সিজেএম আদালত অভিযুক্তের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয়।
কী ঘটেছিল রানিনগরে? রানিনগর থানার পুলিশ জানিয়েছে, রানিনগর ২ ব্লকের খাসতালুক গ্রামে বুধবার সকাল ১০টা নাগাদ বসেছিল সালিশি। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধানের বারান্দার ওই সভায় এক কোণে বসেছিল দশম শ্রেণির পড়ুয়া। অন্য দিকে বসে ধর্ষণে অভিযুক্ত বছর বিয়াল্লিশের বাবলু শেখ। ভিড় উপচে-পড়া সভায় নাবালিকার মুখ থেকে অত্যাচারের বিবরণ শোনেন মাতব্বরেরা। অভিযুক্তের জরিমানা ধার্য হয় নগদ ১২ হাজার টাকা।
ওই সালিশি সভার খবর পৌঁছয় ডোমকলের এসডিপিও অরিজিৎ সিংহের কাছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ওই গ্রামে পুলিশ পাঠান। ধর্ষণে অভিযুক্ত বাবলু শেখকে পুলিশ ওই সভা থেকেই গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবার এসডিপিও জানান, ওই নাবালিকার মেডিক্যাল পরীক্ষা হবে। সালিশিতে যাঁরা ছিলেন তাঁদের খোঁজ চলছে। তাঁদের বিরুদ্ধেও মামলা হবে।
প্রতিবেশী বাবলু গত এক মাস ওই কিশোরীকে একাধিকবার ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ কিশোরীর পরিবারের। বিষয়টি জানাজানি হলে ওই কিশোরীকে খুন করার হুমকিও দেয় বাবলু। শেষ পর্যন্ত ওই ছাত্রী এক আত্মীয়াকে জানায়। কেন থানায় অভিযোগ করলেন না? ওই ছাত্রীর মা বলছেন, “এই গ্রামে মাতব্বররাই তো শেষ কথা বলেন। তাঁরা যখন সালিশি সভায় বিচারের কথা বললেন, আমরা না করতে পারিনি। তবে পুলিশ ওকে গ্রেফতার করায় আমরা খুশি।”
আর ওই ছাত্রীর কথায়, “সালিশিতে সকলের সামনে আমাকে গোটা ঘটনার কথা বলতে হয়েছে। এর থেকে মরে যাওয়াই বোধহয় ভাল ছিল। আমি ওর চরম শাস্তি চাই।”
সালিশি করে ধর্ষণের মিটমাট করায় অবশ্য অন্যায় কিছু দেখছেন না গ্রামের মাতব্বররা। দুই প্রাক্তন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মজিবর সরকার ও মনসুর সরকার বলেন, “এতে অন্যায়ের কী আছে? গ্রামের শান্তি বজায় রাখতে এরকম সভা তো হামেশাই হচ্ছে। এ নিয়ে প্রশাসনের এত মাথাব্যথা কেন?”
তবে গ্রামের একাংশ সালিশির বিরুদ্ধে। তাঁদের কথায়, “এখানে আগেও ধর্ষণের সালিশি হয়েছে। থানা-পুলিশ না করে স্রেফ জরিমানা আদায় করে মিটমাট হয়েছে। এই অন্যায় আর মেনে নেওয়া যাচ্ছিল না। তবে অরিজিৎবাবু যা করলেন এরপর এলাকার মাতব্বররা সালিশি করতে গিয়ে দু’বার ভাববেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy